ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডাঃ গোবিন্দ চন্দ্র দাস

কিভাবে বুঝবেন আপনার সন্তানের এ্যাজমা হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১ আগস্ট ২০১৭

কিভাবে বুঝবেন আপনার সন্তানের এ্যাজমা হয়েছে

আপনার শিশু শ্বাস ফেলার সময় হুইসেলের মতো শব্দ হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন। এটাও খেয়াল করুন, খেলাধুলার সময় খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ছে কিনা। কিংবা তার হয়ত রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী কাশি। আপনি অবাক হতে পারেন এটা কি এ্যাজমার পূর্ব লক্ষণ? এ্যাজমা শব্দটি যেমন বহুল পরিচিত, তেমনই এই রোগ চিহ্নিত করতে বহুক্ষেত্রেই ভুল হয়ে থাকে। সত্যি বলতে কি শিশু কিশোরদের মধ্যে এ্যাজমার প্রকোপ অন্য যে কোন রোগের চাইতে বেশি। আমেরিকাতে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ মিলিয়ন শিশু কিশোর এ্যাজমাতে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে ৫ বছরের নিচের শিশুর সংখ্যা ১.৩ বিলিয়ন। ৫ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগে প্রায় অর্ধেক শিশুর মধ্যেই এ্যাজমার লক্ষণ দেখা যায়। এ্যাজমা শ্বাস-প্রশ্বাসকে দুর্বল করে দেয়। ফলে রক্তে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। অর্থাৎ এ্যাজমা একটি মারাত্মক অসুখ। আবার একইসঙ্গে এ্যাজমা এমন একটি অসুখ যা খুব ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক রোগ নির্ণয়, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, অভিভাবকদের পরিচর্যা ইত্যাদির সমাবেশ ঘটলে এ্যাজমা আক্রান্ত শিশু অন্য শিশুদের মতোই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। দরকার স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি। কিভাবে বুঝবেন আপনার সন্তানের এ্যাজমা হয়েছে? এ্যাজমা চিহ্নিত করতে অনেক সময়ই ভুল হতে পারে। ভুলের কারণ একাধিক। যেমনÑ শ্বাসতন্ত্রের আরও বেশকিছু অসুখের উপসর্গগুলো এ্যাজমার সঙ্গে মিলে যায়। আবার অনেক শিশু কিছুদিন অসুখে ভোগার পরে মধ্যবর্তী কিছুদিন সময় সুস্থ থাকে ফলে তার কোন রোগ নেই বলে মনে হয়। শিশুর এলার্জিক এ্যাজমা আছে কথাটির অর্থ হচ্ছেÑ এলার্জনের সংস্পর্শে এলে তার এ্যাজমার উপসর্গগুলো বেড়ে যায়। এই শিশুরা ধুলোর জীবাণু, ছত্রাক, প্রাণীর লোম, আরশোলা প্রভৃতির সংস্পর্শে এলে তাদর এ্যাজমা আরও বেড়ে যায়। বেশি বেশি শ্লেষ্মা উৎপন্ন হয় এবং বায়ুনালীর চারপাশের মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে চেপে বসে নিচের উপসর্গগুলো আছে কিনা লক্ষ্য করুন। যদি থাকে তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে- * কাশিÑ এটা হতে পারে একনাগাড়ে কিংবা বিরতি দিয়ে তবে মনে রাখবেন যে প্রতিদিন এই উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে। * আপনার সন্তানের শ্বাস ফেলার সময় শনশন শব্দ বা হুইসেলের মতো শব্দ হচ্ছে কিনা। * বুক চেপে ধরার অনুভূতি। এছাড়া আরও কিছু উপসর্গ থাকতে পারে যেমন- * ক্লান্তি আপনার সন্তান খেলাধুলা ছেড়ে দিতে পারে। খিটখিটে মেজাজি হয়ে ওঠে। বলতে পারে তার বুকের মধ্যে ‘কেমন যেন’ করছে। * দুগ্ধপোষ্য শিশুদের নিপল চুষতে গিয়ে শ্বাস রোধ হয়, ফলে তারা নিপল চোষে না। * একটু বড় ছেলেমেয়েরা খেলা ছেড়ে দেয়। কাদের এ্যাজমা হওয়ার আশঙ্কা বেশি? যদিও প্রত্যক্ষ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি তবু সমীক্ষায় দেখা গেছে, এ্যাজমা আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে রোগের পূর্বে নিচের উপসর্গগুলো দেখা যায়Ñ * ভাইরাসজনিত সংক্রমণ হলে শ্বাস-প্রশ্বাসে শনশন শব্দ শোনা যায়। * এলার্জি থাকলে। এ্যাজমা ও এলার্জির মধ্যে খুব গভীর সম্পর্ক। * পরিবারে যদি এ্যাজমা ও এলার্জির পূর্ব ইতিহাস থাকে। * শিশু যদি তামাকের ধোঁয়া ও এলার্জনের সংস্পর্শে আসে। দু’জন এ্যাজমার রোগী কখনই হুবহু একই উপসর্গ নিয়ে আসে না। এ্যাজমা খুবই ব্যক্তিকেন্দ্রিক রোগ। কাজেই আপনার শিশুর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। শিশুদের ক্ষেত্রে ৮০% এর বেশি এ্যাজমাই এলার্জিজনিত, তাই এলার্জি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ তিনিই এলার্জি টেস্ট করে বলে দিতে পারবেন শিশুর এলার্জির কারণ কি। এলার্জি শনাক্ত করা গেলেই তখন এলার্জিজনিত রোগের সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি অর্থাৎ এলার্জেন পরিহার, এলার্জির জন্য ওষুধ ও এলার্জি ভ্যাকসিন চিকিৎসা অনুসরণ করলেই আপনার সন্তান এলার্জিজনিত এ্যাজমা থেকে মুক্তি পাবে। দি এলার্জি এ্যান্ড এ্যাজমা সেন্টার ৫৭/১৫ পান্থপথ, ঢাকা
×