ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ওয়াজেদ

নির্বাচনের পথে শুরু হলো যাত্রা

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৩১ জুলাই ২০১৭

নির্বাচনের পথে শুরু হলো যাত্রা

নির্বাচনের ট্রেনের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। ইঞ্জিন চালুর কাজটি শুরু করছে ইসি তথা নির্বাচন কমিশন। সামনে যতই প্রতিবন্ধকতা থাক, এ ট্রেন সবকিছু মাড়িয়ে গতিবেগ বাড়িয়ে ছুটে চলবে অচিরেই। ধীরগতিতে যাত্রা শুরু হলেও ক্রমশ গতি তার বাড়বেই। ট্রেনযাত্রীরা করুক যতই হম্বিতম্বি, সখেদে উঠুক গেয়ে ভোটের গান, ট্রেন তার আপন গতিতেই এগিয়ে যাবে। ট্রেনকে বিপথে চালনা করার জন্য ওঁৎপেতে আছে কত না জন। সংঘবদ্ধ শক্তি দিয়ে তারা ট্রেনকে থামিয়ে দিতে চাইবে। রেলওয়ের সিøপার তুলে ফেলে ট্রেনের যাত্রায় বিঘœ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ট্রেন লাইনচ্যুত করা যাদের লক্ষ্য, তারা নানা ওজর-আপত্তি ও উছিলায় দুর্ঘটনার পথ তৈরি করবেই। তাদের লক্ষ্য নির্বাচন বানচাল। তাতে লাভ-লোকসান একটা তো অবশ্যই রয়েছে। নির্বাচন মানেই ভোট আর ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচিত হন জনপ্রতিনিধি। প্রতিশ্রুতির নহর বইয়ে দেয়া ভোটের এ খেলায় কেউ জেতে, কেউ হারে। জয়-পরাজয়ের এ খেলায় রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীরা হন খেলোয়াড়। খেলা আয়োজন থেকে শুরু করে রেফারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া ছাড়াও ফলাফল ঘোষণার কাজটিও করে নির্বাচন কমিশন। তার হাতেই নির্বাচনের বাঁশি। সে বাঁশি বাজিয়ে ভোটের আসর সাজিয়ে তোলার জন্য তাকে অনেক পথ ও পন্থা বেছে নিতে হয়। চড়াই-উতরাই পথকে করতে হয় মসৃণ। নিরাপদে ভোটদান থেকে নিরাপত্তার প্রহরীর কাজটিও ইসির। নির্বাচনী আসন নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভোটকেন্দ্র নির্বাচন, প্রার্থিতা বাছাই, ব্যালট ছাপানো, ব্যালট বাক্স তৈরি, প্রশাসনিক কাজের জন্য উপযুক্ত কর্মকর্তা নিয়োগদান- সবকিছুরই দায়ভার এবং তদারকির কাজটি একান্তই ইসির। একটি নির্বাচন পরিচালনার জন্য যা যা করণীয়, সবই ইসিকে করতে হয়। অন্যের খবরদারি মেনে নেয়া তার কাজ নয় বরং ভোটসংশ্লিষ্ট সবকিছুর ওপরই রয়েছে তার খবরদারির এখতিয়ার। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা, গোলযোগ থামানো, সংঘর্ষ বন্ধের উপায় নির্ধারণের মতো কঠিন কাজটি করে যেতে হয় নির্বাচন কমিশন নামক বর্তমানে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটিকে। দীর্ঘদিন সামরিক জান্তা ও তার বশংবদের ক্রীড়নকে থাকার কারণে ইসির রুগ্ন, ভগ্ন, পক্ষপাতপূর্ণ দশাই দেখা গেছে বারংবার। এ করুণ ভগ্নদশা থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য শুশ্রƒষা যে প্রয়োজন, তা উপলব্ধি করেছে ভোটার তথা জনগণ। তারা চেয়েছে বলেই ইসি আজ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংস্থায় পরিণত হতে পেরেছে। জান্তা শাসক ও তাদের উত্তরসূরিরা প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় ধ্বংসের পথে নিয়ে গিয়েছিল। ফলে যে ক্ষমতা ও দায়িত্ব ছিল ইসির তা পালনে তারা সক্রিয় হতে পারেনি। তাদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে জনমতকে পদদলিত করে ক্ষমতার সিংহাসন আঁকড়ে রেখেছিল শাসকগোষ্ঠী। তাই তারা কমিশনকে সংবিধান ও আইনের পথে চলতে দেয়নি। তবে চোখ ভোলানো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, মনে হবে ইসি সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি বলেই বিজয়ী প্রার্থীকে পরাজিত ঘোষণা করতেও দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে ইসির কর্মকর্তারা শাসকগোষ্ঠীর ইচ্ছা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। নির্বাচন কমিশনাররা ছিল শাসকগোষ্ঠীর