ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ দিদারুল আহসান

বর্ষায় দাউদের সংক্রমণ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১ আগস্ট ২০১৭

বর্ষায় দাউদের সংক্রমণ

গরমকালে যে কটি চর্মরোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তার মধ্যে ঘামাচির পরই ছত্রাকজনিত চর্মরোগ অন্যতম। গরমকালে এই রোগটি বেশি হয়, তার কারণ গরমকালে বেশি ঘাম হয় এবং শরীর ভেজা থাকে। ঘামে এবং ভেজা শরীরই হলো ছত্রাক জন্মানোর উর্বর ক্ষেত্র। তবে যাঁরা এয়ারকুলার ব্যবহার করেন তাঁদের ঘাম হয় না। ফলে এ রোগটিও তাদের ক্ষেত্রে কম হতে দেখা যায়। যাঁরা মোটা এবং স্বাস্থ্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ততটা সচেতন নয়, তাদেরই এই রোগটি বেশি হতে দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশ লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে আক্রমণের হার শীতপ্রধান দেশের চেয়ে বেশি। ধারণা করা যায় আমাদের দেশে অন্তত ৭০-৮০ হাজার রোক প্রতিবছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। রোগের ক্ষেত্রে একটি হতাশার দিকও আছে, এ রোগটির চিকিৎসা দেয়া হলে খুব সহজেই ভাল হয়ে যায়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই পুনরায় দেখা দেয়, আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটু ভাল হওয়া মাত্রই রোগী ওষুধটি বন্ধ করে দেন। আবার যাঁরা ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করেন, তাঁরাও কিন্তু ঠিকমতো ব্যবহারজনিত কাপড়- চোপড় পরিষ্কার করেন না ফলে খুব সহজেই ব্যবহারজনিত কাপড়- চোপড় থেকে পুনরায় ছত্রাক দেহে প্রবেশ করে এবং সে কারণেই এ রোগটি কিছুদিনের মধ্যে আবার দেখা দিয়ে থাকে। ছত্রাকজনিত যে সমস্ত চর্মরোগ আমাদের দেশে দেখা যায়, সেগুলোকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন : (১) দাউদ, (২) ছুলি ও (৩) ক্যানডিডিয়াসিস। এই তিন ধরনের ছাত্রাক প্রজাতির সকলেই মূলত ত্বকের বাইরে অংশকে আক্রমণ করে এবং সেই আক্রমণ স্যাতস্যাতে, নোংরা, ঘর্মাক্ত দেহে সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়। দাউদ : দাউদ দেহের যে কোন স্থানে দেখা দিতে পারে। যে স্থানে দেখা দেয় সেই স্থানটিতে গোলাকার চাকার মতো দাগ দেখা যায়। যার মধ্যখানের চামড়া প্রায় স্বাভাবিক আকারে দেখতে হলেও গোল দাগের পরিধিতে ছোট ছোট গোটা দেখা যায় এবং দাগের পরিধিতে উঁচু বর্ডার লাইন আকারে থাকে এবং চুলকালে সেখান থেকে কষ ঝরতে থাকে। শরীরের যে কোন স্থানে এর আক্রমণ ঘটতে পারে। তবে দেখা গেছে সাধারণত তলপেট, পেট, কোমর, পাছা, পিঠ, মাথা, কুচকি ইত্যাদি স্থানে বেশি আক্রান্ত হয়। আক্রমণের স্থান লক্ষ্য করে একে স্থানভিত্তিক বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন : মাথায় যখন উবৎসধঃড়ঢ়যুঃব জাতীয় ছত্রাকের আক্রমণ হয়, তখন তাকে বলা হয় ঞওঘঈঅ ঈঅচওঞওঊঝ ঠিক তেমনিভাবে যদি দাড়িতে হয়, তখন বলা হয় ঞরহবধ ইধৎনধব, আবর যদি পায়ে হয় তখন বলা হয় ঞরহবধ চবফরং,যদি কুচকিতে হয় তখন তাকে বলা হয় ঞরহবধ ঈৎঁৎরং, হাতে হলে বলা হয় ঞরহবধ গধহঁং, নখে হলে তখন তাকে বলা ঞরহরধ ঁহযঁড়ঁস, শরীরের অংশ বিশেষ আক্রান্ত হলে বলা হয় ঞরহবধ ঈড়ৎঢ়ড়ৎরং. রোগ নির্ণয় : আক্রান্ত স্থানে চামড়া একটু ঘষে তুলে নিয়ে একটি গ্লাস সøাইডের ওপরে রাখতে হবে। তার সঙ্গে পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড (১০-৩০ পারসেন্ট পর্যন্ত) মিলিয়ে একটি কভার সিøপ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তারপর একটু হাল্কা গরম করে নিতে হবে। তারপর মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখলে হাইফি দেখা যাবে। যা দেখে এটা যে ফাংগাস বা ছত্রাক, তা খুব সহজেই নিরূপণ করা সম্ভব। টিনিয়া ভারছিকলার বা ছুলি এটিও একটি ছত্রাকজনিত রোগ। ছত্রাকের যে জীবাণু দিয়ে এটা হয়, তার নাম গধষধংধুরধ ঋঁৎভঁৎ, গরমকালে এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়, শীতকালে আবার এমনিতেই যেন মিলিয়ে যায়। আবার গরম এলে গায়ের চামড়া ঘাড়ে ভিজে থাকে। তখনই আবার দেখা দেয়। হাল্কা বাদামি, সাদা গোলাকৃতি দাগ দেখা যায়। বুকে, গলার দু’পাশে ঘাড়ের পিছনে, পিঠে, বগলের নিচে, এমনকি সারা শরীরে হতে পারে। এতে ত্বক দেখতে সাদা হয়। তাই অনেকেই আবার একে শ্বেতী ভাবতেও শুরু করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শ্বেতীর সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। ক্যানডিডিয়াসিস : এটাও একটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। যে ছত্রাক জাতীয় জীবাণু দিয়ে এ রোগটি হয়, তার নাম ক্যানডিডা এলবিক্যানস। যাদের শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন শিশু বৃদ্ধ কিম্বা রোগাক্রান্ত, ডায়াবেটিস আক্রান্ত, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেছেন কিংবা যাদের ত্বকের ভাজ পানিতে অথবা ঘামে সব সময় ভেজা থাকে তাদেরই এই রোগটি বেশি হয় যারা সব সময় পানি নড়াচড়া করেন, তাদের আঙ্গুলের ফাঁকে, হাতের ভাঁজে, শিশুদের জিহ্ব মহিলাদের যোনীপথে এবং গর্ভবতী মহিলারা এতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এতে ত্বকের আক্রান্ত স্থান একটু লালচে ধরনের দেখা যায় এবং সঙ্গে প্রচ- চুলকানি থাকে। চিকিৎসা : চিকিৎসা নির্ভর করে আক্রমণের স্থান ও আক্রমণের তীব্রতার ওপর। ক্যানডিডিয়াসিসের ক্ষেত্রে কেটোকোনাজল ও ফ্লুকোনাজল ব্যবহারে ভাল ফল পাওয়া যায়। ছুলির ক্ষেত্রে একই ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। তবে দাউদের ক্ষেত্রে গ্রাইসিমিওফুলভিনসহ উপরে উল্লেখিত দু‘টি ওষুধের যে কোনটি ব্যবহার করলেই ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। লেখক : চর্ম এলার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ
×