ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রাশিল্পের পেশাগত নিশ্চয়তা চাই॥ সোহেল হায়দার জসীম

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৯ জুলাই ২০১৭

যাত্রাশিল্পের পেশাগত নিশ্চয়তা চাই॥ সোহেল হায়দার জসীম

সোহেল হায়দার জসীম। বিশিষ্ট যাত্রা সংগঠক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নাট্য সংস্থার স্বত্বাধিকারী এবং বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল। যাত্রাশিল্পের উন্নয়নে কাজ করছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিতভাবে অংশ নিচ্ছেন। আগামী ৫ আগস্ট শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের দ্বিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলন এবং যাত্রাশিল্প নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। ৫ আগস্টের সম্মেলনের প্রস্তুতি কেমন? সোহেল হায়দার জসীম : আমরা বিভিন্ন এলাকার শিল্পীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। মুঠোফোনে কথা বলছি। লিফলেটও বিতরণ করছি। প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। কমিটি গঠনের আগে যাত্রাশিল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা আালোচনা করব।আমরা আশা করছি এবার আমরা শক্তিশালী একটি নতুন কমিটি উপহার দিতে পারব। সাম্প্র্রতিক যাত্রাশিল্পের অবস্থা কেমন? সোহেল হায়দার জসীম : খুব একটা ভাল না। গত মৌসুমে অনেক জেলায় যাত্রানুষ্ঠান হয়নি। ফলে দলমালিকরা যেমন পুঁজি ফেরৎ পাননি, তেমনি শিল্পীরাও চুক্তি মোতাবেক টাকা পয়সা না পাওয়ায় খুবই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তাদের। এখন বর্ষা মৌসুম। দিনরাত বৃষ্টি হচ্ছে। শিল্পীদের কাজ নেই। যাত্রাশিল্পীদের অনেকেই ঠিকমতো দুইবেলা খাওয়াও জুটছে না। মৌসুমে যদি যাত্রা প্রদর্শনের অনুমতি পাওয়া যায়, তাহলে দলগুলো ভাল চলে। মালিক-শিল্পীদের অর্থকষ্টে পড়তে হয় না। যাত্রা-নীতিমালা তো হয়েছে, অনুমতি সমস্যা কেন? সোহেল হায়দার জসীম : নীতিমালার ধারা অনুযায়ী যাত্রাদলগুলোর নিবন্ধন করবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আর যাত্রানুষ্ঠানের অনুমতি দেবে জেলা প্রশাসন। কিন্তু দু-একটি দৃষ্টান্ত ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রশাসন অনুমতি প্রদানে অনীহা প্রকাশ করে। তারা বুঝতে চান না যে, এটি একটি পেশাদারি শিল্প। এ শিল্পের ওপর হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। সঙ্কট নিরসনে করণীয় কী বলে মনে করেন? সোহেল হায়দার জসীম : যাত্রানুষ্ঠানের অবাধ অনুমতির ব্যাপারে আগেও আমরা বিভিন্ন জেলা প্রশাসনে দেন দরবার করেছি, স্মারকলিপি দিয়েছি। কোন কাজ হয়নি। এবার আমাদের জাতীয় সম্মেলনের পর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি প্রত্যেকের কাছে যাব। নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানাব। এরপরও সমাধান না হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করব। আমরা যাত্রাশিল্পীরা বানের জলে ভেসে আসিনি। আমরাও এদেশের নাগরিক। নাগরিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আমরা এই শিল্পের পেশাগত নিশ্চয়তা চাই। যাত্রাদল তিতাস নাট্য সংস্থার স্বত্বাধিকারী আপনি। যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদে যুক্ত হলেন কবে? সোহেল হায়দার জসীম : আমি অনেক আগে থেকে বিভিন্নভাবে এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি। সেক্রেটারির দায়িত্ব পাই দুই বছর আগে। এবারও কি প্রার্থী হবেন? সোহেল হায়দার জসীম : প্রার্থী হওয়া-না হওয়া বড় কথা নয়। এটা যাত্রশিল্পী ভাই-বোনদের সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি যাত্রাশিল্প নিয়ে কাজ করতে চাই। যাত্রামালিক কিংবা শিল্পীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশে প্রথম কবে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হয়? সোহেল হায়দার জসীম : ১৯৭৯ সালে আমার জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় (তখন মহকুমা শহর) প্রথম গড়ে ওঠে বাংলাদেশ যাত্রাশিল্পী-কুশলী ইউনিয়ন। ১৯৮৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ। আগামী বছর আমরা পরিষদের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করব। আর ৫ আগস্টের সম্মেলনে ৩০ বছরের সাংগঠনিক কার্যক্রম উপস্থাপন করবেন আমাদের সংগ্রামী সভাপতি মিলন কান্তি দে। সম্মেলনে এটি একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকবে। মিলন দা’ই তার দলবল নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সাংগঠনিক কর্মকা-ের মাধ্যমে প্রথম এদেশে যাত্রাশিল্প আন্দোলনের সূচনা করেন। যাত্রার নামে অশ্লীলতার অভিযোগ আছে এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? সোহেল হায়দার জসীম : বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে এবং এলাকার প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় হয়ে থাকে। মূল যাত্রাপালায় কোন অশ্লীলতা নেই। যেটা বরং কোন কোন সিনেমায় দেখা যায়। আপনাদের নিয়ে সমালোচনাও শোনা যায়? সোহেল হায়দার জসীম : সৎ ও সুন্দর মানুষ যারা, তাদেরও সমালোচনা হয়। ভাল কাজ করতে গেলে মন্দ লোকের গা জ্বালা করবেই। এরকমই হয়ে আসছে। তবে সম্মেলনে আমরা দুই বছরের কাজের জবাবদিহি করব। যাত্রাশিল্পের সামগ্রিক উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়েই এবার গঠন করা হবে দুই বছরের জন্য কার্যনির্বাহী কমিটি। যে কমিটির মূল কাজ হবে যাত্রাদল মালিক ও শিল্পীদের পেশাগত নিশ্চয়তার লক্ষ্যে অব্যাহতভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। সাজু আহমেদ
×