স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ব্রাদার্স ইউনিয়নের প্রথম ইউরোপিয়ান কোচ হিসেবে নিজের অভিষেকটা সেভাবে স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না ইতালিয়ান কোচ জিওভান্নি স্ক্যানু। শনিবার ‘সাইফ পাওয়ার ব্যাটারি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলের দ্বিতীয়দিনের প্রথম খেলায় (বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত) জিওভান্নির ব্রাদার্স গোলশূন্য ড্র করে টিম বিজেএমসির সঙ্গে।
‘সোনালী আঁশের দল’ খ্যাত বিজেএমসি গত লীগে হয়েছিল সপ্তম। গত লীগে তারা প্রথম সাক্ষাতে ব্রাদার্সকে রুখে দিলেও (১-১) ফিরতি ম্যাচে হেরেছিল (১-৪)। শনিবারের ম্যাচে তারা তুলনামূলক ভাল খেলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে জিততে পারেনি। সেই সঙ্গে নিতে পারেনি গত লীগে হারার বদলাটাও। ইতালিয়ান কোচ বিধায় ব্রাদার্সই ছিল এই ম্যাচের ফেভারিট। কিন্তু প্রথমার্ধে উল্টো তারাই সময় পার করে প্রচ- চাপের মুখে। কপাল ভাল ছিল বলে অন্তত দুটি গোল হজম করতে হয়নি তাদের।
গত লীগে চতুর্থ হয়েছিল ‘দ্য অরেঞ্জ ব্রিগেড’ খ্যাত ব্রাদার্স। এবার একধাপ ওপরে থাকতে চায় গোপীবাগের দলটি। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণের প্রথম ধাপেই হোঁচট খেল তারা। হারতে হারতে কোনমতে বেঁচে গেছে তারা। বিজেএমসিই বরং আক্ষেপ করতে পারে জিততে না পারায়। কোচিং স্টাইল সম্পর্কে চিরকালীন ইতালিয়ান স্টাইলই পছন্দ জিওভান্নির, ‘প্রথমে ডিফেন্স করা, তারপর আক্রমণ করা।’ প্রথমটাতে সফল হলেও পরেরটাতে সফল নয় তার দল।
খেলা শুরুর প্রথম মিনিটে বিজেএমসির নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড কিংসলে ওশিওখার বাঁ পায়ের তীব্র শট ব্রাদার্সের গোলরক্ষক কামাল হোসেন টিটু ঝাঁপিয়েও নাগাল পাননি। তবে সৌভাগ্যবশত বলটি পোস্টে লেগে ফেরত আসে। গোলবঞ্চিত হয় বিজেএমসি। ১৫ মিনিটে আরও একটা সুযোগ নষ্ট করে জাকারিয়া বাবুর শিষ্যরা। বাঁপ্রান্ত থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুনের বাড়িয়ে দেয়া বল বক্সে পান ফরোয়ার্ড শরিফুল। পোস্টের খুব কাছ থেকে শট নেন তিনি। কিন্তু তার বাঁ পায়ের শট চলে যায় ‘ছক্কা’ হয়ে, বারের অনেক ওপর দিয়ে।
২৫ মিনিটে ব্রাদার্স মিডফিল্ডার জুয়েল রানা গোল মিস করলে হতাশায় পোড়েন জিওভান্নি। ডানপ্রান্ত থেকে তার দুর্বল শট খুব সহজেই ধরে ফেলেন বিজেএমসির গোলরক্ষক সোহাগ হোসেন পলাশ। ৩৩ মিনিটে অগাস্টিন ওয়ালসনের পাসে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ফরোয়ার্ড রনি। কিন্তু তিনি শট নেয়ার আগেই দৌড়ে এসে বল নিজ আয়ত্তে নিয়ে নেন বিজেএমসির গোলরক্ষক। দ্বিতীয়ার্ধে যেন নেতিয়ে পড়ে দুই দলই। জয় নয়, ড্র করার দিকেই যেন বেশি মনোযোগী ছিল তারা। আক্রমণ করার চেয়ে নিজেদের মধ্যে বল আদান-প্রদানেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন তারা। নির্ধারিত সময়ে গোলের দেখা পায়নি কেউই। ফলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ে ব্রাদার্স-বিজেএমসি। একসময় আবাহনী ও মোহামেডানের পরেই ঘরোয়া ফুটবলের তৃতীয় শক্তি ছিল গোপীবাগের দল ব্রাদার্স। ২০০৩ এবং ২০০৪ মৌসুমে টানা দুবার প্রিমিয়ার ডিভিশন লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ লীগ শুরুর পর ছন্দ হারায়। শিরোপার দৌড়ে আর কখনই দেখা যায়নি ব্রাদার্সকে। পক্ষান্তরে বিজেএমসিও দু’বারের (১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালে চ্যাম্পিয়ন, তবে পাকিস্তান আমলে ভিন্ন নামে শিরোপা জয় আরও তিনবার) শিরোপাধারী। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে তারা বরাবরই দুর্বল। অনেকটা মাঝারি শক্তির। ব্রাদার্সের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। সে হিসেবে তাদের শনিবারের ড্র করাটা ছিল নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের।