ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হচ্ছে দর্শনা

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২ আগস্ট ২০১৭

পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হচ্ছে দর্শনা

এস কে দাস, দামুড়হুদা ॥ রেলওয়ে ওয়াগনের পাশাপাশি সড়কপথে ট্রাকযোগে দর্শনা-গেঁদে সীমান্ত পথে পণ্য আমদানি-রফতানির মাধ্যমে স্থল শুল্ক স্টেশন দর্শনায় একটি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু হবে অচিরেই। গত ১২ জুলাই দর্শনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর বাস্তবায়নে যা করণীয়, দ্রুত করা হবে। এরপর থেকেই সবমহলে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এতে ভারতেরও প্রচ- আগ্রহ রয়েছে। দর্শনা পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান জানান, ইতোমধ্যে ভারত তাদের কাঁটাতারের বেড়ার বাইরের মাত্র ৮০০ মিটার অংশে রাস্তা, বন্দরের টোলঘর নির্মাণের জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আর বাংলাদেশের সাড়ে চার কিলো শামসুল ইসলাম স্থলবন্দর সড়ক প্রশস্তকরণে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত করেছে এলজিইডি। দ্রুত যার টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। মূলত এ কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার পরেই দর্শনা-গেঁদে সীমান্ত পথে ট্রাকযোগে পণ্য আমদানি-রফতানির কার্যক্রম শুরু হবে। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দর্শনা শুল্ক স্টেশন ৬০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬৯ কোটি ৪০ লাখ ১৫ হাজার ৩১৮ টাকা রাজস্ব আয় করেছে। এছাড়াও দেশের ঐতিহ্যবাহী চিনিকল দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারী কোষাগারে ৬২ কোটি টাকা রাজস্ব প্রদান করেছে। আর রেলওয়ে দর্শনা স্টেশন থেকে আয় করেছে ৪৩ কোটি টাকা। পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠায় অবকাঠামো সুবিধা : দর্শনা ১৯৯১ সালে পৌরসভায় উন্নীত হয়। এটি চুয়াডাঙ্গা জেলাধীন দামুড়হুদা উপজেলার অন্তর্গত একটি সীমান্ত শহর এখানে আছে একটি আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন, একটি অভ্যন্তরীণ রেলস্টেশন, একটি রেলওয়ে জংশন (বর্তমানে রেলওয়ে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে), একটি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, বিজিবির ছয়টি বিওপি ক্যাম্প সম্বলিত একটি কোম্পানি সদর ক্যাম্প, প্লান্ট কোয়ারেনটেইন অফিস, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের একটি করে শাখা আছে। ডিজিটাল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, বাংলাদেশের বৃহত্তম চিনি কল কেরু এ্যান্ড কোং বাংলাদেশ লিমিটেড, একটি ডিস্টিলারি কারখানা, একটি জৈব সার কারখানা, একটি স্থায়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এবং ওই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পাশেই অবস্থিত কাস্টমসের নিজস্ব ৪৪ বিঘা জায়গার ওপর একটি বিশাল কাস্টমস কমপ্লেক্স, যেখান থেকে স্থল শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এছাড়া কাস্টমস কমপ্লেক্সের পাশেই রয়েছে একটি ডাক বাংলো, একটি পৌর অডিটরিয়াম, বিটিসিএল অফিস, একটি সরকারী কলেজ ও একাধিক আধা-সরকারী/বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যোগাযোগ ব্যবস্থা : দর্শনা থেকে দৈনিক ৪০টি যাত্রীবাহী কোচ হাইওয়ে রোড দিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম যাতায়াত করে এবং রেলপথে ঢাকা, রাজশাহী, সৈয়দপুরে দৈনিক ১০টি ট্রেন যাতায়াত করে। জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট থেকে দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনের দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার। জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট থেকে ভারতের গেদে এলসি স্টেশনের দূরত্ব মাত্র ৫০০ মিটার। জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে দৈনিক গড়ে ৯০০-১০০০ যাত্রী ভারতে গমনাগমন করেন। যাহার পাশে বন্দরের প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। ভারতের সহিত সড়ক পথের সংযোজন হলে স্থল বন্দরের মালবাহী ট্রাক যাতায়াতের জন্য ঢাকা দর্শনা হাইওয়ে রোড থেকে জয়নগর চেকপোস্ট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার পাকা রাস্তা বিদ্যমান আছে। ভারতে বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা : ভারতীয় কাস্টমস প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে জানা গেছে বাংলাদেশী বিভিন্ন পণ্যের মূল্য সমজাতীয় ভারতীয পণ্য মূল্যের চাইতে অনেক কম হওয়ায় ওই সকল পণ্যের চাহিদা ভারতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সড়ক সংযোগ স্থাপিত হলে এ সকল পণ্য দ্রুত ভারতে রফতানি করতে সুবিধা হবে। তারা দৃষ্টান্ত হিসাবে বাংলাদেশী মজুমদার এ্যান্ড কোং-এর উৎপাদিত রাইস ব্র্যান্ড অয়েল, প্রাণ কোম্পানির খাদ্যসামগ্রী এবং আর এফ এল কোম্পানির পিভিসি পাইপ, প্লাস্টিকের তৈরি স্যানেটারি সামগ্রী এবং চেয়ারের মূল্য ভারতীয় সমজাতীয় পণ্য মূল্যের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় ভারতে বাংলাদেশী ওই পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবহন টার্মিনাল : স্থল পথে সংযোগের মাধ্যমে ট্রাকযোগে পণ্য আমদানি-রফতানি হলে পরিবহন টার্মিনাল এবং বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য জয়নগর চেকপোস্টের অদূরে বাংলাদেশ অংশে অধিগ্রহণ করার মতো পর্যাপ্ত জমি আছে। ইতিপূর্বে সরকারীভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দর্শনা জয়নগরে প্রস্তাবিত বন্দর টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন ছিল।
×