ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র করা যাবে না- এটা ইউনেস্কো বলেনি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১ আগস্ট ২০১৭

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র করা যাবে না- এটা ইউনেস্কো বলেনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র করা যাবে না জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থার (ইউনেস্কো) প্রতিবেদনে এমন কথা উল্লেখ করা হয়নি। অন্য বড় প্রকল্পর বিষয়ে কৌশলগত পরিবেশগত সমীক্ষা (এসইএ) করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসইএ করার পর রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব মোকাবেলায় কোন সুপারিশ এলে সরকার তা প্রতিপালন করবে। সোমবার বিকেলে বিদ্যুত বিভাগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে জানান, এর আগে আমরা পোল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র বিষয়ে যে কথা বলছিলাম আজকের কয়েকটি সংবাদপত্র পড়ে মনে হচ্ছে আমরা সঠিক বলিনি। বিষয়টি কিছুই না; একটু বুঝেশুনে প্রতিবেদনটি পড়লে আর কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম এবং সরকারের প্রতিনিধিদের বক্তব্য ভিন্নতায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, কোন ভুল বোঝাবুুঝি যেন না হয় সেজন্যই এই সংবাদ সম্মেলন। তিনি বলেন, আমরাও সুন্দরবনকে হুমকির মধ্যে ফেলতে চাই না। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি এসইএ করার আগে সুন্দরবন এলাকাতে কোন বড় শিল্প স্থাপন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম শুধু রামপালই নয় এখানে অন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে ইউনেস্কোর নিষেধাজ্ঞা হিসেবে বিষয়টিকে উপস্থাপন করেছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা হেরিটেজ কমিটির সদস্য নই। আমাদের প্রতিনিধি দল রামপালের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় গৃহীত বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত কমিটির অন্য সদস্যদের কাছে উপস্থাপন করেছে। এদের মধ্যে হেরিটেজ কমিটিতে বাংলাদেশের পক্ষে বিষয়টি উত্থাপন করেছে তুরস্ক। এর ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, এসইএ করার আগে কোন ধরনের বড় স্থাপনা করা যাবে না। সেখানে ইনক্লুডিং রামপাল, অর্থাৎ রামপালের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু হেরিটেজ কমিটি বৈঠকে ইনক্লুডিং রামপাল অংশটি তুলে দিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে রামপাল চলার ক্ষেত্রে আর কোন বাধা রইল না। আমরা তখন তাদের বলেছিলাম: এতে পরে কোন ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হবে কিনা বা তোমরা বলবে কিনা রামপালের বিষয়ে তোমাদের আপত্তি রয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছে, না, এতে কোন সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, আগের রিপোর্টে রামপাল প্রকল্প বন্ধ করা অথবা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছিল; রবিবার রাতে প্রকাশিত রিপোর্টে এই বিষয়টিও নেই। এখানে রামপাল সরিয়ে নেয়া বা বন্ধ করার প্রসঙ্গটিও তুলে ধরা হয়নি। এছাড়া সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আগের রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছিল এবার সেটি একেবারে বাদ দেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এসইএ করার আগে আমরাও সেখানে নতুন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে চাই না। সেখানে ওরিয়ন এবং রামপাল দ্বিতীয় ইউনিটসহ একটি বিদ্যুত হাব নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু সরকার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে। তিনি বলেন আমাদের আইনে এসইএ করার বিষয়টি নেই। তারপরও আমরা এসইএ করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে দুই বছরের আগে এটি শেষ হবে না। সেক্ষেত্রে আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়া হবে। বিদ্যুত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমাদের চেহারা দেখে তো রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়নি। কোন্ পন্থায় রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা করা যায় সে সম্পর্কে হেরিটেজ কমিটির কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পেরেছি বলে দাবি করেন তিনি। সচিব বলেণ্ড আমরাও চাই না কোনভাবে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হোক। এজন্য মনিটরিং করা হবে বলে জানান তিনি। এর আগে ইউনেস্কোর মনিটরিং কমিটির প্রতিবেদন প্রতিপালনের শর্ত দিয়েছে হেরিটেজ কমিটি। ওই প্রতিবেদনে রামপাল বন্ধ করা বা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। তাদের শর্ত মানলে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব কিনা জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ফাইনাল রিপোর্টে শুধু পরিবেশগত ক্ষতি মোকাবেলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্প বন্ধ বা সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। সরকারও পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি মোকাবেলা করে প্রকল্পটি নির্মাণ করতে চায়।
×