ধামাধরা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাদের কোন উদ্যোগ কখনও পরিলক্ষিত হয়নি। পর্যাপ্ত ক্ষমতাকে কোন কাজে লাগায়নি। বরং সেসব চাপা রেখে শাসকগোষ্ঠীর আদেশ-নির্দেশ মেনে ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার কাজটি করে এসেছে, যা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। কারণ, জনমতের কোন প্রতিফলন ঘটেনি এসব নির্বাচনে। শাসকরা আগেই তালিকা তৈরি করে রেখেছিল কে বিজয়ী হবে। সে অনুযায়ী ইসি তার কার্যক্রম চালিয়েছে। ভোটারবিহীন নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে সত্তর-আশি ভাগ ভোট পড়েছে বলে উল্লেখ করতে সামান্য লজ্জিত বা বিব্রত হননি নির্বাচন কমিশনাররা। নির্বাচন কমিশন নামক প্রতিষ্ঠানটি মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে এবং শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা বহাল রাখার অভিপ্রায়কে গুরুত্ব দিয়ে তথাকথিত কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করে এসেছিল। নব্বই দশকেও নির্বাচন কমিশন ছিল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের অধীনে। ফলে শাসকরা তাদের খেয়ালখুশির প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল ইসিকে। নির্বাচন বিষয়ে আস্থার সঙ্কট তৈরি করেছিল এমনভাবে যে, জনগণ বুঝে নিয়েছিল, তার ভোটের কোন মূল্য ও মর্যাদা নেই। মাগুরা মার্কা উপনির্বাচন মানুষকে এমনভাবে আলোড়িত করেছিল যে, স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। জনমতের চাপে পড়ে ইসির গুরুত্ব বাড়ানোর কাজটি শুরু হয়, যার ফলে বর্তমান ইসি স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও ক্ষমতাবান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থা পুরনো হলেও অতিপুরনো নয়। নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে নির্বাচিত হন জনপ্রতিনিধিরা। নির্বাচিতরা গঠন করেন সরকার। রাজনৈতিক দলগতভাবে এ নির্বাচনে গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়েই বার বার উজ্জীবন ঘটে রাষ্ট্র জীবনের। তাই নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ। সেই প্রাণকে গলাটিপে হত্যা করার ষড়যন্ত্র জনমতের কারণে সফল হতে না পারলেও ক্ষত তৈরিতে সহায়ক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম নয়। তাই নির্বাচনে যাতে জনমত প্রতিফলিত হয়, মানুষ নির্বিঘেœ ভোটদান করতে পারে তার পছন্দের প্রার্থীকে এবং ফলাফলে কারচুপি না হয় সে পথ ও পন্থা তৈরির কাজটি ইসির নিজস্ব। শুধু সংসদ নির্বাচন নয়, স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচন আয়োজন ও সম্পন্ন করার কাজটিও ইসির। সারাবছর ধরেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি তাই থেকে যায় ইসির। আর এ দেশে নির্বাচনে শক্তিশালী, প্রভাবশালীর দাপট অনেক পুরনো। ভোটকেন্দ্র দখলের কাজটি চর দখলের মতো করে আনার ঘটনা অনেক। যে কারণে নির্বাচনকালে নির্বাচনকে সহিংতার রূপ দিতে ‘মাসলম্যানদের’ অপতৎপরতা বেড়ে যায়। ভোটকেন্দ্রগুলোকে লড়াইয়ের ময়দানে পরিণত করার এবং নৃশংস হত্যার ঘটনা এ দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে অজস্র। পঁচাত্তরপরবর্তী সামরিক জান্তা শাসকরা গণতন্ত্রকে ধ্বংসের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনষ্ট করার অভিপ্রায়ে যত প্রকার কদাকার কর্ম সম্ভব, সবই সাধন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী রাজনৈতিক দলগুলো এ অবস্থা থেকে উত্তরণ চেয়ে এসেছে। তাদের চাওয়ার পরিণামে বর্তমান একাদশ নির্বাচন কমিশনে কমিশনাররা রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবানুযায়ী নিযুক্ত হতে পেরেছেন। একটি স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য নয়া নির্বাচন কমিশনাররা একটি রোডম্যাপও ঘোষণা