ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অতলান্তিকের তীর থেকে ॥ চোরচোট্টা আর ঠগঠগির দেশী-বিদেশী স্টাইল

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৩১ জুলাই ২০১৭

অতলান্তিকের তীর থেকে ॥ চোরচোট্টা আর ঠগঠগির দেশী-বিদেশী স্টাইল

নিউইয়র্কের আকাশে বহু যুগের ওপার থেকে পেরিয়ে আসা বর্ষার সুর সেদিন ঘরছাড়া করেছিল আমাকে। কিন্তু হৃদয়টাকে দুম করে কাব্য শূন্য করে দিল একটি ফার্মেসির অভ্যন্তরের পাশ থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া আমার ছাতাটি। কেনাকাটা শেষ করে দরজার পাশে বাইরের মুষলধারে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর গত্যন্তর ছিল না। এই দোকানটি থেকে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার এটাই একটি মাত্র পথ। কিছু পরে নাকের ডগা দিয়ে, চোখের কোল ঘেঁষে একরোখা বয়স্ক তরুণ সেইপথ দিয়েই বেরোল খোয়ানো ছাতাখানা মাথার পরে মেলে ধরে। ছত্র রুপি আমার বধূয়া যেন আনবাড়ী যাচ্ছে ‘আমার আঙ্গিনা দিয়া’ কি বিস্ময়! নাম লেখা নেই বটে তবে মেরুন রঙের এই ছাতাটি বছর খানেক ধরে ব্যবহারে নিজের কাছে অনেক চেনা। কিছু আগেই তো এই বয়স্ক ছোকড়াটিকে ঘুর ঘুর করতে দেখেছিলাম আমার কেনাকাটার আইলটাতেই। তখন চেহারা দেখে কে জানত বেটা এক ছিঁচকে চোর! সুবেশ সিঁদকাটাটি একটু আড়ে আড়ে চাইল বুঝি, তারপর যেন মুচকি হেসে বীরদর্পে হাঁটতে হাঁটতে ক্রস করল সামনের রাস্তার এ মাথা থেকে ওমাথা। রাজকীয় ছাতা নয় আবার ছেঁড়াও ছিল না। চার টাকা নিরানব্বই পয়সার নেহায়েতই এক মামুলি ছাতা। টাকা বললাম এই কারণে যে আমেরিকার বাঙালীরা ডলারকে টাকাই বলে। বালিকা এবং কিশোরী বয়সে স্কুলে ছাতা ও কলম হারিয়ে আমি পরিবার এবং পরিচিতদের মধ্যে রেকর্ড করেছিলাম। আত্মীয়স্বজন কঠিন ভাষায় বলতেন ‘নানা-নানির কাছে আহ্লাদে এ মেয়ে স্পয়েল্ড হয়ে গেছে।’ নিজেকেও আমি বরাবর তাদেরই বিশেষণে অভিহিত করি। তারপরেও এক বছর আগের কেনা এই ছাতাটি এখনও যে হারায়নি বা ভেঙে যায়নি সেটা বড়ই আশ্চর্যের বিষয়। আজকালকার ছেলেমেয়েদের মতো সেই স্কুল বেলায় অনেক জিনিসের মতো ছোটদের ছাতা ও কলম তাও আবার পাইলট কলম সুলভ ছিল না বলে খোয়া যাবার পর অত্যন্ত খারাপ মনে বাড়ি ফিরতাম। স্বভাব নাকি কোনকালেই বদলায় না- বিদেশে বসবাস করতে এলেও হয় না। আসলে যারে কোনদিন দেখিনি সে বড় সুন্দরী। যতদিন দেশ ছেড়ে প্রবাসে বসবাস করতে আসিনি ততদিন ধারণা ছিল নিজ দেশ ছাড়া বাকি দুনিয়ার তামাম উন্নত দেশ স্বর্গভূমি। প্রতারকরা অন্তত আমেরিকায় এসে আমার মতো একজন স্পয়েল্ড মানুষকে ধাওয়া করবে না বিশ্বাস ছিল। অথচ এদেশেও দিনদুপুরেই নিশি কুটুম্বরা আমায় রেয়াত করেনি। বাড়ির কর্তা রসিকতা করে বলে থাকে ‘চেহারা দেখেই চোরের মালুম হয়!’ কথিত দোকানের প্রবেশদ্বারে ছেলেবেলার ছাতা হারানোর মতো শোক সেদিনও যেন একরকম উথলে উঠেছিল। এ জগতে রাজছত্র ও ছেঁড়া ছাতা যে একই বৈকুণ্ঠের দিকে চলে যায় কখনও কখনও! উভয়ের মাঝে যে কোন ভেদ নেই সেই ব্যাপারটা বুঝলাম মর্মে মর্মে সে মুহূর্তের তুমুল বর্ষণে। ঘরে ফেরা আছেÑ সুপার মার্কেটের কিছু জরুরী কেনাকাটার মতো নানারকম কাজ বাকি আছে। বৃষ্টিধারার অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কাব্য-টাব্য ছেড়ে খিঁচড়ানো মনে স্বভাবতই দুনিয়ার নানারকম চুরি জোচ্চুরির কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। নিজেকেই শোনালাম এই আমেরিকায় কাঁধেই থাকা আমার নিজ ব্যাগটি থেকে দুদিন কোন অলক্ষ্যে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল যাবতীয় টাকাকড়ি। তখুনি স্মরণে এল বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসে ডেনিস রাষ্ট্রদূতের এক চুরির কথা, যার জন্য নাকি দেশের মানুষের মাথা কাটা গিয়েছিল। বাংলা একাডেমির ভিড়াক্রান্ত একাডেমির বইমেলা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ভদ্রমহিলা তার মূল্যবান জিনিসপত্র সমেত হাতব্যাগটি কারোর জিম্মায় নয় নিজ চেয়ারে যতœ করে রেখে মঞ্চে আরোহণ করতে চলে গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে তক্কে তক্কে থাকা একটি চোরগোষ্ঠী ব্যাগটি নিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। যতদিন সেটি ফেরত না পাওয়া গেল সাংবাদিক ভাইয়েরা তো এমনভাবে ধিক্কার জানাচ্ছিলেন সরকারকেই, যেন তাদেরই কোন কর্মী ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ডেনমার্কে কিংবা ইউরোপের অন্য কোন দেশে এভাবে মূল্যবান ব্যাগ চেয়ারে ফেলে রেখে গেলে চুরি হবে কিনা সেটা কেউ শপথ করে বলতে পারবেন কি? বছর কয়েক আগে ইংল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে দেখলাম খোদ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনতিদূরেই টেমস নদীর পুলের ওপর ক’জন বদ চেহারার লোক গাইয়া গোছের টুরিস্টদের সঙ্গে জুয়া খেলে তাদের সর্বস্বান্ত করছে। বেশ ক’বছর আগের কথা। ইংল্যান্ড থেকেই একটা ইমেইল এসেছিল এক বন্ধুর কাছ থেকে যিনি নাম করা সাংবাদিক নেতা। এর মাধ্যমে জানতে পারলাম তিনি সেখানে ব্যাগ ও টাকাকড়ি খুইয়ে বিষম বিপদে। সম্ভব হলে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে কিছু টাকা পাঠিয়ে তাকে যেন উদ্ধার করি। ঢাকায় ফোন করা হলে তাঁর স্ত্রী জানালেন তার স্বামী ঢাকাতেই এবং তার পাসপোর্টটি রাখা আছে পাশের আলমারিতে। একজন টিভি ব্যক্তিত্ব হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ফোন করে বললেনÑ তিনি মার্কিন এক নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশিপ পেয়েছেন। তবে প্রথম অবস্থায় চার হাজার তাকে পে করতে হবে। আমরা এটাকে জালিয়াতির চেষ্টা বললে তিনি মনোক্ষুণœ হয়েছিলেন বটে তবে টাকাটা আর জমা দেননি। পরে যদিও জানালেন একজন মার্কিন চাইনিজ নাকি অধ্যাপক সেজে এভাবেই বাংলাদেশে গিয়ে প্রতারণা করে বহু টাকা হাতিয়ে এনেছিল। কিন্তু ধর্মস্থানেও কি জোচ্চরের হাত থেকে রক্ষা আছে? আর এক বন্ধু তিনিও সাংবাদিক, গিয়েছিলেন পবিত্র হজে। সেখানে একদিন দেখা হলো তিন সন্তানসহ একজন বিব্রত পাকিস্তানীর সঙ্গে। ভদ্রলোক নাকি টাকাকড়ি খুঁইয়ে মহাবিপদে। দেশে খবর দিয়েছেন এবং কালকেই টাকা আসবে। পরশু ঠিক এই জায়গাতেই তিনি টাকাটা ফেরত দেবেন। সাংবাদিক সাহেব অবশ্য সেটা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু রাতেই সঙ্গী ধর্মপ্রাণ সচিবের মুখে শুনলেন এভাবেই কিছু পাকিস্তানী লোক জোচ্চুরি করে যাচ্ছে এবং তিনিও তাদের শিকার হয়ে বেশকিছু টাকা গচ্চা দিয়েছেন। অবশ্য চৌর্য বৃত্তিতে কিছু পাকির বদনাম আছে নানা দেশে। এক ভদ্রলোক তার জাপানে রেল ভ্রমণের গল্প বলতে গিয়ে শোনালেন এক কথা, তিনি জাপান ভ্রমণের সময় ফেলে রেখে গিয়েছিলেন তার অত্যন্ত মূল্যবান ক্যামেরাখানা। এটা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে একজন জানালেন ‘তোমার ক্যামেরায় যদি কোন পাকিস্তানী না থেকে থাকে তবে সেটা নিশ্চই ফেরত পাবে।’ এই নিউইয়র্ক নগরে নানারকম অকাজ-কুকাজ করে ওরা। কোরানিক শিক্ষা দেয়ার নাম করে পর্যন্ত টেলিফোনে ধান্দাবাজি করতে দ্বিধা নেই। কিন্তু এদিক দিয়ে খেটে খাওয়া সাধারণ প্রবাসী বাঙালীর অনেক সুনাম শোনা যায়। বহু ট্যাক্সিচালক সিটে ফেলে যাওয়া যাত্রীদের বহু মূলবান সম্পদ নির্দ্বিধায় ফেরত দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন নগর কর্তৃপক্ষের। অবশ্য শিক্ষিত এবং বিত্তবান কিছু বাঙালীর প্রসঙ্গ আজ আর তুলতে চাইছি না। সেটা অবশ্য নব্বই দশকের ঘটনা। দেশের আর এক পুরনো সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে নিউইয়র্ক ঘুরে গেছেন রোমে। এক রাতে ইতালিয়ান পুলিশের ভেক ধরে একদল দুর্বৃত্ত সার্চ করার নামে হাপিশ করল তাদের সমুদয় অর্থ। যতবড় দেশ ততবড় চোর। আমাদের নিউইয়র্ক বাসের প্রথম রাতেই একজন বন্ধু বলেছিলেন পকেটে এবং ব্যাগে সবসময় দশ টাকার নোট রাখবেন এবং কেউ চাইলেই তার হাতে সেটা বিনা দ্বিধায় তুলে দিতে বাধ্য থাকবেন। নইলে দেশ থেকে আনা পৈতৃক প্রাণটা দিতে হবে। সেটা অবশ্য নব্বইয়ের শুরুতে রেসেসনকালীন কথা। নিউইয়র্কে ভিড়াক্রান্ত স্থানগুলোতে সাবধানবাণী লেখা থাকে ‘তোমার মূল্যবান সামগ্রী চোখের আড়ালে রাখ।’ কিন্তু চোরের চোখ এড়ানো যে খুব সহজ নয়। আমার প্রথম চুরি যাওয়ার অভিজ্ঞতাটাকে ফ্রোঞ্চ কানেকশন বলা যেতে পারে। এক ফ্রোঞ্চ বুটিকের নির্জন দোকানে একটি মাত্র কর্মরত কম বয়সী ফরাসিনী জিনিসপত্র গোছানোর ছলে কেন যে বার বার ধাক্কা মেরে যাচ্ছিল আমাকে। ওর সুন্দর মুখ দেখে তো কস্মিনকালেও কারও সন্দেহ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু পাশের আর এক দোকানে কেনাকাটার পয়সাকড়ি মেটাতে গিয়ে চমকে দেখি ব্যাগের ভেতরের টাকার পার্সটি উধাও। ফিরে গিয়ে বললাম তুমি আমার পার্স চুরি করেছ। কারণ বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা এই দোকানেই এসেছিলাম আর এখানে তুমি ছাড়া কোন কাস্টমার পর্যন্ত ছিল না। এদেশে নানা অভিজ্ঞতায় দেখেছি চোরের গলা অনেক সুউচ্চ হয়। সেই উল্টো ধমকে বললÑ প্রমাণ আছে কিছু? ডাক না পুলিশ! জানতাম পুলিশ ডাকলে আসলেই কিছু হবে না। নিজেরই হয়রানি। আপন মুখখানই তাই চোরের মতো করে বেরিয়ে এসেছিলাম। ইউরোপের কত দেশে ছিঁচকে চুরিচামারি থেকে দুর্ধর্ষ ডাকাতি অহরহ ঘটে যায় সেটা তো টুরিস্টরা অবগত, সংবাদমাধ্যমে আসে না। এক বছর অস্ট্রেলিয়ায় বেড়াতে গিয়ে এ জগতে বসবাসযোগ্য সেরা নগর হিসেবে আখ্যা পাওয়া মেলবোর্নেও শুনলাম সেসময় রাতে ডাকাত দল নাকি হানা দিচ্ছে বাড়ি বাড়ি। গত বছর সাহিত্য, চলচ্চিত্র, ফ্যাশন, প্রসাধনী ইত্যাদির পীঠস্থান প্যারিসে যে দুর্ধর্ষ গ্যাং ডাকাতিটি ঘটল সেটি বিদ্যুতের বেগে ছড়িয়ে পড়েছিল দুনিয়ার তাবত গণমাধ্যমে। মার্কিন দেশের সুবিখ্যাত রিয়ালিটি টিভি স্টার কিম কারদাশিয়ান প্যারিসে অনুষ্ঠিত একটি ব্রাজিলিয়ান বিয়ার কোম্পানির সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে গিয়ে প্রদর্শন করেছিলেন তার বহুমূল্য দুর্লভ হীরে জহরতের সম্ভার। প্রদর্শনী শেষে কিম যেখানে রাত্রী যাপন করছিলেন সেই বিলাসবহুল এ্যাপার্টমেন্টে একদল দুঃসাহসী ডাকাত তার হাত-পা-মুখ বেঁধে কমপক্ষে ৮ মিলিয়ন ইউরোর গহনা লুণ্ঠন করে। পরবর্তীতে ত্বরিত গতিতে সেগুলো গলিয়ে-টলিয়ে এমনভাবে বিক্রি করা হয় যা কোনমতেই উদ্ধার করতে পারেনি ফ্রেঞ্চ পুলিশ। এসব দস্যুতাকে ফরাসী দেশে বলা হয় হোম জ্যাকিং। সেই ফরাসিনীর পর আমেরিকান ‘তেনাদের’ খপ্পরে পড়েও আমি টাকা পয়সা রাখার পার্সটি খুইয়েছিলাম। এই তেনারা হলেনÑ যাদের সম্মান করে সিনিয়র সিটিজেন বলা হয়। একদিন এক ভিড় ভাড়াক্কার মলে বার বার চাপাচাপি করে আমাকে পাশ কাটাচ্ছিলেন সিনিয়র কয়েকজন শ্বেতাঙ্গিনী। সেই ফ্রেঞ্চ তরুণীর চেপে চেপে গিয়ে চুরির কৌশল ব্যাপারটা মনে থাকলেও ভেবেছি তাই বলে এঁরা? কেনাকাটা শেষে পে করতে গিয়ে একইভাবে দেখি টাকার ব্যাগটি নেই। নিঃসন্দেহে ‘তেনারাই’ কেউ তুলে নিয়েছিলেন নিশ্চয়ই। এরপর থেকে পার্সে খুচরো পয়সা ছাড়া কিছু রাখি না। এখন টাকা থাকে