ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কুয়ালালামপুর বিমানবন্দওে বৈধদের হয়রানি না করার অনুরোধ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৩১ জুলাই ২০১৭

কুয়ালালামপুর বিমানবন্দওে বৈধদের হয়রানি না করার  অনুরোধ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা থাকার পরেও কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশীদের হয়রানি না করার জন্য মালয়েশিয়াকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। প্রয়োজনে ভিসা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় আরও কঠোর হওয়ার জন্য মালয়েশিয়াকে পরামর্শও দেয়া হয়েছে। ভিসা থাকার পরেও ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশীদের হয়রানির বিষয়ে ঢাকার মালয়েশিয়া হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। এছাড়া কুয়ালালামপুর বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকেও মালয়েশিয়া সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। মালয়েশিয়ায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশীরা সম্প্রতি ব্যাপকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা থাকার পরেও অনেককে ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে আটক করা হচ্ছে। এ নিয়ে রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বিষয়টি মালয়েশিয়া সরকারের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। ঢাকায় মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ইদহাম জুহরি মোহামেদ ইউনুসকে গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়াকে জানানো হয়েছে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে সম্প্রতি বাংলাদেশী যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে। বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা থাকার পরেও বাংলাদেশীদের সেদেশে প্রবেশ করতে না দেয়া ও নানারকম হয়রানিমূলক আচরণ করার বিষয়টি মালয়েশিয়াকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার বিষয়ে মালয়েশিয়াকে আরও কঠোর হতে পারে। তবে ভিসা প্রদানের পর বিমানবন্দরে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়াটা দুঃখজনক। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোন বাংলাদেশী যাত্রীকে বিমানবন্দরে হয়রানি না করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় মালয়েশিয়ার ট্যুরিস্ট ভিসা অনেকটাই সহজ। কেননা দেশটির ট্যুরিস্ট ভিসা নেয়ার ক্ষেত্রে ভিসা প্রার্থীকে সরাসরি কোন ধরনের ইন্টারভিউয়ের মুখোমুখি হতে হয় না। শুধুমাত্র কাগজপত্র দেখেই ট্যুরিস্ট ভিসা দিয়ে থাকে ঢাকার মালয়েশিয়ার হাইকমিশন। সে কারণে বেশ কিছু দালাল ও প্রতারক চক্র এই সুযোগে মালয়েশিয়ার ট্যুরিস্ট ভিসায় সেদেশে লোক পাঠিয়ে থাকে। আর এ কারণে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে সত্যিকার বাংলাদেশী ট্যুরিস্টদেরও হয়রানির শিকার হতে হয়। তবে ট্যুরিস্ট ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে আরও ভালভাবে যাচাই-বাছাই করার জন্য মালয়েশিয়াকে অনুরোধ করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে শত শত যাত্রী যাওয়া আসা করেন। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার সমৃদ্ধ পর্যটন ও সেখানে বেড়াতে তুলনামূলকভাবে খরচ কম হওয়ার কারণে গত কয়েক বছর ধরেই দেশটিতে বাংলাদেশী পর্যটক বেড়েছে। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াগামী বিভিন্ন বেসরকারী এয়ারলাইন্সের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশী যাত্রীদের ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেখানের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক কোন জবাব দিতে না পারলে যাত্রীদের ফিরিয়ে দেয়া হতো। বিশেষ করে দালাল চক্রের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে যারা মালয়েশিয়ায় থেকে যেতে আগ্রহী তারা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন না। তাদের মালয়েশিয়া বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিয়ে থাকে। তবে এখন যেভাবে বিভিন্ন যাত্রীকে বিমানবন্দরের ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রেখে নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে, সেটা কখনই করা হতো না। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা কোন যাত্রীকে সন্দেহ করলে তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিতেন। তবে এখন সেটা না করে বিভিন্নজনকে ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রেখে হয়রানি করা হচ্ছে। এদিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকেও বাংলাদেশী যাত্রীদের হয়রানির বিষয়ে তৎপরতা শুরু করা হয়েছে। সেখানে দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ আশ্বাসও দিয়েছে বাংলাদেশী যাত্রীরা যেন হয়রানির শিকার না হোন, তারা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
×