করেছেন। প্রায় দেড় বছর আগেই সংসদ নির্বাচনের যে প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি, তাতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রগুলো ক্রমশ উদ্ভাসিত হবে। সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের সঙ্গে এ রোডম্যাপ বা পথনির্দেশিকা বা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়াকে একটি উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারবে। তবে ইসিকে চাপে রেখে বিভ্রান্তির চোরাবালিতে হাবুডুবু খাওয়ানোর লোকের অভাব এ দেশে নেই। নির্বাচনে যাদের বৈতরণী পার হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তারা চাইবে না স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। ইসি আইন ও বিধিবিধান মেনে নির্বাচন পরিচালনা করুকÑ এটা যারা চায় না, তারা নানা ধরনের কথাবার্তা বলে ভ্রান্তির বেড়াজাল তৈরি করছে। সে কারণে রোডম্যাপের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠ ও উপলব্ধি না করেই বলে দেয়া হলো, এ রোডম্যাপে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা চায় ইসিকে সংবিধানবহির্ভূত কর্মকা-ে উৎসাহিত করতে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নামক সংবিধানবহির্ভূত বিষয় কার্যকর করার জন্য ইসির ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। একবার স্খলন হলে ইসির, তারা সদর্পে বলে বেড়াবে, ইসি সংবিধান মানে না। এরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। সকল দলের মতামত নিয়ে ইসি গঠন হলেও জামায়াতের দোসর বিএনপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্পর্কে মিথ্যাচার করে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। অথচ বিএনপির মনোনয়নে যিনি কমিশনার হয়েছেন, তিনি বিএনপির খাগড়াছড়ি জেলার এক নেতা ও সাবেক এমপির শ্বশুর। এই কমিশনার বিএনপির পেট্রোলবোমা সন্ত্রাসকালে পত্রিকায় কলাম লিখেছিলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত বাঙালীরা যদি সে দেশে শান্তি আনতে পারে, তবে নিজ দেশে শান্তি আনার জন্য পদক্ষেপ নেয় না কেন? বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করে একটি ট্যাবলয়েড দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখতেন এই কমিশনার। তার বিএনপি সংযোগ সর্বজনবিদিত। কিন্তু সরকারী দল এ নিয়ে কোন নিন্দামন্দ বাক্য উচ্চারণ করেনি। এমনকি এটাও বলেনি যে, তিনি পক্ষপাতদুষ্ট। কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব গ্রহণের পর তারা বিধিবিধানের বাইরে যাবেন, এমনটা হয়ত আওয়ামী লীগ মনে করে না। ইসির অধীনে নির্বাচন পরিচালিত হবে বলে আওয়ামী নেতারা বারবার বলে আসছেন। তাই তারা ইসিকে আরও শক্তিশালী স্বাধীনসত্তা হিসেবে দেখতে চান। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে ইসি কঠোর ভূমিকা পালন করুক, সরকারী দল তা-ই চায়। কিন্তু বিএনপি চায় ইসি হবে অতীতের মতোই তাদের বশংবদ। বিচারপতি রউফ, বিচারপতি আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বানিয়ে বিএনপি-জামায়াতরা যেসব কা-কীর্তি করেছে, বিএনপি সেই একই নিন্দনীয় কর্মকা-ে আবারও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা নির্বাচনী বিধি-ব্যবস্থাকে কিভাবে আরও উন্নত করা যায়, সেসব বিষয়ে কোন প্রস্তাব আনে না। যুক্তির ধার ঘেঁষার স্বভাবহীন বিএনপি তাই ইসির কাছে দাবি করছে সহায়ক সরকার গঠনের ব্যবস্থা করতে। এমনকি নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগের অর্থহীন দাবি তুলছে। আসলে পানি ঘোলা করার কাজটি তারা শুরু করে দিয়েছে। অযৌক্তিক ও একগুঁয়েমি দাবিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো মানসিক অবস্থান তৈরি করতে পারেনি বিএনপি-জামায়াতী জোট। নির্বাচন বর্জন করে এবং তা বানচালের জন্য সব পন্থা