স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিমূর্তরীতিতে ছবি আঁকেন চিত্রশিল্পী মাকসুদা ইকবাল নিপা। মূলত রঙের সঙ্গে কম্পোজিশনের মেলবন্ধনে এগিয়ে চলে এই শিল্পীর চিত্রপট। রঙের ওপর রং চাপিয়ে বর্ণের বৈভবময়তার মাধ্যমে ক্যানভাসে মেলে ধরেন বিষয়কে। তেমনই রংময় বেশকিছু চিত্রকর্ম নিয়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো নিপার চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। সেই সঙ্গে প্রকাশিত হলো শিল্পীর চিত্রকর্ম বিষয়ক বই ‘মাকসুদা ইকবাল নিপা : এপিসোড অব হার গেইজ’। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে কসমস বুকস থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আর দশ দিনব্যাপী প্রদর্শনীটি শুরু হয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে। যৌথভাবে প্রদর্শনী ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও গ্যালারি কসমস।
জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ফারুক সোবহান, ঢাকাস্থ দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত এ এইচ এন সেওং-দু, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জুলিয়া নিবালেত এবং চিত্রশিল্পী ও শিল্প-লেখক জাভেদ জলিল। অনুুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন মাকসুদা ইকবাল নিপা। স্বাগত বক্তব্য দেন গ্যালারি কসমসের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান। মোড়ক উন্মোচনের পর অনুষ্ঠানে বেহালায় যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন সং গো ইয়ুন এবং তার সঙ্গে ট্রাম্পেটে সুর ছড়ান দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত এ এইচ এন সেওং-দু।
নিজের চিত্রকর্মের বিমূর্ত আঙ্গিক প্রসঙ্গে মাকসুদা ইকবাল নিপা বলেন, প্রকৃত অর্থে কোন অবয়ব না এঁকে রঙের মাধ্যমে চিত্রপটে রহস্যময়তা বা এক ধরনের বিভ্রম সৃষ্টি করি। তবে ওই বিমূর্ততার মাঝে বর্ণের মাধ্যমে প্রকাশ আমার ভাবনার বিষয়কে। উজ্জ্বল রঙের বিন্যাসে ফুটিয়ে তুলি বিষয়কে। তাই শুরু থেকেই রিয়েলিস্টিক ছবি না এঁকে ধারাবাহিকভাবে হেঁটেছি বিমূর্ততার পথে। এখানে সবকিছু বুঝতে হবে এমন নয়, দর্শকের কাছে বিপুলা রঙের বিন্যাস ছড়িয়ে দেয় ভাললাগার বোধ। আর চিত্রকর্ম সৃজনে আমি ফর্ম ভাঙতে পছন্দ করি। এবারের প্রদর্শনীর ছবিগুলো এঁকেছি পশ্চিমা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের নির্যাস থেকে।
গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনের আলোচনায় বক্তারা বলেন, মাকসুদা ইকবাল নিপার চিত্রকর্মগুলো অবয়বহীন হলেও দারুণ আকর্ষণীয়। শিল্পীর নিজস্ব দেখা মেলে এসব চিত্রকর্মে। বিশাল ক্যানভাসে তাঁর কাজগুলো দেখার পর এক ধরনের আনন্দময় অনুভূতি সৃষ্টি হয় মনে। রঙের ব্যবহার ও বিন্যাসে স্বতন্ত্র আবেদন নিয়ে শিল্পানুরাগীর কাছে ধরা দেয় তাঁর চিত্রপট। এ কারণেই তাঁর ছবিগুলো হয়ে ওঠে ব্যতিক্রমী। গ্রন্থটি প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, নিপার শিল্প-জীবনের ধারাবাহিকতা উঠে এসেছে এই গ্রন্থে। সেই সঙ্গে শিল্প সৃজনে এদেশের নারী শিল্পীরা কতটা পারদর্শী, সে কথারও প্রমাণ মেলে বইটিতে। তেল রঙের আশ্রয়ে নিপার আঁকা কুড়িটি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। যাপিত জীবন ও নিসর্গের বৈচিত্র্যময়তাকে নিপা মেলে ধরেছেন ক্যানভাসে।
আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা এবং শুক্রবার বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
‘সুরমা নদীর গাংচিল’ প্রামাণ্যগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব
উপমহাদেশের প্রখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস। লোকসঙ্গীতকে কেন্দ্র করে গণসঙ্গীত সৃষ্টিতে রেখেছেন অনবদ্য অবদান। গানের মাধ্যমে স্বপ্ন দেখেছেন সমাজ পরিবর্তনের। এ কিংবদন্তি গণসঙ্গীতশিল্পীর জীবন ও সঙ্গীত সাধনা নিয়ে এবার প্রকাশিত হলো ‘সুরমা নদীর গাংচিল’ শীর্ষক গ্রন্থ। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জীবনীনির্ভর প্রামাণ্যগ্রন্থটির সম্পাদনা করেছেন বিশিষ্ট গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে অনন্যা প্রকাশনী। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মাসব্যাপী শ্রদ্ধাঞ্জলি ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক মাসব্যাপী শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মাসব্যাপী এ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। উদ্বোধনী পর্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান, মঞ্চসারথী আতাউর রহমান, কবি নির্মলেন্দু গুণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য নাসরিন আহমাদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে শিল্পকলা একাডেমি ও পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ‘আমাদের শিল্পযাত্রা’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত গ্রন্থাবলীর পাঠ ও পর্যালোচনা এবং শিল্প নির্মাণ কর্মসূচীরও সূচনা হয়।
সাংস্কৃতিক পর্বে ‘দুখিনী বাংলা, জননী বাংলা’ গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পকলা একাডেমি রেপার্টরি নৃত্যদল। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ এবং একক আবৃত্তি করেন ডালিয়া আহমেদ ও জয়ন্ত চট্টপাধ্যায়।
সব শেষে লিয়াকত আলী লাকীর গ্রন্থনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মভিত্তিক লোক নাট্যদলের নাট্যালেখ্য ‘মুজিব মানে মুক্তি’ মঞ্চস্থ হয়। নাটকটিতে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ধারাবাহিক ইতিহাসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর শৈশব, কৈশোর, যৌবন, মহান সংগ্রামী জীবন ও মহাপ্রয়াণ ক্রমান্বয়ে সন্নিবেশিত হয়েছে। পাক-হানাদারদের সহযোগী যুদ্ধাপরাধীদের হিংস্র চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে নাটকটিতে।