ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অপূর্ব বনভূমি ॥ পর্যটকরা অভিভূত

বরেন্দ্রের ভূস্বর্গ বাবুডাইং

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৯ জুলাই ২০১৭

বরেন্দ্রের ভূস্বর্গ বাবুডাইং

গাছের পর গাছ। চারদিকে সবুজের ছড়াছড়ি। মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে শান্ত জলের আঁকাবাঁকা খাড়ি। কাছে এলে মন হারিয়ে যায় টিলার চূড়ায়। আর দূর থেকে তাকালে মনে হয় ঢেউখেলানো বনভূমি। ঘন সবুজ ঘাসে ঢাকা অদ্ভুত সুন্দর উঁচু-নিচু এই ভূমির তুলনাহীন সিঁড়ির মতো উচু নিচু বনভুমিতে সবুজের সমারোহ বেস্টিত স্থানটির নাম বাবুডাইং। গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার অংশ বিশেষ নিয়ে এই অপূর্ব বনভূমি। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে এই বনভূমির অবস্থান। মোট আয়তন ৯৬৬ দশমিক ৪৫ একর। তবে বনভূমির ভেতরের সমতল অংশে স্থানীয় লোকজন চাষাবাদ করেন। এগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়ে গেছে। সম্প্রতি বরেন্দ্রের অপার সৌন্দয ম-িত বাবুডাইং গিয়ে দেখা যায়, পাকা রাস্তা একেবারে বন পর্যন্ত চলে গেছে। শেষ মাথায় একটা গোলচত্বর করা হয়েছে। চারদিকে শুধু গাছ আর গাছ। কোথাও জনমানবের সাড়া নেই। গাছে গাছে পাখিদের ডাক ভেসে আসছে। গোলচত্বরটি মূল ভূখ- থেকে অনেক উঁচুতে। সেখান থেকে পূর্ব দিকের টিলার মতো উঁচু-নিচু ভূমিটিই বাবুডাইং নামে পরিচিত। ওই চত্বর থেকে তাকালে মনে হয়, ঢেউখেলানো অদ্ভুত এক বন। মাঝখানে একটা বড় খাড়ি। বাবু ডাইংয়ে যাওয়ার জন্য খাড়ির ওপরে একটি কালভার্ট তৈরি করে দেয়া হয়েছে। কালভার্ট পার হয়ে দু’পাশের ঘাসের মাঝ দিয়ে হাঁটা পথ। সেখানে দাঁড়িয়ে মনে হবে অপূর্ব এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝখানে পথহারানো এক জায়গা। খাড়ির ওপরে দক্ষিণ পাশে উঁচু গাছের মগডাল পর্যন্ত বেয়ে উঠেছে লতাগাছ। প্রকৃতি গবেষকদের মতে এমন অসাধারণ ভূসৌন্দর্য বরেন্দ্র অঞ্চলে আর দ্বিতীয়টি নেই। এটি সরকারের হাতেই রয়েছে। শুধু সংরক্ষিত ঘোষণা করতে হবে। তাহলে বরেন্দ্র ভূমিও জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পাবে। এদিকে যত দিন যাচ্ছে ততোই সবুজ বনভূমি উজাড় হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাবুডাইংয়ে যেন সবুজের মেলা বসেছে। ফাঁকা মাঠের মধ্যে এমন বনভূমি দেখে প্রাণ জুড়িয়ে আসে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাবুডাইং সুন্দর একটি পিকনিক কর্ণার হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ও কয়েক জেলার বিনোদন পিয়াসীরা পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন। তাদের পদচারণায় এলাকা মুখরিত থাকে এ এলাকা। স্থানীয়রা বরেন্দ্রর ভূস্বর্গ বাবুডাইং সংরক্ষণের দাবি জানান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলাম জানান, ঝিলিম ইউপির শেষ সিমান্তে চটিগ্রাম, বিলবলটা ও বাবুডাইং মৌজায় ৩০০ একরের বেশি আয়তনের গড়ে উঠে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানটি। এটি সরকারী সম্পত্তি। তিনি আরও জানান, বরেন্দ্র ভূমির একটি জায়গাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করতে হলে বাবু ডাইংকেই করতে হবে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ নেওয়াজ বলেন, সরকার থেকে গোদাগাড়ী উপজেলার সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্রের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তারা পর্যটনকেন্দ্রের জন্য কয়েকটি জায়গার তালিকা তৈরি করেছেন। তার মধ্যে প্রথম বাবু ডাইংয়ের নাম রয়েছে। তিনি বলেন বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য এ জায়গাটি সরকারীভাবে সংরক্ষিত করা গেলে এটি হয়ে উঠতে পারে এ অঞ্চলের সেরা বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রের অনন্য একটি বনভূমি। তিনি বলেন, এই ভূমিতে উঁচু-নিচু একাধিক টিলা ও প্রাকৃতিক ঝর্ণা থাকায় প্রাকৃতিক এই মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত পর্যটক এখানে আসেন। বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় অনেক বৃক্ষের সমাহার এখানে। যা দেখে পর্যটকরা অভিভূত হয়ে যায়। কিছু কিছু টিলায় আছে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। বাবুডাইংকে কেন্দ্র করে একটি চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে এখানে। -মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে
×