ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পানামা পেপার্স বদলে দিল পাকিস্তানের রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৩০ জুলাই ২০১৭

পানামা পেপার্স বদলে দিল পাকিস্তানের রাজনীতি

পাকিস্তান সুপ্রীমকোর্ট প্রধানমন্ত্রীর পদে নওয়াজ শরীফকে যে অযোগ্য ঘোষণা করেছে তার ভিত্তি ছিল পানামা পেপার্সে উল্লিখিত দুর্নীতির অভিযোগ। পানামার ল ফার্ম মোসাক ফনসেকা গত বছর বিশাল সেই নথি ভা-ার ফাঁস করেছিল। ওই নথিপত্রের ভিত্তিতে এ পর্যন্ত যেসব দেশে যত আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে নওয়াজের পদত্যাগ ছিল তার মধ্যে সবচেয়ে কঠোরতম। Ñগার্ডিয়ান বিশ্বজুড়ে রাজনীতিক ও সেলিব্রেটিরা যে বেনামে যেসব ব্যবসা করছেন তার মুখোশ খুলে দিয়েছিল পানামা পেপার্স। এতে নওয়াজের নাম অবশ্য সরাসরি আসেনি। এসেছিল তার ছয় সন্তানের মধ্যে তিনজন মরিয়াম নওয়াজ, হাসান নওয়াজ ও হোসেন নওয়াজের নাম। যা হোক শেষ পর্যন্ত গদি রাখতে পারলেন না নওয়াজ। কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশে শুক্রবার তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিলেন। উল্লিখিত তিন সন্তানের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া হওয়া মামলা ন্যাশনাল এ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর কাছে পাঠাতেও নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘আর্থিক দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত নওয়াজ প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার যোগ্য নন। তিনি পার্লামেন্টের সদস্যপদের যোগ্যতাও হারিয়েছেন।’ অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার এবং মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন সফদারকেও পদে থাকার অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে আদালত। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো মেয়াদ পূর্তির আগেই পাততাড়ি গোটাতে হলো নওয়াজকে। এসব কিছুর পরও ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) বলেছে, ‘শরীফ জমানা শেষ হয়নি এখনও।’ পূর্ব-পরিকল্পনা মতো দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী যে নওয়াজের ভাই শাহবাজ হচ্ছেন, সেই দিকেই জোরালো ইঙ্গিত দিয়েছে পিএমএল-এন। ২০১৬ সালে পানামা নথি প্রকাশ্যে আসার পরেই হইহই শুরু হয়। বহু দেশের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির গোপন সম্পত্তির ফাঁস হওয়া তালিকায় নাম ছিল পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ ও তাঁর পরিবারের। অভিযোগ অস্বীকার না করলেও শরীফের দাবি, পারিবারিক ব্যবসা সূত্রেই বিদেশে ওইসব সম্পত্তির মালিক তাঁর দুই ছেলে হাসান, হোসেন ও মেয়ে মরিয়ম। তবে সেই যুক্তি উড়িয়ে তদন্ত চেয়েছিল সুপ্রীমকোর্টে যায় প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। এ বছর এপ্রিলে সুপ্রীমকোর্ট জানায়, নওয়াজকে বরখাস্ত করা হবে না। তাঁর বিরুদ্ধে ‘যথেষ্ট প্রমাণ’ মেলেনি বলেই এ কথা জানিয়েছিল আদালত। তবে অভিযোগের সারবত্তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্তকারী দল গঠনের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সম্প্রতি সেই রিপোর্ট পেশ করে তদন্তকারী দল জানিয়েছে, শরীফ পরিবারের যা উপার্জন, তার সঙ্গে তাঁেিদর সম্পত্তির পরিমাণ ও জীবনযাত্রার মান সঙ্গতিপূর্ণ নয়। রায়ের পরে মচকালেও ভাঙ্গেননি শরীফ-কন্যা মরিয়ম। নওয়াজের জন্য আইনী প্রতিকার সীমিত পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮৪-৩ অনুসারে পানামা পেপার্স মামলায় সুপ্রীমকোর্টের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য আইনী প্রতিকার সীমিত। তারা রায়ের বিরুদ্ধে একটি রিভিউ আবেদন করবেন বলে প্রত্যাশা করছেন। পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে অযোগ্য হওয়ায় শরীফ আনুষ্ঠানিকভাবে আর পাকিস্তান মুসলিম লীগ বা পিএমএল এন-এর প্রধান থাকতে পারেন না। কারণ পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডার ২০০২-এর সেকশন ফাইভে উল্লেখ রয়েছে- কেউ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হলে তিনি কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান হতে বা থাকতে পারবেন না। ক্ষমতাসীন দল পার্লামেন্টের নেতা হিসেবে শরীফের উত্তরসসূরি মনোনয়নের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। দলটিকে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দলের জন্য নতুন সভাপতিও নির্বাচিত করতে হবে। এটা স্পষ্ট যে, আগামী সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগে ৪ জুন দল এর পুরো মেয়াদ পূর্ণ করবে। আপোসহীন ক্ষমতাসীন পিএমএল-এন কোর্ট ইনজাংশনের পর আইনগত ও রাজনৈতিক ফ্রন্ট দুদিক থেকেই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। পরিণতি যাই হোক, দল আগ্রাসী মনোভাব অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পিএমএল-এন মনে করে, নওয়াজ শরীফকে যে কারণে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে তা একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য জোরালোভাবে যথেষ্ট নয়।
×