ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তামাক পণ্যের ওপর শুল্ক কমাতে কোন চাপ নেই ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩১ জুলাই ২০১৭

তামাক পণ্যের ওপর শুল্ক কমাতে কোন চাপ নেই ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় রেখে ভবিষ্যতে দেশে বিড়ি শিল্প না রাখার পলিসি গ্রহণ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি আরও জানান, তামাকপণ্যের শুল্ক কমাতে রাজনৈতিক কোন চাপ নেই। রবিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সিগারেট কোম্পানির মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। বৈঠকে সিগারেট উৎপাদনকারী ১৩টি কারখানার মালিক ও এমডিরা অংশ নেন। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান, অর্থসচিব হেদায়েতুল্লাহ মামুন প্রমুখ। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মোট সিগারেটের চাহিদার ৮০ শতাংশ কমদামী। এসব কমদামী বিড়ি ও সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ। তাই এসব বিড়ি ও সিগারেট কিভাবে কমানো যায় সে পলিসি করা হচ্ছে। প্রয়োজনে পলিসি পরিবর্তন করা হবে। তবে পলিসি পরিবর্তন করলে রাজস্ব আদায়ে সমস্যা হবে কিনা-জানতে চাইলে মুহিত বলেন, এতে রাজস্ব আদায়ে কোন হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা নেই। চাহিদা কমলে রাজস্ব কিছুটা কমতে পারে। ভাল খবর হচ্ছেÑ বিড়ি সিগারেটের দাম কমানোর বিষয়ে এমপিদের পক্ষ থেকে কোন রাজনৈতিক চাপ নেই। তুলনামূলকভাবে চলতি বছর এ সংক্রান্ত চাপ কম এসেছে। তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি আজও বলছি, এদেশে বিড়ি থাকবে না। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তর পুনর্বিন্যাস করার কথা বলেছেন। সেটার বিষয়ে কী করেছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কারখানা মালিকরা তাদের প্রস্তাব দিয়েছেন। এখন আমরা নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নেব কোনটা কী করব। তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিসহ দেশের তামাক কোম্পানিগুলো বৈঠকে তাদের মতামত জানিয়েছে। এই বৈঠকটাই ছিল কোম্পানিগুলোর মতামত শোনা। পরে আমরা বসে তামাক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। কোম্পানিগুলো কী বলেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, তারা তাদের সব ধরনের চাহিদার কথা জানিয়েছে। দুই পক্ষ থেকেই আলোচনা হয়েছে। তারা আমার কাছে একটাই আবেদন করেছে, তামাক বাজারের ৮০ শতাংশ বিড়িসহ অন্যান্য কমদামী সিগারেটের দখলে। এসব তামাক পণ্য স্বাস্থ্যের জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর। এগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে বিষয়ে পলিসি নেয়া। প্রসঙ্গত, ধূমপান জনিত কারণে প্রতি বছর দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করছেন। এছাড়া ধূমপানজনিত কারণে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের মরণঘাতী রোগে পড়ছেন ধূমপায়ীরা। এলক্ষ্যে সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) প্রণয়ন করে। ধূমপানকারী ব্যক্তি বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। চিকিৎসকদের এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিদিন ধূমপানের জন্য ১৪ মিনিট করে আয়ু কমতে থাকে। তামাকের ভয়াবহতা হ্রাসে বাংলাদেশ সরকার ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে গৃহীত আন্তর্জাতিক চুক্তি এফসিটিসিতে (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল) স্বাক্ষর করে। চুক্তির বিধানসমূহ প্রতিপালনে সরকার পরবর্তী সময়ে ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু কিছু দুর্বলতার কারণে আইনটি ততটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাই ২০১৩ সালের মে মাসে আইনটি সংশোধিত আকারে পাস হয়।
×