ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নদী-খাল দখল ॥ আটকে আছে পানি

কেশবপুরে পানিবন্দী ৫০ হাজার

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৩০ জুলাই ২০১৭

কেশবপুরে  পানিবন্দী ৫০ হাজার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, ২৯ জুলাই ॥ গত বছরের ন্যায় এবারও কেশবপুর শহরসহ পৌরসভার চারপাশের অনেক গ্রাম বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টির পানি হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদী দিয়ে বেরোতে না পারায় স্থায়ী জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে। নদী, খাল, বিল দখল করে মাছের ঘের তৈরি করায় এবং নদ-নদীতে পাটা দিয়ে পানি সরতে বাঁধার সৃষ্টি করায় বর্ষার পানি ঠিকমতো বের হতে পারছে না। জমে থাকা পানিতে গ্রামের পর গ্রাম, মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, নদী-নালা ভেসে এককার হয়ে গেছে। ৫০ হাজার পানিবন্ধী মানুষের ভেতর এক হাজার চারশ’ পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে সড়কের পাশে ও কেশবপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। সরকারীভাবে ১৩টি আশ্রয় কেন্দ্রের কথা বলা হলেও বাস্তবে আশ্রয় কেন্দ্রর সংখ্যা আরও বেশি। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দশটি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছে। সরকারীভাবে মাত্র ১৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দশদিন পার হলেও ত্রাণ মন্ত্রাণলয় থেকে এখনও কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি। গত বছরও উপজেলার ৫২টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার পরিবার জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। বৃষ্টির পানি আগে খাল-বিল ও নিচু জলাশয়ে জমা হয়ে খরগ্রোত নদ-নদী দিয়ে বেরিয়ে যেত। হালে ঘের ব্যবসায়ীদের আগ্রাসনে একদিকে যেমন উঁচু-নিচু ও সমতল ভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে মাছের ঘের অপরদিকে নদী-নালা-ব্রিজ-কালভার্টে বাঁধ দিয়ে পানি বেরোনোর পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া নদ-নদী-খাল-বিলগুলো দখল হয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, দ্রুত বন্যার পানি নিষ্কাশনের জন্য হরিহর নদী খনন করা হচ্ছে। মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি না রাখায় ভবদহে বিপর্যয় স্টাফ রিপোর্টার যশোর অফিস থেকে জানান, পানিসম্পদমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভবদহ অঞ্চলে এ বছরও বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। তারা বলছেন, এলাকা জলাবদ্ধতামুক্ত রাখতে দুটি স্কেভেটর ব্যবহারের কথা ছিল। কিন্তু একটি নির্ধারিত সময়ের পরে কাজ শুরু করে। অন্যটির কোন খবর নেই আজঅব্দি। সংগঠনটির নেতারা ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসনে অবিলম্বে পরিকল্পিত জোয়ারাধারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। শনিবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা যশোরের অভয়নগর, কেশবপুর ও মনিরামপুর এলাকায় মানবিক বিপর্যয় রোধে খাদ্য নিরাপত্তা, চিকিৎসা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, বিলকপালিয়ায় টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট/জোয়ারাধার) বাস্তবায়ন, আমডাঙ্গা খাল সংস্কার, ভবদহ স্লুুইস গেটের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝ দিয়ে সরাসরি নদী সংযোগ, হরিহর, আপারভদ্রা ও বুড়িভদ্রায় জরুরীভিত্তিতে পলি অপসারণ, সব খাল পুনরুদ্ধার ও অবমুক্ত, পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধক পাটা, জাল, শেওলা অপসারণসহ পাঁচ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, জলাবদ্ধ তিন উপজেলার ১৫০টির মতো গ্রাম, বাজারঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসল ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকার লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী, প্রধান সমন্বয়ক বৈকুণ্ঠবিহারী রায়, যুগ্ম সমন্বয়ক গাজী আব্দুল হামিদ, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক অনিল বিশ্বাস, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু, এ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিকী, ভগীরথ হালদার, অধ্যাপক কানু বিশ্বাস, শিবপদ বিশ্বাস, রাজু আহমেদ, ইলিয়াস হোসেন প্রমুখ।
×