ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা পানি সম্মেলন উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী;###;রাজধানীতে নতুন খাল খনন, পুরনো খাল সংস্কার ও জলাধার সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে

’২১-এর মধ্যে নিরাপদ পানি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩০ জুলাই ২০১৭

’২১-এর মধ্যে নিরাপদ পানি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ১০০ বছর মেয়াদী ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান (বিডিপি)-২১০০’ নামে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত এই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী এক শ’ বছরে পানির প্রাপ্যতা, তার ব্যবহার এবং প্রতিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এছাড়া এই পরিকল্পনায় ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র ও পানির বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এতে সমতল, পাহাড় ও উপকূলীয় এলাকাকে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনার আওতায় নেয়া হয়েছে। শনিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে তিন দিনব্যাপী ‘ঢাকা পানি সম্মেলন- ২০১৭’র উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজির নির্ধারিত সময়সীমা ২০৩০ সালের আগেই আমরা দেশের শতভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চাই। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ২০২১ সালের মধ্যেই সকলের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে পারব ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় নতুন খাল খনন, পুরনো খাল সংস্কার, জলাধার সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ তার সরকার ভূগর্ভের পানির ব্যবহার কমিয়ে বিভাগীয় সদরে ভূ-উপরিস্থিত নিরাপদ পানি সরবরাহের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। আরও বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। অনুষ্ঠানে শিল্পকলা একাডেমির পরিকল্পনায় শিশুদের সমন্বিত নৃত্যের সঙ্গে সম্মেলনের থিম সং পরিবেশন করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে ‘বেঙ্গল ডেলটা’ শীর্ষক বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ডেল্টা কোয়ালিশনভুক্ত অঞ্চলের ২৭ দেশের অংশগ্রহণে ‘টেকসই উন্নয়নে পানি’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ওই ২৭ দেশের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ৮২ বিদেশী প্রতিনিধি অংশ নেন। সম্মেলনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি বাস্তবায়নে পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে খাদ্য নিরাপত্তাসহ এসডিজির সাতটি লক্ষ্য সামনে রেখে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী আগত বিদেশী অতিথি ও ডেলিগেশনের সদস্যদের স্বাগত জানান এবং সম্মেলনের সফলতা কামনা করেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর শতকরা ৯০ ভাগ বিপর্যয়ের জন্য পানিকে দায়ী করে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর শতকরা ৭০ ভাগই সংঘটিত হয় বন্যা এবং অন্যান্য পানিসংক্রান্ত দুর্যোগে। বিশুদ্ধ খাবার পানি শুধু আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই নয়, প্রাণিকুলেরও বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। তিনি বলেন, বিশ্বে শতকরা ১ ভাগেরও কম পানিসম্পদ পানের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। ফলে এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১শ’ কোটি মানুষের সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগর সভ্যতার ক্রমবিকাশ এবং প্রযুক্তিগত ভিন্নতায় পানি ব্যবহারের ধরন বদলেছে। তবে সুপেয় পানি প্রাপ্যতা হুমকিতে রয়েই গেছে। বিশ্বে প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ কমবেশি সুপেয় পানির সমস্যায় ভুগছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় এক শ’ সাত কোটিরও বেশি মানুষ নদী অববাহিকায় বসবাস করেও পানির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। মানুষের সৃষ্ট ৮০ শতাংশেরও বেশি অপরিশোধিত বর্জ্য পানি ও প্রকৃতিতে ফিরে গিয়ে আরও বড় আকারে পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের মোট আয়তনের এক-তৃতীয়াংশ পানি সম্পদ। আমাদের দেশের অভ্যন্তরে ৮ শতাধিক নদ-নদী ও ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরই উপলব্ধি করেছিলেন বাংলাদেশের সব ধরনের উন্নয়নের সঙ্গে নদ-নদী ও পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে পানির গুরুত্ব বুঝতে পেরে ১৯৭২ সালে আন্তঃদেশীয় সীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ‘যৌথ নদী কমিশন-জেআরসি’ গঠন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী পানি চুক্তির মাধ্যমে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করে। তিনি বলেন, নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে তার সরকার ইতোমধ্যেই বিশেষ সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে ৮৪ শতাংশ মানুষের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করার লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। ২০১৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৮৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানির আওতায় এসেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা পাচ্ছেন। অন্যদিকে দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধার আওতায় এসেছেন। এরমধ্যে শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় এসেছেন ৬১ শতাংশ মানুষ। উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগের হার গত ৮ বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়ে বর্তমানে ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ২০০৩ সালেও এই হার ছিল ৪২ শতাংশ। এ বিষয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জাতিসংঘের পানি এবং স্যানিটেশন বিষয়ক বিশেষ প্যানেলের সদস্য শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য- স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। শিল্পাঞ্চল, বসতি স্থাপনসহ সকল এলাকার জলাধার সৃষ্টি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং বর্জ্য ও দূষিত পানি নিষ্কাশন করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নাব্য হ্রাস প্রতিরোধে দেশে