ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইলিশ শুন্য বরিশালের মোকাম

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ৩১ জুলাই ২০১৭

ইলিশ শুন্য বরিশালের মোকাম

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ইলিশের বৃহৎ পাইকারী মৎস্য বাজার হিসেবে পরিচিত নগরীর পোর্ট রোড মোকামে বিগত বছরগুলোর তুলনায় সিঁকিভাগ ইলিশও মিলছেনা। গত বছর পোর্ট রোডের মোকামের আড়তগুলোতে দিনশেষে দুই হাজার মণ ইলিশ বেঁচা-কেনা হলেও চলতি বছর ভরা ইলিশ মৌসুমে গত এক সপ্তাহ যাবত ইলিশ মিলছে গড়ে এক শ’ মণ করে। বরিশাল মৎস্য আড়তদার সমিতির প্রচার সম্পাদক ইলিশ ব্যবসায়ী ইয়ার উদ্দিন সিকদার জানান, তার আড়তে গত বছর এ সময়ে প্রতিদিন দুইশ’ মণ করে ইলিশ বিক্রি হতো। কিন্তু চলতি মৌসুমে ২০ কেজির উপরে ইলিশ পাওয়া যায়নি। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তারা আশা করেছিলেন ইলিশ মিলবে কিন্তু নদী থেকে জেলেরা শুন্য ট্রলারে ফিরছেন। অপর আড়ত মেসার্স মাহিমা এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার বশির আহম্মেদ জানান, তাদের আড়তে একশ’ থেকে দেড়শ’ মণেরস্থলে ইলিশ মিলছে মাত্র দুই মণ। এতে করে আড়তের ৩০ জন শ্রমিক বেকার জীবন-যাপন করছেন। তিনি আরও জানান, ইলিশ শুন্য মোকামে দুই সহস্রাধিক শ্রমিক বর্তমানে বেকার জীবন-যাপন করছেন। আড়তে মাছ না থাকায় ওইসব শ্রমিকদের কোনো কাজ নেই, বেতনও নেই। ভরা মৌসুমে এখানকার নদীগুলোতে ইলিশ না মেলায় অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে জেলেদের। দাদনদারদের দেনাতো দূরের কথা জেলেদের ট্রলার খরচও উঠছেনা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে জেলেদের ট্রলার-জাল বিক্রি করে অন্য পেশায় ফিরে যেতে হবে বলেও জানিয়েছেন অসংখ্য জেলেরা। জেলে সোবাহান সিকদার জানান, বছরের বেশিরভাগ সময়ই তাদের বেকার কাটাতে হলেও অপেক্ষায় থাকেন ইলিশ মৌসুমের দিকে। এ মৌসুমে তারা আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়েছেন। কিন্তু নদীতে মাছ না মেলায় দাদন পরিশোধ নিয়ে তারা এখন দিশেহারা হয়ে পরেছেন। ভরা মৌসুমে ইলিশের সংকট নিয়ে লোকসান ও আর দাদনের চিন্তার ছাপ জেলের মুখে। মেঘনা, তেঁতুলিয়া, মাসকাটাসহ জেলেপাড়াগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাদন পরিশোধতো দূরের কথা জেলে পরিবারের জীবন-জীবিকা কাটানোই এখন মুশকিল হয়ে পরেছে। দাদনদার ইউসুফ মাঝি জানান, দাদন নিয়ে জেলেরা নদীতে নেমে শুন্য ট্রলারে তীরে ফিরে ফের দাদন চাচ্ছে। গত এক মাস যাবত এ অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি এ বছর ৮০ জন জেলেকে দাদন দিয়েছেন প্রায় আট লাখ টাকা। এসব টাকা জেলেরা ট্রলার মেরামত, জাল কেনাসহ শুকনো মৌসুমে খরচ করেছে। বর্তমানে নদীতে মাছ না মেলায় ভরা ইলিশ মৌসুমেও জেলেরা এখন দাদন চাচ্ছেন। মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি মৌসুমে এ সময় মোকামে শ্রমিকরা মাছ আনা-নেয়ায় ব্যস্ত সময় পার করতো। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম। মাছের দেখা মিলছেনা। সোমবার নগরীর আড়তগুলো এক কেজি থেকে দেড় কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ৯০ হাজার টাকা, এক কেজি সাইজের ইলিশ প্রতিমণ ৫৪ হাজার টাকা, এলসি ৬ শ’ থেকে ৯৫০ গ্রাম প্রতি মণ ৩৮ হাজার টাকা ও ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি মণ ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। বরিশাল মৎস্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল জানান, মৎস্য কর্মকর্তাদের একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে চালু হওয়া বছরের ২২দিন ডিমওয়ালা মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করার পর থেকে নদীতে মাছ কমে গেছে। ওই সময় জেলেরা ইলিশ না ধরায় ইলিশ চলে যাচ্ছে সাগরে। সাগর থেকে ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, বর্তমানে সাগরে কিছু ইলিশ ধরা পরছে যা বরিশালের বাজারে না এসে সরাসরি চলে যাচ্ছে রাজধানীতে। তিনি বলেন, ভারত কিংবা মিয়ানমার বড় ইলিশ আহরণ করে। তারা বড় ইলিশ ধরার জাল ছাড়া অন্য কোনো জাল সাগরে ফেলেনা। তাই তাদের বাজারগুলোতে বড় সাইজের ইলিশ দেখা যায়। কিন্তু বরিশালের নদীর জেলেরা ছোট জাল দিয়ে ছোট সাইজের ইলিশ আহরণ করে। বরিশালের নদীগুলোতে চলতি মৌসুমে ইলিশ মিলবে বলেও তিনি আশাবাদী।
×