ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ে জাতীয় কনভেনশন

আট কোটি মানুষই ভূমিকম্পেরউচ্চ ঝুঁকিতে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩১ জুলাই ২০১৭

আট কোটি মানুষই ভূমিকম্পেরউচ্চ ঝুঁকিতে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক অর্থাৎ আট কোটি মানুষই ভূমিকম্পের উচ্চ মাত্রায় ঝুঁকিতে রয়েছে। এদের একটি বড় অংশই বসবাস করে দেশের দুই প্রধান নগরী ঢাকা ও চট্টগ্রামে। বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে শুধু সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর এলাকায় দুই কোটি ৮০ লাখ মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রথম জাতীয় কনভেনশন এর মূল প্রবন্ধে উঠে এসেছে। এই প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের আন্তরিকতায় দুর্যোগে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি আরও দৃশ্যমান হারে কমিয়ে আনা সম্ভব। দুর্যোগে সকলকে সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। রবিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ভূমিকম্প থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে। এটি বাস্তবায়নে বাধ্য করতে হবে। তা না হলে ভূমিকম্প ঝুঁকি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। বুয়েটের এই সাবেক অধ্যাপক বলেন, শুধু বিল্ডিং কোড মেনে ভবন করলেই হবে না, যেই মাটিতে ভবন নির্মাণ করা হবে সেই মাটিও সহনীয় হতে হবে। কারণ অনেকেই জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ করে। এটা ঠিক নয়। কারণ ওই জলাশয়ের ওপর ভবন নির্মাণ করলে ভূমিকম্প হলে এটি ঝুঁকির মধ্যে থেকে যায়। ২০১০ সালের হাইতি এবং চিলির ভূমিকম্পের উদাহরণ দিয়ে জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে হাইতি সাত দশমিক শূন্য মাত্রার ভূমিকম্প হয়। তাতে তিন লাখ মানুষ প্রায় হারায়। একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে চিলিতে ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। কিন্তু সেখানে মাত্র ৫৬২ মানুষ প্রাণ হারায়। পরিকল্পিত ভবন নির্মাণের কারণেই চিলিতে মানুষ মৃত্যু অনেক কম হয়। কারণ ১৯৬০ সালে চিলিতে ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই থেকে তারা মাস্টার প্লান করে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করেছে। এ কারণে হাইতির চেয়ে অনেকগুণ কম মানুষ মারা গেছে। এভাবে আমরাও যদি প্রস্তুতি না নেই তাহলে ঝুঁকি থেকে যাবে। জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষায় আমাদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ১৯৭০ সালের ভোলা বন্যায় আমাদের পাঁচ লাখ মানুষ মারা গেছে। ১৯৮৫ সালের উরির চর বন্যায় ১১ হাজার মানুষ মারা গেছে। ১৯৯১ সালের বন্যায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা গেছে। এরপর আমরা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে মাস্টার প্লান করি। এর ফলে ২০০৭ সালে সিডরে আমাদের মানুষ মৃত্যুর কার অনেক কমে আসে। সিডরের এই অভিজ্ঞতার পর ২০০৯ সালের আরেক ঘূর্ণিঝড় আইলায় ৪০০ মানুষ মারা গেছে জানিয়ে এই প্রকৌশলী বলেন, এভাবে আমাদের অগ্রগতি আছে। আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। ১৯৯২ সালের মাস্টার প্লানকে হালনাগাদ করতে হবে। এটাকে যুগোপযোগী করে তৈরি করতে হবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দুর্বল যে ভবন রয়েছে সেগুলোতে চিহ্নিত করতে হবে। এগুলো চিহ্নিত করে ফিট করে তৈরি কর হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রথম জাতীয় কনভেনশনের উদ্বোধন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু, সদস্য শফিকুল ইসলাম, আব্দুর রহমান বদি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল। উদ্বোধনী বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের আন্তরিকতায় দুর্যোগে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি আরও দৃশ্যমান হারে কমিয়ে আনা সম্ভব।
×