অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় নারীর সার্বিক অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মতো। কৃষি এবং শিল্পক্ষেত্রে নারীর যুগান্তকারী ভূমিকা দেশের অর্থনীতির ব্যবস্থাকে যেভাবে গতিশীল করেছে, সেটা যেমন সময়ের দাবি মেটাচ্ছে, একইভাবে নারীকে স্বাবলম্বীও করে যাচ্ছে। আত্মনির্ভরশীল নারীরা নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করছে উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে। পাশাপাশি এসবের অনুষঙ্গ হিসেবে নারীরা নানান সমস্যার আবর্তেও পড়ছে নিয়মিত। তার মধ্যে প্রথম এবং প্রধান সমস্যাই হলো স্থায়ী এবং নিরাপদভাবে কোন আবাসনে নিজের জায়গা করে নেয়া। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে কর্মজীবী নারীদের বসবাস এক প্রকার বিপত্তির পর্যায়েই পড়ে। নিজের কর্মস্থলের জায়গায় কোন নারীর থাকার সংস্থান সব থেকে বেশি জরুরী। নিজস্ব আবাসস্থল থাকলে যাতায়াতের যত অসুবিধাই হোক সেটা কোন রকমে পুষিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু যদি তাকে অন্য ব্যবস্থা করতে হয়, তাহলে বিপাকে পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। কর্মজীবী মেয়েদের জন্য সরকারী-বেসরকারী আবাসস্থল থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি নগণ্য। সরকারী মহিলা অধিদফতর এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে কিছু কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল তৈরি করে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি নির্মাণাধীন পর্যায়ে আছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার মতিঝিল, দিলকুশা, ফার্মগেট, গুলশান, বনানী, উত্তরাÑ এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা অনেক হলেও তাদের আবাসন সঙ্কট প্রকট। এমনিতে নারীদের হাজারও সামাজিক অব্যবস্থার সঙ্গে লড়াই করে নিজের কর্মস্থলে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে হয়। তার ওপর আবাসিক সমস্যার বিপাকে পড়ে তাকে হতে হয় আরও নাজেহাল। যেসব কর্মজীবী মহিলা আবাসিক হোস্টেলে নিজেদের জায়গা করে নেয়, সেখানেও রয়েছে নানাবিধ সঙ্কট। প্রথমেই নারী হিসেবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় তাকে। আবাসনের মানও এতই খারাপ যে সেখানে ভদ্রভাবে নিজেদের মানিয়ে নেয়া অনেকের পক্ষে কষ্টকর।
তবে মহিলা অধিদফতর সরকারীভাবে নারীদের আবাসিক সমস্যার দিকে বিশেষ নজর দিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আবাসিক ভবনসংলগ্ন ‘শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র’ স্থাপনের প্রচেষ্টাও চালানো হচ্ছে। সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক নারী শ্রমিকের জন্য ৭৪৪ সিটের হোস্টেল নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। যদিও আসন সংখ্যা অপর্যাপ্ত। তা ছাড়া এখানে আরও একটি আবাসিক ভবন তৈরি করা হচ্ছে পোশাক নারী শ্রমিকদের জন্য। গাজীপুর, খিলগাঁও এবং মিরপুরেও কর্মজীবী মহিলাদের জন্য হোস্টেল তৈরির কার্যক্রম চলছে। এরপরেও কর্মজীবী মহিলাদের আবাসন সঙ্কট কাটানো যাবে না। কারণ, যে সব কর্মজীবী নারী বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত থেকে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়, তাদের সংখ্যার সঙ্গে হোস্টেলের আসন সংখ্যার এতই ফারাক যে আরও নতুন নতুন প্রকল্প হাতে না নিলে এই পর্বত প্রমাণ সমস্যা নিত্যই বেড়ে চলবে।
শুধু কর্মজীবী মহিলা কেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রীদেরও হল-হোস্টেলের সমস্যা নিত্যদিনের সঙ্কট। পাবলিক কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবাসিক হল থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি সামান্য। তারপরেও একই সিটে দুজন ছাত্রী কিংবা নিচে বিছানা পেতে জায়গা করে নিয়ে সরকারী প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা কোনমতে তাদের পড়শোনার জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। আবার এর মধ্যে ঢাকার সরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের হল-হোস্টেল বলতে কিছুই নেই। আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হল তো দূরের কথা একটি পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাসও নেই। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বেসরকারী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের থাকার মতো আসলে কোন স্থান নেই। অবশ্য এক্ষেত্রে ছাত্রদেরও নেই। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক একটি বিষয়। এর পরও মহিলা অধিদফতরের মহিলাদের জন্য আবাসিক হোস্টেলের প্রকল্প অনুমোদন এবং নির্মাণ কাজ শুরু করা একটি সময়োচিত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।