ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতির অভিযোগ

রফতানি কন্টেনার না নিয়েই বন্দর ছাড়ছে জাহাজ

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১ আগস্ট ২০১৭

রফতানি কন্টেনার না নিয়েই বন্দর ছাড়ছে জাহাজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রফতানি কন্টেনার না নিয়েই জাহাজ বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মোঃ সিদ্দীকুর রহমান। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা, যা ইতিহাসে কখনই ঘটেনি। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বিদেশী ক্রেতারাও সময়মতো পোশাক পাবেন না। আর এর মাসুল দিতে হবে রফতানিকারকদের। অন্যদিকে আমদানি করা কাঁচামাল পেতে বিলম্ব হওয়ায় আমাদের উৎপাদনে যেতেও দেরি হচ্ছে। ফলে ক্রেতারা ভারত, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া ও মিয়ানমারের মতো দেশে তাদের অর্ডার সরিয়ে নিতে পারেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। সোমবার বিজিএমইএর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এমন দাবি করেন। চট্টগ্রাম বন্দরে পোশাক শিল্পের আমদানি করা মালামাল খালাস ও রফতানি পণ্য জাহাজীকরণে জটিলতা এবং পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের সমস্যা ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, নানা রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমরা যখন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তখন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘার মতো আমাদের সামনে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর সংকট। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে এত কঠিন সংকটে এ শিল্প আগে আর পড়েনি। তিনি বলেন, পোশাক তৈরির উপকরণ বোঝাই জাহাজকে পণ্য খালাসের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পণ্য খালাস করতে না পারায় কন্টেনার ভাড়া বাবদ বন্দর ও জাহাজ কোম্পানিকে অতিরিক্ত জরিমানা প্রদান করা লাগছে। সময়মতো রফতানিপণ্য আমরা পাঠাতে পারছি না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে আর্থিক মাসুল দিয়ে উড়োজাহাজেও পণ্য রফতানি করছি। টানা আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে বন্দরে জাহাজজট চলমান থাকার পরিস্থিতির সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে জাহাজীকরণ জটিলতা। রফতানি কন্টেনার না নিয়েই জাহাজের বন্দর ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা, যা ইতিহাসে কখনই ঘটেনি। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বিদেশী ক্রেতারাও সময়মতো পোশাক পাবেন না। আর এর মাসুল দিতে হবে আমাদের, রফতানিকারকদের। ক্রেতারা ভারত, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া ও মিয়ানমারের মতো দেশে তাদের অর্ডার সরিয়ে নিতে পারেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন সিদ্দীকুর রহমান। তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজজট কমানোর লক্ষ্যে গিয়ারসেল ভেসেল আসা নিরুৎসাহিত করেছে। নাইট নেভিগেশন চালু করেছে। শিফটিং করে সর্বক্ষণিক হ্যান্ডালিং কার্যক্রম চালু রাখাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তারপরও পণ্য খালাস সংকটের সমাধান হয়নি। যেসব জাহাজে ১৫০ থেকে ২০০ এলসিএল কন্টেনার বেশি থাকে, তা আনস্টাফিং করে খালাস দিতে এখনও ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এর মধ্যে ভেসেল বার্থিংয়ে সাত-আটদিন এবং পণ্য খালাসে আট-দশদিন বিলম্ব হচ্ছে। আমদানি করা কাঁচামাল পেতে বিলম্ব হওয়ায় আমাদের উৎপাদনে যেতেও দেরি হচ্ছে। অথচ বাজার ধরে রাখতে হলে ক্রেতাদের কাছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেভাবেই হোক পণ্য পাঠাতে হয়। তিনি আরও বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের জাহাজজট কমানোর নামে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে নির্ধারিত জাহাজে রফতানিপণ্য তুলে দেয়া নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ দ্বিমুখী চাপে শিল্প আজ পিষ্ট হতে চলেছে। এতদিন রফতানি পণ্য জাহাজীকরণে বিশেষ ছাড় দেয়া হতো। বিশেষ করে বন্দরে আসার পর কোন কন্টেনার জাহাজে তোলা হয়নি- এমন ঘটনা ঘটেনি। এখন এটিও ঘটছে। তাই আমাদের দাবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ সময়মতো রফতানিকারকদের হাতে কাঁচামাল তুলে দিক, বন্দরে রফতানি কন্টেনার রাখার জায়গা তৈরি করুক। তারপর নিয়মনীতি কঠিন করলে আমাদের আপত্তি থাকবে না। চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্টের স্বল্পতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কি-গ্যান্ট্রি ক্রেন যেখানে প্রয়োজন ২৬টি সেখানে আছে মাত্র চারটি, এর মধ্যে দুটি বর্তমানে বিকল। একইভাবে ৫২টি রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেনের স্থলে আছে ২৩টি, ৩৯টি এম্পটি হ্যান্ডলারের স্থলে আছে ১৯টি, ১৩০টি ট্রাক্টর ট্রেইলরের স্থলে আছে ৪৩টি। আর কন্টেনার ওঠা-নামানোর জন্য যেখানে ২৯৯টি যন্ত্রপাতি প্রয়োজন সেখানে আছে ৮৭টি এবং কার্গো হ্যান্ডলিং’র জন্য যন্ত্রপাতি প্রয়োজন ৮৯৫টি কিন্তু আছে মাত্র ২৮৫টি। সরকারী আমলাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকারী কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন হচ্ছে না। এ খাতের উন্নয়ন না হওয়ায় রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই অযোগ্য আমলাদের তাদের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, অবকাঠামো ঠিক না থাকলে আমরা ব্যবসা করব কিভাবে? আমাদের কাজ ব্যবসা করা। কিন্তু সরকারের তো সকল বিভাগের জন্য লোকবল রয়েছে। তাদের দায়িত্ব তো তাদের পালন করতে হবে। বন্দরের সমস্যা সমাধানের জন্য বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সাতটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো- সিসিটি বার্থে বিকল দুটি গ্যান্ট্রি ক্রেন দ্রুত মেরামত করে পূর্বের অপারেশন কার্যক্রম শুরু করা, কন্টেনার হ্যান্ডালিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট জরুরী ভিত্তিতে সরকারীভাবে ক্রয়ের ব্যবস্থা করা অথবা বেসরকারী খাতে থেকে ভাড়া নিয়ে বর্তমান সংকট মোকাবেলা করা, কন্টেনার ইয়ার্ড সম্প্রসারণে জরুরী ভিত্তিতে ২৬ একর পশ্চাৎ সুবিধাদিসহ পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু করা, পোশাক শিল্পের কাঁচামালবাহী এফসিএল কন্টেনারগুলো শুল্কায়নসহ একই কর্মদিবসে ডেলিভারির ব্যবস্থা করা, এলসিএল কন্টেনারের ক্ষেত্রে বেশি ড্রাফটের জাহাজ থেকে কিছু কন্টেনার ডিসচার্জপূর্বক ওই জাহাজকে কার্গো বার্থে বার্থিং করা, কন্টেনারবাহী জাহাজগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্থিংয়ের সুযোগ দেয়া, বন্দরস্থ জেটিতে আরও অধিক সংখ্যক এলসিএল শেড নির্মাণ করা এবং পোশাক শিল্পের এলসিএল পণ্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আনস্টাফিং করে ডেলিভারির ব্যবস্থা করা।
×