হাতব্যাগের নানা খোপে-খাপে। এদেশের কাঁধে যারা ব্যাগ ঝোলান তাদের জন্য শিক্ষা হলো সেটি পিঠে রাখা নয় আগলে রাখতে হবে হৃদয়ের কাছাকাছি! এবার তেনাদের একটা গল্প তবে বলতেই হয়! আমার এলাকার এক উপমহাদেশীয় ডলার স্টোরে টুকিটাকি কেনার প্রয়োজনে গেছি। দোকানের অল্প বয়সী ছেলেটি পাশে এসে দাঁড়াল। ‘দেখোজি মেরে খালা আ রাহি হায়। ’ দেখলাম হাতে একটি সওদা করার কার্ট ঠুকঠুকিয়ে শ্বেতাঙ্গিনী একজন আছেন। আমাদের দেশে হলে তিনি নাকি হয়ত আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতেন ‘দিন যে গেল সন্ধ্যা হলো পার কর আমারে’ কিন্তু তিনি সেই পথের পথিক নন। অবাক হয়ে বলি- হাউ কাম! -সে ভাগিনার দোকান সমঝ আমার চোখের ওপরই এখান কিছু না কিছু উঠিয়ে নিয়ে ওর হাতের কার্টের মালপত্রের ভেতর লুকিয়ে রাখবে। বললেই চিৎকার করে দুনিয়া মাথায় তুলবে- হোয়েন য়ু আর গন্না টু গো ব্যাক ইওর কান্ট্রি! প্রথম খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম এই ভদ্রবেশী অভিজাত শ্বেতাঙ্গিনীরা কেন এহেন অপকর্ম করে। এখন জানি এটা নাকি তাদের বর্তমান নিরস জীবনে রগরগে এক এডভেঞ্চার। সেই ছেলেটি বলেছিল এরা ধরা পড়লে পুলিশও কিছু করে না। মুচকি হেসে যেন বলে-ছোড় দো ইয়ার এক ডলারের জন্য নব্বই বছরকে আর কি শাস্তি দিতে চাস! বিগত কয়েক বছর বাসায় বাসায় দুমদাম ফোন ধুম আসার ধুম চলছিল আইআরএস মানে আয়কর বিভাগ থেকে। আমাদের বাসাতেও একজন অতি কুৎসিত ভঙ্গিতে মেসেজে রেখেছে নাম ধরে! আমি নাকি আমার ট্যাক্স রিটার্নে পাওনা ট্যাক্স ঠিকমতো পে করিনি। ধমক দিয়ে টাকার একটা অঙ্ক দিয়ে সে জানিয়েছে তার দেয়া এই এ্যাকাউন্ট নম্বরে যথা শীঘ্রই সেটা পাঠাতে। নইলে এদেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। আমাদের তো তখন ট্যাক্স রিটার্ন করা হয়নি। আসলে এ ব্যাপারে আমরা দুজনে একটু লেট লতিফ গোছের। রিটার্ন দাখিলের তখন বাকি ছিল তিনদিন এবং পরের দিনই সেটা করার কথা। রাস্তায় এক পুলিশের সঙ্গে দেখা হলে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করে জানলাম বাড়ি বাড়ি এই রকম ফোন করা হচ্ছে এবং শোনা গেল অনেকে ভয়ে ডরে হাজার হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে এই প্রতারক চক্রের হাতে। তক্কে তক্কেই ছিলাম। দুদিন পরে আবার সেই ফোন এলে একই লোকটি ধমক দিয়ে কথা শুরু করা মাত্র মাথায় যেন আগুন জ্বলল। ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই চিৎকার করলাম -শাট আপ। ... ‘ইউ সান অব আবিচ।’ কোৎ করে কিম্ভুত এক শব্দ করে লোকটি মুহূর্তের মধ্যে ছেড়ে দিল ওপারের ফোন। বাস্টার্ড শব্দটা অবশ্য ব্যবহার করিনি কারণ এদেশে ওদের আবার আদর করে বলা হয় ‘লাভ চাইল্ড।’ লেখক : নিউইয়র্ক প্রবাসী
×