ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিএমপির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

চুরিকে হারানো লিখতে বাধ্য করা হয় জিডিতে, প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে অপরাধ!

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৩০ জুলাই ২০১৭

চুরিকে হারানো লিখতে বাধ্য করা হয় জিডিতে, প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে অপরাধ!

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে ক্ষতিগ্রস্তকে ঘরের বাইরের চুরিকে থানার জিডিতে হারানো লিখতে বাধ্য করে পুলিশ। এমন অভিযোগ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি থানার কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারদের বিরুদ্ধে। ফলে কোন ঘটনার বিরুদ্ধে থানায় সাজানো জিডি নিয়ে পুলিশ অপরাধীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ অধর্তব্য এ অপরাধ পুলিশ কখনই খতিয়ে দেখে না। নিজেদের দায়িত্বকে এড়িয়ে যেতেই মামলা বা এজাহারের পরিবর্তে জিডি নিতে সক্রিয় থাকে থানা পুলিশ। তবে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আবার কোন ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ অভিযোগকারীকে অপরাধীদের সংখ্যাভেদে ও বিশ্লেষণে চুরির মামলায় ফেলে দিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করে। কারণ এমন ঘটনায় তদন্তে ঢিলেমির পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতদের হাজত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসারও একটি সুযোগ করে দেয় পুলিশ- এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। পুলিশের সিটিজেট চার্টার অনুযায়ী, যে কোন থানায় কোন ভুক্তভোগী গেলেই তাকে প্রাধান্য দেয়ার কথা কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারের। ক্ষতিগ্রস্তের কথা শুনে সে অনুযায়ী জিডি কিংবা মামলা রুজুর পরামর্শও কর্তব্যরত পুলিশের কাছ থেকে পাওয়ার কথা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির। পুলিশের এ সিটিজেন চার্টার সিএমপির প্রতিটি থানায় ঝোলানো থাকলেও এর ১০ ভাগও কার্যকর হয় না ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে। অভিযোগ রয়েছে, পকেটমারের কবলে পড়ে মোবাইল খোয়া গেলে সেটিও জিডিতে নথিভুক্ত হচ্ছে হারানো বলেই। মোটরসাইকেল চুরি হলে পুলিশ ক্ষতিগ্রস্তের পক্ষ থেকে হারানোর জিডি গ্রহণ করে। পুলিশের দায়িত্ব খুঁজে বের করা কিন্তু সে দায়িত্ব এড়াতেই হারানো জিডি গ্রহণ করা হয়। বস্তুত ক্ষুদ্রায়তনের জিনিসই মানুষের কাছ থেকে হারাতে পারে। তাই বলে গাড়ি চুরি হলে হারানো জিডি গ্রহণ করা বা পরামর্শ দেয়া পুলিশের বড় অপরাধ। জিডি গ্রহণ করে পুলিশ অপরাধীদের আশকারা দিচ্ছে। এদিকে, ডাকাতির মামলা হতে হলে পুলিশের হিসাব অনুযায়ী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মালামাল লুটে নিতে হবে। কিন্তু কারও অজান্তে বা ঘুমন্ত অবস্থায় গ্রিল কেটেও যদি সন্ত্রাসীরা ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে যায় পুলিশ এটিকে চুরি হিসেবেই দেখায়। এক্ষেত্রে ডাকাতির মামলায় কমপক্ষে পাঁচজন সদস্যকে দেখাতে হবে। অভিযোগকারী তার বর্ণনায় চারজনকে গৃহে প্রবেশের কথা বললেও ঘরের বাইরে থাকা অন্য সদস্যদের বিষয়ে না বললে সেক্ষেত্রে চুরি হিসেবে এজাহার নথিভুক্ত হয়। এক্ষেত্রেও পুলিশ অপরাধীদের বাঁচাতে সন্ত্রাসীদের নাম না জানলে ক্ষতিগ্রস্তদের জিডি করার পরামর্শ দেন এমনকি এ জিডির প্রেক্ষিতে বা সন্দেহজনকভাবে এলাকার কাউকে চিহ্নিত করতে পারলে তখন মামলা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ডিউটি অফিসার। পুলিশের এ ধরনের কর্মকা- মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। সিএমপির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জিডি হচ্ছে অধর্তব্য অপরাধ। জিডিকে পুলিশ গুরুত্ব দেয় না। কোন অপরাধীর বিরুদ্ধে শত জিডি হলেও লাভ নেই। জিডির মাধ্যমে অপরাধীকে উল্টো ছাড় দেয়া হয়। সিএমপির বা থানার হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ৫০টি জিডি হচ্ছে। কিন্তু এসব অপরাদীকে কখনই ধরা হয় না। জিডির কপি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অভিযোগকারীর সামনেই তদন্ত কারার নির্দেশ প্রতিনিয়ত দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দুয়েকদিন পর এগুলো ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে থাকে তদন্তকারী কর্মকর্তার টেবিলের ডেক্সে। ধর্তব্য অপরাধ হলে নিয়মিত মামলা করতে হয়। তবে মামলার হিসাব-নিকাশ উর্ধতনকে বুঝিয়ে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা পর্যায়ে তদন্তের নিয়ম থাকলেও মামলা অনুযায়ী উভয়পক্ষকে নোটিস করার মাধ্যমে সমাধা করার চেষ্টা চালায়। নগরীর থানাগুলোতে প্রতি মাসেই ভুক্তভোগীরা মামলা দায়ের করছেন। মাস শেষে উর্ধতন কর্মকর্তারা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে মামলার রিপোর্ট জানতে চাইলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই কর্মকর্তাদের ধর্তব্য অপরাধের হিসাব বুঝিয়ে দিতে হয়। এক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে দীর্ঘদিন তদন্তবিহীন অবস্থায় মামলা পড়ে থাকলে সেক্ষেত্রে অপরাধীরা পুনরায় ক্ষতিগ্রস্তদের ওপর হামলা চালানোর আশঙ্কা থাকে।
×