ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্প্রেডের তেমন কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। আর ব্যাংকিং জগতে এটি বিশেষ টার্ম হিসেবে বিবেচিত, যা বাংলাদেশের মানি মার্কেটে নব্বইয়ের দশকে প্রবির্তত হয়েছে। এক্ষেত্রে আমানতের সুদের হার কিংবা ঋণের সুদের হারই হোক, দুটো নিয়ামকের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য হওয়ার সম্ভা

স্প্রেড .. মোঃ আবদুল বাকী চৌধুরী নবাব

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৩০ জুলাই ২০১৭

স্প্রেড .. মোঃ আবদুল বাকী চৌধুরী নবাব

বাংলাদেশের মানি মার্কেট সংশ্লিষ্ট তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর গ্রাহককে প্রদত্ত ঋণ এবং গৃহীত আমানতের সুদের হারের সারথি ধরে পার্থক্য ৫% এর নিচে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বার বার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার আওতাধীন তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে যে হারে ঋণ দান করে তাকে ব্যাংক হার (ইধহশ জধঃব) বলা হয়। এর মধ্যে বিনিময় বিল, প্রতিজ্ঞাপত্র ও প্রথম শ্রেণীর বিল বাট্রাকরণ ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত। স্প্রেডের তেমন কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। আর ব্যাংকিং জগতে এটি বিশেষ টার্ম হিসেবে বিবেচিত, যা বাংলাদেশের মানি মার্কেটে নব্বইয়ের দশকে প্রবির্তত হয়েছে। এক্ষেত্রে আমানতের সুদের হার কিংবা ঋণের সুদের হারই হোক, দুটো নিয়ামকের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কেননা মানি মার্কেটের নিয়ন্ত্রকসহ গণমাধ্যম চোখ কান খোলা রাখে। তথাপিও আর্থ-সামাজিক অবস্থা উপেক্ষা করার উপায় নেই। সময়ের পথ বেয়ে বিভিন্ন প্যারামিটার ভিত্তি করে সুদের হার নির্ধারণ হয়ে থাকে। যেমন- ১) সুষ্ঠু বিনিয়োগ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনুকূল অবস্থা; ২) স্থিতিশীল আর্থিক অবস্থা; ৩) পটেনসিয়াল ক্ষেত্রবিশেষ; ৪) রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা; ৫) ভেলোসিটি অব মানি; ৬) মানিটারী পলিসি; ৭) গ্লোবাল ইফেক্ট; ৮) ইত্যাদি। এ প্রেক্ষাপটে কোন একজন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ বলেছেন যে, সুদের হার কিংবা এর সঙ্গে সম্পর্কিত স্প্রেড এখন কেমন যেন দোল খাচ্ছে? কেননা বর্তমানে দেশের বিনিয়োগে হুমকির সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু বিনিয়োগ না হলে উৎপাদনশীলতা কিভাবে বাড়বে আর চারটি উৎপাদকের একই অবস্থা হবে। সোজা কথা সুষ্ঠু, কার্যকরী ও কল্যাণমূলক বিনিয়োগ আমানতের প্রদেয় সুদের হার ও ঋণ দেয়া সুদের হারের ওপর নির্ভর করে থাকে। বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান অন্তরায় হলো উচ্চ সুদের হার। আর সেটা মাথায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক বহুদিন ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলোকে তাগাদা দিয়ে আসছে এবং যুগপৎ আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য যুক্তিসঙ্গত সুদের হারের ওপর জোর দিয়ে আসছে। এতদ্ব্যতীত ঋণ এবং আমানতের সুদের হারের ব্যবধান ৫% এর নিচে নামিয়ে আনতে দফায় দফায় নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু কার কথা কে শোনে। ব্যাংকগুলো স্প্রেড না কমিয়ে বরং বাড়িয়ে চলেছে। তথ্যমতে জানা যায় যে, বিগত অর্থবছরের শেষ দিকে ২৫টি ব্যাংকের স্প্রেড ছিল ৫% এর উপরে। কেবল মাত্র বেসরকারী ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক এবং ব্যাংক অব সিলন (বিদেশী ব্যাংক) ৫% এর নিচে নামিয়ে এনেছে। তথ্যমতে আরও বাস্তবে দেখা যায় যে ৫৬টি ব্যাংকের মধ্যে ২৬টি ব্যাংকেরই স্প্রেড বেড়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, নির্দেশণা সত্ত্বেও স্প্রেড বেড়েছে ০৯%। যদিও এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেছেন যে, ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কমিয়ে দেয়া দুুঃখজনক, অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য। কেননা যারা নির্ধারিত আয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ বা অবসর ভাতা ব্যাংকে জমা রাখেন। সেক্ষেত্রে তাদের সুদের হার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া ব্যাংকগুলোর একটি অনানুষ্ঠানিক টুইলাইট সিন্ডিকেট বিদ্যমান, যা কারসাজির মাধ্যমে আমানতের সুদের হার কমাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে পরিচালনা খরচ, বাহুল্য খরচ ও কুঋণ কমাতে উদ্যোগী হতে পরামর্শ দিয়েছেন। কেননা এর ফলে প্রভিশন কস্ট কমে যাবে বিধায় কস্ট অব ফান্ড অটোমেটিক কমে আসবে। এতদ্ব্যতীত ব্যাংকগুলোর সম্পদ এবং মুনাফা দুইই বাড়বে। এই স্প্রেডের বিষয়টি স্বাভাবিক নিয়ামক মনে হলেও এর গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। কেননা এটি সব ধরনের গ্রাহক, বিশেষ করে নির্ধারিত আয়ের মানুষগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণ করে থাকে। উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকের ভিন্ন ভিন্ন সুদের হার থাকলে মানি মার্কেটে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। ফলে ছোট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাছাড়া গ্রাহকরা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে হাবুডুবু খেতে থাকে। কারণ একই ধরনের সুদের হার থাকলে সেটা মান (ঘড়ৎস) হিসেবে বিরাজ করে বিধায় তখন গ্রাহকদের আর জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় না। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় বাংলাদেশের মানি মার্কেটে শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে। প্রায় ক্ষেত্রে নৈরাজ্য চলছে; পাচারের টাকা দায়ের ক্ষেত্রে সংশয় রয়েই গিয়েছে। স্প্রেডের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বলে এক কথা। ওদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক তথ্যের মধ্যে বিরাট পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেশি হলে সুদ হার অধিক হয়ে থাকে। এদিকে সবার জন্য উপযোগী ফ্ল্যাট রেট চলমান থাকলেও অবস্থাভেদে ভাল গ্রাহককে কমসুদে ঋণ দেওয়া হয়। অবশ্য এক্ষেত্রে ওয়েটেড ইন্টারেস্ট রেট বিবেচনায় আনা বিধেয় কিনা সেক্ষেত্রেও কথা থেকে যায়। এতদ্ব্যতীত যে বিষয়টি অধিক কাজ করে থাকে, তা হলো সুদ গ্রহণ ও সুদ প্রদানের মধ্যে ভারসাম্য বজায়পূর্বক সমন্বয় সৃষ্টি, যা মানি মার্কেটের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করে থাকে। সেহেতু বস্তুনিষ্ঠ স্প্রেডের আওতায় একদিকে গ্রাহকদের অযথা ভোগান্তি পোহাতে হবে না। অন্যদিকে মানি মার্কেটের সুদের ধারাবাহিকতায় গঠনমূলক ও হিতকর বাতাস বইবে।
×