নদ-নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন, লবণাক্ত পানিপ্রধান এলাকায় পুকুরের পানি ফিল্টার করে লবণাক্ততা মুক্ত করা হয়েছে, ৭ হাজার পুকুর এবং গভীর কূপ খনন করা হয়েছে ৩২ হাজার ৬শ’ টি। বর্ষার পানি সংরক্ষণে ৪ হাজার ৭শ’ জলাধার তৈরি করা হয়েছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাসহ সকল বিভাগীয় শহরের নিরাপদ পানি ভূউপরিস্থ পানি থেকে নিশ্চিত করার কার্যক্রম চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন ছিল ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বের তাগিদ থেকে নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব পরিস্থিতির দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, গোটা বিশ্বে এই মুহূর্তে ২৪০ কোটি লোক স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া নিরাপদ পানির অভাবে পৃথিবীতে বছরে ১০ লাখ লোক মারা যায়, যাদের অধিকাংশই শিশু। প্রতিদিন গড়ে বিশ্বে এক হাজার শিশু বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রাণ হারায়। গত বছরের ১৫ নবেম্বর মরক্কোর মারাকাসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আমি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে পানি ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ে পৃথক ফান্ড গঠনের দাবি জানিয়েছি। বাংলাদেশকে জাতিসংঘ গঠিত নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্যানেলে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী রোল মডেল হয়ে উঠেছিল। আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দারিদ্র্যের হার ২০০৫-৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। আয় বৈষম্য হ্রাস, স্বল্প ওজন শিশুর সংখ্যা কমানো, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে লিঙ্গ সমতা অর্জনে বিশেষ সাফল্য এসেছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর হার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ৪ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া সন্তান প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে শিশুদের অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়নসহ অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বাংলাদেশ সফল হয়েছে। এসবের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা জাতিসংঘের ‘এমডিজি এ্যাওয়ার্ড’, ‘সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড’, ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’, ‘ইউনেস্কো পিস ট্রি এ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, তিন দিনব্যাপী ‘ঢাকা পানি সম্মেলন-২০১৭’, ডেল্টা সামিটের ওয়ার্কিং সেশন এবং শেরপা বৈঠকগুলোতে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা ও পয়ঃনিষ্কাশনের পথে বাধাসমূহ চিহ্নিত হবে এবং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভবিষ্যত কর্মকৌশলও বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, তার সরকার ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানির সংরক্ষণ ও ব্যবহার উপযোগী করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এসডিজি-৬ এর নির্দেশনার আগেই আমরা বিশেষ শ্রেণীর জনগোষ্ঠী যেমন শিশুদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা বিশেষ এলাকা যেমন লবণাক্ততা বা আর্সেনিকযুক্ত এলাকা, দুর্গম পাহাড়ী এলাকার জন্য বহুমুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে তৃণমূলের প্রান্তিক জনগণের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বদ্বীপ অঞ্চলে বিশ্বের শতকরা ৫ শতাংশ ভূখ- থাকলেও এখানে প্রায় ৫০ কোটি জনমানুষের বসতি। বদ্বীপ অঞ্চল অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। বিশ্বের অনেক বড় বড় শহর, বন্দর, বিখ্যাত শিল্পাঞ্চল এবং কৃষি প্রধান এলাকাও বদ্বীপ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশও একটি বদ্বীপ অঞ্চলের দেশ হওয়ায় আমাদের নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক কর্মকা-ে সমম্বয় করতে হবে। নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় বর্তমান সরকারের গৃহীত উল্লেখযোগ্য ১০টি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি নীতি ও ওয়াটার সাপ্লাই এ্যান্ড স্যানিটেশন এ্যাক্ট-২০১৪ প্রণয়ন করেছি। গত ৮ বছরে আর্সেনিক মোকাবেলায় গৃহীত দুটি প্রকল্পে সরকারের বরাদ্দ ছিল ১৪ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা। বর্তমানে এই খাত দুটিতে ৩২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান আছে। এছাড়া লবণাক্ত পানিপ্রবণ এলাকায় পুকুরের পানি ফিল্টার করে লবণাক্ততা মুক্ত করা হয়েছে ৭ হাজার পুকুর এবং গভীর কূপ খনন করা হয়েছে ৩২ হাজার ৬শ’। বর্ষায় পানি সংরক্ষণে ৪ হাজার ৭শ’ জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় নতুন খাল খনন করা হচ্ছে এবং পুরাতন খালের সংস্কার এবং জলাধার সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া নাব্য প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে আমরা বসবাস করছি। এ কারণে বাংলাদেশের জনগণ যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। শনিবার দুপুরে রাজধানীতে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ঢাকা পানি সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান ও বিশেষজ্ঞরা তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। প্রেস সচিব বলেন, প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের বাংলাদেশে আসার এখনই সর্বোত্তম সময়। কারণ, এখন বর্ষাকাল চলছে। আপনারা এখানে বর্ষা দেখতে এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে পানি বিষয়ে আপনাদের মূল্যবান মতামত দিতে পারবেন। পানি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের নদী ভাঙ্গন বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে প্রতিনিধি দলকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশসহ বিশ্বের জন্য নতুন সমস্যা সৃষ্টি করছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং খাদ্য উৎপাদন সুরক্ষায় বাংলাদেশ নিরবচ্ছিন্ন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রেস সচিব জানান, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি জ্যোতি শুক্লা বাংলাদেশের অসাধারণ সাফল্য বিশেষ করে স্যানিটেশনে সাফল্যের প্রশংসা করেন। এ সময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
×