ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুন্দরবনে দু’বছরে একটিও বাঘ মারা যায়নি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩০ জুলাই ২০১৭

সুন্দরবনে দু’বছরে একটিও বাঘ মারা যায়নি

বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে ॥ বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে বেশ জাঁকজমকভাবেই বাঘ দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। যে বাঘ নিয়ে আমাদের গর্ব সেই সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আজ করুণ দশা। তাদের একমাত্র আভাসস্থল সুন্দরবনে এখন আর নেই সেই আগের মতো বাঘের আধিক্য। পূর্ব বন বিভাগের হিসাব মতে, গত ১৭ বছরে চোরা শিকারীদের হামলায় ও নানা প্রতিকূলতায় মারা পড়েছে ৫২টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এর মধ্যে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে রয়েছে ১৯টি এবং বাকিগুলো খুলনা ও সাতক্ষীরা অংশে। তবে দেশে যে পরিমাণ বাঘই থাকুক দ্রত এর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, মিঠা পানির অভাব, বিষটোপ দিয়ে বাঘ হত্যা, বন এলাকায় নতুন জনবসতি গড়ে উঠাকে দায়ী করা হচ্ছে। এতে বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। আর এ কারণে বাঘের স্বাভাবিক চলাচলের স্থান ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। যার ফলে দিন দিন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এদিকে, বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, সুন্দরবনের বাঘ ও সম্পদ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি বন বিভাগও এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে সুন্দরবনে যে স্মার্ট টিম রয়েছে বনদস্যু ও চোরা শিকারীদের তারা রীতিমতো আতঙ্ক। এ কারণে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে একটিও বাঘ মারা যায়নি। বন বিভাগের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ১৭ বছরে ৫২টি বাঘ গ্রামবাসী, চোরা শিকারী ও বিভিন্ন ধরনের অপঘাতে মারা গেছে। মানুষের অবৈধ্য শিকার, খাবারের অভাব ও প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগের ফলে সুন্দরবনে বাঘের অস্তিত্ব কমেছে। বনের ঘনত্ব ও পারিপার্শিকতা অনুযায়ী বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে কমপক্ষে ২০০ বাঘ থাকার কথা। কিন্তু চোরা শিকারীদের বাঘ শিকার, সুন্দরবনের ভেতরের নদী দিয়ে নৌযান চলাচল এবং বনের পাশে শিল্প অবকাঠামো নির্মাণ বাঘের অস্তিত্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে সুন্দরবনে ২০০৬ সালের বাঘ শুমারির পর ২০১৫ সালের বাঘ শুমারির প্রতিবেদনে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা এসে দাঁড়ায় মাত্র ১০৬টিতে। আর ভারত-বাংলাদেশ মিলে পুরো সুন্দরবনজুড়ে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ১৭০টি যা এর আগের শুমারি থেকে ২৭০টি কম। তাই সুন্দরবন ও বনের রক্ষা কবজ হিসাবে খ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঁচাতে হলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে বলে মনে করেন সুন্দরবন বিশেজ্ঞরা। অপরদিকে সুন্দরবনের বাঘের খাবার সঙ্কট পর্যপ্ত নিরাপদ আবাসস্থল দিন দিন কমতে থাকায় বাঘ এখন লোকালয়ের দিকে বেশি ধাবিত হচ্ছে। আর এ কারণে সুন্দরবনসহ লোকালয়ে বাঘের হামলায় গত ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৮২ জন নিহত ও ৭৫ জন আহত হয়েছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সুন্দরবন গবেষক ও বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক শাহ আলম ফরাজি বলেন, চোরা শিকারী আর বনদস্যুরা তাদের পেশা পরিবর্তন করে বাঘ শিকার ও পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণে সুন্দরবনে দিন দিন বাঘের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। ২০০৬ সালের বাঘ শুমারিতে আমার থাকার সুযোগ হয়েছিল। সেই শুমারিতে ৪৫০টি বাঘ ছিল সুন্দরবনে। আর ২০১৫ সালের বাঘ শুমারিতে তা কমে ১০৬টি তে এসে দাঁড়ালো। বাকি ২৮০টি বাঘ গেল কই? তার উত্তর কিন্তু এখনও মেলেনি। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে বাঘের জন্য নিরাপদ আবাসস্থলের পাশাপাশি নেই পর্যাপ্ত খাবার। আর এ কারণেই বাঘগুলো বারবার লোকালয়ে ফিরে আসছে। আর তখই সংঘবদ্ধ চোরা শিকারীরা বাঘ হত্যা করছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষক খুলনার বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ মদিনুল আহসান জানান, সুন্দরবনে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত লোকালয়ে বাঘ হানা দিয়েছে ১২০ বার। আর এ সময়ের মধ্যে বাঘের হামলায় জেলে, বাওয়ালী, মৌয়াল, চোরা শিকারীসহ ১৮২ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে বাঘের হামলায় আরও ৭৫ জন আহত হয়েছে। পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট যে কোন অপরাধ দমনের জন্য তালিকা তৈরিসহ অপরাধীদের শনাক্ত ও আটকের জন্য পুলিশ প্রশাসনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
×