অবলম্বন করেছিল। এমনকি প্রিসাইডিং অফিসারকেও হত্যা করেছিল। যথারীতি নির্বাচন হয়েছে, বেশকটি দল নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারা সন্ত্রাসী দল হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিপ্রাপ্ত বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিতে পারেÑ এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আন্দোলনের নামে গণহত্যা, জনগণকে জিম্মি ও সংসদ ধ্বংসের যে অপচেষ্টা তারা অতীতে করে এসেছে, তারই ধারা আবারও অব্যাহত রাখতে চায়। গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য যত অশুভ দিক রয়েছে বিএনপি সেসব চর্চা করতে ব্যগ্র। ক্ষমতার অলিন্দে জন্ম বিএনপি নামক দলটি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে। দুর্বল সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মতো অবস্থা নেই বলেই নির্বাচনকে ভ-ুল করে দিতে দ্বিধা করবে না। বিজয় শতভাগ নিশ্চিত নয়, ক্ষমতায় যাওয়া দূরে থাকÑ তাই তারা সবকিছু এলোমেলো, ল-ভ- করে দিতে চাইলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দেশ-বিদেশে বসে যতই ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করুক না কেন, জনগণের ক্ষোভের কাছে সেসব বাষ্প হয়ে মিলিয়ে যাবে। একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ইসি। আজ ৩১ জুলাই তারা সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপে বসছে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে নির্বাচনী পথরেখা ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পন্থা ও পথ। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা হবে। সবার পরামর্শ নিয়ে ইসি নিজস্ব বাস্তবতার আলোকে যে পদক্ষেপ নেবে, তা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের সহায়ক হয়ে উঠবে। সুশীল সমাজ হিসেবে যাদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে, তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা ক’জন রয়েছেন, তেমনি বিএনপি-জামায়াতী চেতনাধারী ও পক্ষপাতদোষে দুষ্ট ব্যক্তিত্বও এ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। রোডম্যাপ অনুযায়ী আলোচনার ফলাফল সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হবে না এমনটাই মনে হয়। ইসি অবশ্য বলেছে, ঘোষিত রোডম্যাপই সর্বশেষ দলিল নয়, সময়ের প্রয়োজনে ঘোষিত রোডম্যাপে পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু জামায়াতী বিএনপি এ পথে যেতে যায় না। তারা নির্বাচনের পথে পথে কাঁটা বিছিয়ে দিতে সচেষ্ট। তাদের আমলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। ভোটারদের ঘরবাড়ি পোড়ানো হয়েছে। ক্ষমতায় থেকে ১৯৯৬ সালে বেগম জিয়া যে নির্বাচন করেছিলেন, তাতে যুদ্ধাপরাধীদের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরও নির্বাচিত ঘোষণা করে সংসদে বসার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। সে অবস্থা আজ আর নেই। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির এ যুগে বিএনপির মান্ধাতা আমলের অপকর্মের আর পুনরাবৃত্তি হবে না। দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ইসিকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়ায় শামিল হওয়া। গণতান্ত্রিক দেশে ইসি এমনই শক্তিশালী যে, ভারতে মনমোহন সিং, যুক্তরাষ্ট্রে ওবামা, যুক্তরাজ্যে তেরেসা মে ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করেছেন। সেখানে কোন অর্থহীন সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়নি। বাংলাদেশে কেন হবে? বিএনপি-জামায়াতী নামক সন্ত্রাসবাদের দোসরদের আদেশ-নির্দেশে তাদের চিন্তাধারার প্রতিফলন কেন মেনে নেবে দেশবাসী? আগামী নির্বাচনের জন্য দেশবাসীর আশা-আকাক্সক্ষারই প্রতিফলন ঘটবে এবং ঘটতে বাধ্য।
×