ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহির দীপন

ওয়ালম্যাট বানান ঘরেই

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৩১ জুলাই ২০১৭

ওয়ালম্যাট বানান ঘরেই

কবি জসীমউদ্দীনের কল্পনার মতোই ছোট্ট একটা নীড়, যেন বাবুই পাখির বাসা । এক গুচ্ছ স্বপ্নের বাস্তব রূপ। নিজের একান্তই আপন। আপন নীড় তো হলো। এবার একটু সাজিয়ে নেয়া যাক। স্বপ্নের ছোট নীড়টাকে সবাই সাজিয়ে নিতে চায় মনের মতো করে। সুন্দর-সাজানো গৃহের স্বপ্ন থাকে সবারই কিন্তু সাধ্যটা খুব কম মানুষেরই থাকে। সাধ্যের কথা আসলেই অনেকেই হয়ত নিজের ইচ্ছেগুলোকে জলাঞ্জলী দিয়ে ফেলেন। অন্দরের সাজ নিয়ে ভাবতে গেলেই মাথায় এক গাদা অর্থের চিন্তা। আর তখনই শুরুর হয় মাথাব্যথা। আর এসব চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে গৃহের সাজে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন ‘ওয়ালম্যাট’। যা আপনার গৃহকে দিচ্ছে নতুন সাজ, আপনাকে দিচ্ছে প্রশান্তি। একটা সময় ছিল যখন বিয়ের কন্যার গুণ বিচার করা হতো তার হাতের কাজ দিয়ে। তখন এমন কোন বাসা ছিল না যেখানে ওয়ালম্যাট পাওয়া যেত না। সে সময় আমাদের ঘরে দেয়াল সজ্জায় ওয়ালম্যাট বলতে ছিল আমাদের মা খালাদের করা নক্সি বুননের ওয়ালপিসগুলো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে দেয়ালের সাজেও এসেছে ভিন্নতা। পেইন্টিংস আর ওয়াল পেপারের ভিড়ে হারিয়ে ফেলেছি মা-খালাদের সেই হাতের স্পর্শ। কিন্তু তারপরও যারা হাতের কাজ,সুন্দর নক্সায় নিজের বাসগৃহটা সাজাতে চান তাদের পছন্দের তালিকায় আছে ওয়ালম্যাট। পুরানোকে পিছনে ফেলে নতুন আঙ্গিকে বাজারে এসেছে ওয়ালম্যাট। জেনে নিই সেগুলোর নক্সা আর উপাদান সম্পর্কে- নব্বই দশকের শেষে ঘরের আসবাবপত্র তৈরির উপাদান ছিল মূলত বেত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আসবাবপত্রে এসেছে নানা পরিবর্তন। বেতের আসবাবের পরিবর্তে কাঠের সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বাঁশের তৈরি আসবাব। আর এসবের সঙ্গে মিল রেখে ঘর সাজাতে ব্যবহার করতে পারেন মাটি, বাঁশ, পাট, কাঠ কিংবা পাথরের ওয়ালম্যাট। বাজারে নিজের ইচ্ছামতো দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার কাজ করে এমন কিছু দোকান রয়েছে। এগুলো দিয়ে ডিজাইনে আনতে পারেন নিজস্বতা। শহরে বসবাস করলেও অনেকেই আজকাল ঘরের ভিতরে দেয়ালে ঝুলানো ছোট টব রাখতে পছন্দ করেন। এছাড়া কিছুদিন ধরে ফ্রেমে বাঁধানো বিভিন্ন রং এবং নক্সার আয়নায় গৃহের অভ্যন্তরে সাজানোর চল শুরু“ হয়েছে। বাহারি কারুকাজের ঝুলন্ত গাছের টব বা ফ্রেম বাঁধানো আয়নাকেও ব্যতিক্রমী ওয়ালম্যাট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো যে কোন এক বা দুইপাশের দেয়ালে গুচ্ছকারে ছোট বড় কয়েকটি করে দিলে ভাল দেখাবে। টবের ক্ষেত্রে ছোট ছোট কয়েকটি নিয়ে একটি ফ্রেমে বা বোর্ডে এঁটে তাতে গাছের পাশাপাশি ছোট খোপ তৈরি করে সেখানে শোপিস, মোমদানি ইত্যাদি রাখতে পারেন। অভিনবত্ব আসবে। অন্দরকে যদি সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা দিতে চান সেক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন কাচ। সহজলভ্য এবং স্বল্প মূল্যের এই উপাদানটির ওপর রঙিন নক্সায় সাজিয়ে নিইয়ে বানিয়ে নিতে পারেন আপনার পছন্দের ওয়ালম্যাট। দেয়ালে স্বচ্ছ কাচের ওপর আঁকা রঙিন ছোট আকারের ছবিগুলো পছন্দসই ফ্রেমে বাঁধাই করে ঝুলাতে পারেন। আরেকটু আকর্ষণীয় করতে চাইলে কাচের নক্সার ওপর ইচ্ছামতো গ্লিটার, পাথর ইত্যাদি বসিয়ে নিন। দেয়ালে ড্রাইফ্লাওয়ার বা শুকনো ফুলের ওয়ালম্যাটও চমৎকার। বাজারে তো পাওয়া যায়ই, নিজের ইচ্ছামতো সমন্বয়ে কাঠের বোর্ডের ওপর বসিয়ে নিয়ে এ রকম ওয়ালম্যাট তৈরি করতে পারেন। এগুলোর আরেকটি সুবিধা হলো সব রকমের ঘরসাজে এটি মানায়। আপনার যদি হাতের কাজের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা থাকে সেক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু চেষ্টা করতে পারেন। বাটিক টাইডাইয়ের রংচঙে পছন্দসই সাইজের টুকরা কাপড় সুন্দর ফ্রেমে বসিয়ে নিন। আবার মাঝখানে কোন পেইন্টিং রেখে চারধারে মোটা করে এসব কাপড়ে মুড়ে বাঁধাতে পারেন। এছাড়া সুঁইসুতোয় কাঁথাস্টিচ ফোঁড় টেনে কাপড়খানায় মাঝে মাঝে চুমকি পুঁতি পাথর লেইসফিতা ইত্যাদি বসিয়ে নিন। একই কাজ করা যায় বেনারসি বা জামদানি পাড় দিয়ে। গৃহসজ্জায় নতুনত্ব আসবে। সবাই এখন ব্যতিক্রম খোঁজেন। গৎবাঁধা নিয়মে কেউ ঘরসাজাতে চান না। আর ভিন্নতা আনতে খুঁজে ফেরেন নানা নক্সা আর উপাদানের ওয়ালম্যাট। সহজলভ্য এই গৃহসজ্জার উপাদান যেমন আপনার অন্দরকে দিবে নতুন রূপ ঠিক তেমনি নতুন মানুষের কাছে আপনাকে উপস্থাপন করবে নতুনভাবে।
×