ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোলাম সারোয়ার

অভিমত ॥ জনসংখ্যা বোঝা নয়

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৩১ জুলাই ২০১৭

অভিমত ॥ জনসংখ্যা বোঝা নয়

বর্তমান পৃথিবীতে জনসংখ্যাকে বোঝা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু পৃথিবীতে মানুষ কখনও বোঝা নয়। পৃথিবীতে যে সম্পদ রয়েছে সে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে পারলে এবং পৃথিবীতে বিরাজমান প্রাকৃতিক শক্তিতে উদ্ভাবন জুড়ে দিতে পারলে পৃথিবীর জনসংখ্যা আরও হাজার বছর বাড়লেও এখানে মৌলিক চাহিদাগুলোর কোন অভাব হবে না। বর্তমান পৃথিবীর রাজনৈতিক ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক তত্ত্বের ব্যর্থতা এবং বিজ্ঞানীদের সময়ের সঙ্গে উদ্ভাবনী ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে মানুষের ওপর। তাই জনসংখ্যাকে দরিদ্র বিশ্বে বোঝা হিসেবে দেখা হয়। আমরা দেখতে পাই, বিশ্বের সম্পদের তথ্য আমাদের এই আশ্বাসই দেয় যে, আগামী হাজার বছরেও বিশ্বে খাদ্য, বস্ত্র কিংবা বাসস্থানের সমস্যা হওয়ার কথা নয় যদি জনসংখ্যা প্রাকৃতিক নিয়মেও বাড়ে। অর্থনীতির কথা হলোÑ বিশ্বে সম্পদ সসীম আর অভাব অসীম। সসীম সম্পদ দিয়ে অসীম অভাব কুলোয় না। কিন্তু বিশ্ব পরিসংখ্যান এই তথ্যের বিরোধিতা করে। আমরা বিশ্ব পরিসংখ্যানের তথ্যগুলো একটু দেখে নিই। পৃথিবীতে প্রায় ৮৫০ কোটি একর চাষযোগ্য জমি রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৩৫০ কোটি একর জমিতে চাষ হচ্ছে। তার মানে এখনও বিশ্বে যে পরিমাণ জমিতে আবাদ হচ্ছে তার দ্বিগুণ জমিতে চাষ করা সম্ভব। আবার এর মধ্যে ৪০০ কোটি একর জমি হবে দো-ফসলা। বিদ্যমান জমিতে উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করেও উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব, যার উদাহরণ বাংলাদেশ। এটা হলো চাষযোগ্য জমির হিসাব। বলার প্রয়োজন নেই যে, পৃথিবীতে চাষযোগ্য জমির চেয়ে চাষ অযোগ্য জমি আরও ঢের বেশি। চাষ অযোগ্য জমিকে চাষযোগ্য করা যাবে যদি সময়ের সঙ্গে সমান্তরাল গতিতে বিজ্ঞান উন্নত হয়। বিজ্ঞান উন্নত হবে কী করে, যে বিশ্বের সিংগভাগ অর্থ, সম্পদ আর মেধা ব্যয় করা হয় মানুষ হত্যার মারণাস্ত্র তৈরির পেছনে, সে বিশ্বের বিজ্ঞানীদের আর রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আর কতটুকুই বা আশা করা যায়! বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ আছে, যারা আগে বাজারে ওষুধ ছাড়ে তারপর ছেড়ে দেয় সে ওষুধের রোগের জীবাণু। কিছু কিছু মানুষ নিচে নামতে নামতে আজ এত নিচে নেমেছে যে, গ্রাফ পেপারের এক শ’ আশি ডিগ্রীতে মানুষের মান আর রাখা যাচ্ছে না। তারা চলে যাচ্ছে গ্রাফের নিচের দিকের বাকি এক শ’ আশি ডিগ্রীতে যা আমরা রেখেছি পশুদের জন্য। বলছিলাম সম্পদের কথা। সম্পদের আর জ্ঞানের এত নিদারুণ অপচয়ের পরও বর্তমান বিশ্বে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় তারও যদি সুসম বণ্টন হতো, তবে কোন মানুষই না খেয়ে মারা যেত না। কিন্তু মানুষ না খেয়ে মরছে দেদার। একদিকে লাখ লাখ টন খাবার নষ্ট হচ্ছে। ফেলে দেয়া হচ্ছে সাগরে। একদিকে সম্পদের পাহাড় গুটিকয়েক মানুষের কাছে, অন্যদিকে অগণিত মানুষ খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছে। অনেকে রিজিকের মালিককে দুষছে। রিজিকের মালিক তো দিয়েছেন, কিন্তু রাজা খারাপ হলে কোথায় যাই। নাকি সমাজের পরিকল্পনায় ভুল হচ্ছে! আবার আসি বিশ্বজনসংখ্যা দিবসে। ১৯৮৭ সালের ১১ জুলাই বিশ্বের জনসংখ্যা ৫০০ কোটিতে উন্নীত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে প্রতি মিনিটে বিশ্বে ২৫০টি শিশু জন্মগ্রহণ করে আর বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে ৯টি শিশু। বর্তমান পৃথিবীতে জনসংখ্যা আছে ৭৩০ কোটি। কিন্তু মানুষ আছে কতজন! আমরা আসলে মানুষ খুঁজি। কারণ প্রতিটি মানুষই এক একটি পৃথিবী। একটি মানুষকে কেন্দ্র করেই একটি পৃথিবী আবর্তিত হতে পারে। লেখক : ব্যাংকার
×