ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চিকুনগুনিয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফিজিওথেরাপি নয়

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ১ আগস্ট ২০১৭

চিকুনগুনিয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফিজিওথেরাপি নয়

বিডিনিউজ ॥ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের ব্যথা সারাতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফিজিওথেরাপি না নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গত শনিবার সরকারের রোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইইডিসিআরে বিশেষজ্ঞদের এক সভায় এই মত উঠে আসে। চিকুনগুনিয়া জ্বর কমার পর ব্যাথা কমাতে তিন মাস পর্যন্ত রোগীকে হালকা ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এরপরও ব্যথা না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফিজিওথেরাপি দেয়া যেতে পারে বলে তাদের মত। সভায় মেডিসিন, রিউম্যাটলজি, ফিজিক্যাল মেডিসিন, ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ এবং রোগতত্ত্ববিদরা অংশ নেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর জ্বর থাকা পর্যন্ত ব্যথা প্রশমনে ফিজিওথেরাপি দেয়া যাবে না। প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও বরফ বা অন্য কোনভাবে ঠা-া সেঁক দিয়ে ব্যথা কমাতে হবে। এ সময় ফিজিওথেরাপি প্রয়োগ চিকুনগুনিয়া রোগীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। জ্বর কমার পর তিন মাস পর্যন্ত ব্যথা প্রশমনের জন্য রোগী চিকিৎসকের পরামর্শে ঘরে বসেই হালকা নড়াচড়া করা বা হালকা ব্যায়াম করে উপকৃত হবেন। এ পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ফিজিওথেরাপি প্রয়োগের কোন প্রয়োজন নেই। যদি তিন মাস পরেও ব্যথা না কমে, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় ফিজিওথেরাপি দেয়া যেতে পারে। সরকারী হাসপাতালে ব্যথা কমানোর পরামর্শ প্রদানের জন্য স্থাপিত আর্র্থ্রালজিয়া ক্লিনিকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞগণ ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ফিজিওথেরাপিস্টগণের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে রোগীর অবস্থার ভিত্তিতে ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থাপত্র প্রদান করবেন। এ বিষয়ে যেকোন পরামর্শের জন্য চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইনে ও স্বাস্থ্য বাতায়নে (১৬২৬৩) রোগীরা যোগাযোগ করতে পারবেন। এডিস প্রজাতির এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস এলবোপিকটাস মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ ঘটে। ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসও এই মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং রোগের লক্ষণ প্রায় একই রকম। এ ধরনের মশা সাধারণত ভোরবেলা অথবা সন্ধ্যায় কামড়ায়। একটি পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে মশার মাধ্যমে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চিকুনগুনিয়া হলে শরীরের গিঁটে গিঁটে ব্যথার পাশাপাশি মাথা কিংবা মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি, চামড়ায় লালচে দানা, বমি বমি ভাব হতে পারে। চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে জ্বর হলে প্যারাসিটামল সেবন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের ব্যথা সারাতে প্রয়োজনে রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফিজিওথেরাপি দেয়ার কথা ভাবছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। দেশে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ কমে আসছে বলে দাবি করেছে চিকুনগুনিয়া জাতীয় পর্যবেক্ষণ কমিটি। রবিবার আইইডিসিআরের সম্মেলন কক্ষে কমিটির এক সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। সভায় জানানো হয়, চিকুগুনিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং নতুন রোগীর সংখ্যা কমলেও ডেঙ্গু পরিস্থিতির প্রতি সতর্ক নজর রাখতে হবে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক থাকলেও আগামী কয়েক মাস পর্যন্ত সতর্কতা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয় সভায়। কীটতাত্ত্বিক জরিপের প্রাথমিক ফল পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে সভায় বলা হয়, এডিস মশার প্রজনন কমলেও এখনও তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এজন্য সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের ব্যথা উপশমের জন্য সরকারী হাসপাতালে আর্থ্রালজিয়া ক্লিনিকে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া বেসরকারী চিকিৎসকরা যেন চিকুনগুনিয়া রোগীর তথ্যের প্রতিবেদন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত পাঠান তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয় ভায়।
×