ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ীদের দখলে ফুটপাথ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৯ জুলাই ২০১৭

ব্যবসায়ীদের দখলে ফুটপাথ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ নগরীর টাইল বসানো ঝকঝকে ফুটপাথ পথচারীদের কোন কাজে আসছে না। অবৈধভাবে বসানো সারি সারি দোকানপাট গিলে খেয়েছে এসব ফুটপাথ। বিশেষ করে নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনালের সামনের ফুটপাথ এখন পুরো দখলে চলে গেছে ব্যবসায়ীদের। শিরোইলের ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে দৃষ্টি দিলেই চোখে পড়বে কেবল দোকানের সারি। ছোট ছোট করে বসানো এসব দোকানে চলে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেনাবেচা। পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমি দোকানিরাও। এখানেই মওসুমজুড়ে চলে আমের রমরমা ব্যবসা। আর পশ্চিমের ফুটপাথে একরকম স্থায়ী দোকান বসে গেছে। সারাবছরই কেনাচেনা হয় পোশাক। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরকার দলীয় স্থানীয় নেতাদের তারা দৈনিক চাঁদা দেন। চাঁদা দিয়েই তারা দোকান টিকিয়ে রেখেছেন। স্থানীয় ফুটপাথ ব্যবসায়ী সবুজ হাওলাদার বলেন, আমরা গরিব মানুষ। তাই ফুটপাথে ব্যবসা করি। পেটে ভাতে খাই। তারপরেও নিয়মিত চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ফুটপাথটি দেখলে মনে হয় সাধারণের চলাচলের জন্য নয়, বরং অবৈধ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ফুটপাথ দখল করে রাখা হয়েছে। অথচ পথচারীদের চলতে হচ্ছে সড়ক দিয়ে। এতে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর রেশম গবেষণা কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে সড়কের সামনে ফুটপাথে অসংখ্য দোকান করা হয়েছে। এরমধ্যে বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ অংশের ফুটপাথ দখলে নিয়েছেন আম ব্যবসায়ী ও মুচিরা। আর পশ্চিমপাশের ফুটপাথে আছে পুরনো কাপড়ের দোকানের সারি। অস্থায়ীভাবে এসব দোকান করা হলেও টিকে আছে দীর্ঘদিন ধরে। সিটি কর্পোরেশন বারবার উচ্ছেদের হুমকি দিলেও কার্যত কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফুটপাথের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা এখানে টাকা দিয়েই ব্যবসা করছি। স্থানীয় কয়েকজন (বড়ভাই) আছেন, তাদের টাকা দিলে আর কোন সমস্যা হয় না। দোকান ভেদে টাকার পরিমাণ কম বেশি হয়ে থাকে। ছোট দোকান হলে দুইশ আর বড় দোকান হলে তিনশ টাকা প্রতিদিন দিতে হয়। কেবল বাসস্ট্যান্ড এলাকার ফুটপাথ থেকেই প্রতিমাসে চাঁদা ওঠে অন্তত ১০ লাখ টাকা বলে জানা গেছে। শুধু বাসস্ট্যান্ড এলাকা নয়, নগরীর বেশির ভাগ ফুটপাথই অবৈধ দখলে চলে গেছে। নগরীর সাহেববাজার, গণকপাড়া, লক্ষ্মীপুর, কোর্ট বাজার, তালাইমারী বাজার, কামারুজ্জামান চত্বর, গ্রেটার রোড ও বিনোদপুরসহ গোটা নগরীর ফুটপাথই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। ১২ কোটি টাকা খরচ করে টাইলস বসিয়ে উন্নতমানের দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ নির্মাণ করেছে সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু সাধারণ মানুষের কোন কাজে আসছে না। সর্বশেষ গত রমজান মাসে মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম নিজে উপস্থিত থেকে অভিযান পরিচালনা করেন এসব ফুটপাথে। ফলে রমজান মাসে সাহেববাজার ছিল অনেকটাই দখলমুক্ত। কিন্তু ধীরে ধীরে ফের হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে পুরো ফুটপাথ। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, নগরীতে ১ কোটি টাকা খরচ করে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ১ কোটি টাকার ফুটপাথ নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু ফুটপাথের ব্যবহার এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। তিনি বলেন সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেটের পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি থাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না।
×