ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন ১ আগস্ট

বন্দর-কাস্টমস ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার প্রস্তুতি কতটুকু

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৯ জুলাই ২০১৭

বন্দর-কাস্টমস ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার  প্রস্তুতি কতটুকু

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস থেকে ॥ বিমানবন্দর দিবারাত্র ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকলে সমুদ্রবন্দর কেন নয়? বিমানবন্দরে যেমন দিনরাত উড়োজাহাজ উঠানামা করে, তেমনিভাবে সমুদ্রবন্দরেও রয়েছে দিনভর জাহাজের আসা-যাওয়া। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি, সমুদ্রবন্দর এবং কাস্টমসও সেভাবে খোলা রাখতে হবে। অবশেষে সপ্তাহের সাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম হাউস এবং বেনাপোল স্থলবন্দর খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যা আগামী ১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কার্যকর হবে। কিন্তু এ জন্য কতটা প্রস্তুত বন্দর-কাস্টমস? আর এর সুফলই বা কতটুকু পাওয়া যাবে, তা নিয়েও রয়েছে নানা মত। দেশের আমদানি রফতানি এবং অর্থনৈতিক কর্মকা- বেড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়েছে সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর এবং কাস্টমসের ওপর। দ্রুততার সঙ্গে শুল্কায়ন এবং পণ্য খালাস চান আমদানিকারকরা। বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামালগুলোর ডেলিভারি প্রয়োজন উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে। নানা কারণে দীর্ঘসূত্রতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রফতানিমুখী পোশাকশিল্প। বিজিএমইএ এবং দেশের ট্রেডবডিগুলো সপ্তাহে প্রতিদিন চব্বিশ ঘণ্টা বন্দর ও কাস্টমস চালু রাখার যে দাবি জানিয়ে আসছিল তা কার্যকর হতে যাচ্ছে সরকারের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এতেও শতভাগ সুফল মিলবে কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন খোদ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম বন্দর এবং কাস্টমসের সচলতা শুধু এ দুই সংস্থার পদক্ষেপের ওপরই নির্ভর করে না। কেননা, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, পণ্য ক্লিয়ারিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাগুলো। এর মধ্যে কোন একটি পক্ষ যদি ছুটির দিনে শুল্কায়ন এবং পণ্য ডেলিভারিতে অনাগ্রহী হয তবে প্রতিদিন খোলা রেখেও কাক্সিক্ষত ফল আসবে না, এমনই অভিমত রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্যের শুল্কায়ন হয় কাস্টম হাউসে। আমদানিকারক এবং পণ্য ক্লিয়ারিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহে অন্তত একদিন ছুটি ভোগ করতে অভ্যস্ত। এছাড়া বিভিন্ন দিবসে ছুটি রয়েছে। দীর্ঘদিনের এ অভ্যস্ততা কাটিয়ে তারা কতটা সক্রিয় হবেন বা তাদের কাছ থেকে আদৌ তেমন সহযোগিতা মিলবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান কাস্টমস। এছাড়া কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত জনবল। অর্ধেকেরও জনবল নিয়ে কাজ করছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সপ্তাহে সাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা শুল্ক ভবন খোলা রাখার সিদ্ধান্তে অস্বস্তি কাস্টমসের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীর মধ্যে। এর মধ্যে অনেকেই বদলি হওয়ার আবেদন বা ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সংস্থাপন বিভাগ সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ১৬টি ডেপুটি কমিশনার পদের মধ্যে ১৩টিই খালি। সহকারী কমিশনার থাকার কথা ৪৭ জন। আছেন মাত্র ১৩ জন। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ৪৮৭ জন থাকার কথা থাকলেও কাজ চলছে ১৭৬ জন দিয়ে। অতিরিক্ত কমিশনারের পদ ২টি, আছেন ১ জন। যুগ্ম কমিশনার ৫ জনের স্থলে দায়িত্ব পালন করছেন ৩ জন। অগ্রানোগ্রাম অনুযায়ী, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর পদ ৪২৩টি। দায়িত্বরত আছেন ১৮১ জন। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ক্ষেত্রেও জনবল সঙ্কট। থাকার কথা ১৪১ জন, অথচ আছেন ৯৪ জন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭১-৭২ সালে কাস্টম হাউসের জনবল ছিল ৯৫১। আর এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৬০ জনে। অথচ, রাজস্ব আদায় তখনকার শত কোটি টাকা থেকে বেড়ে উন্নীত হয়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকায়। শুল্কায়নের জন্য এখন প্রতিদিন বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয় গড়ে ৩ হাজারের বেশি। কাস্টম হাউসের জনবলের এ চিত্রই বলে দিচ্ছে জনবল সঙ্কট কতটা প্রকট। এ জনবল দিয়ে সপ্তাহে সাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা কাজ চালানো বড়ই কঠিন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের দাবিও উঠে এসেছে আমদানি ও রফতানিকারক এবং বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে। সরকারও আশ্বাস দিয়েছে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের। গত ২৪ জুলাই বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কাস্টম হাউস যৌথভাবে যে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন সেখানেও উঠে আসে জনবল নিয়োগের দাবি। শুধু তাই নয়, প্রয়োজন অনুযায়ী যন্ত্রপাতি সংগ্রহের মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বন্দর সম্প্রসারিত না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন ট্রেডবডি নেতৃবৃন্দ। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার এএফএম আবদুল্লাহ খান এ প্রসঙ্গে বলেন, জনবল সঙ্কট তো অবশ্যই রয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অবগত আছে। বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে। কোন বন্ধ না রেখে সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সুফল কতটুকু আসবে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি শুধু কাস্টমসের ওপরই নির্ভর করছে না। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ছুটি ভোগ করে কিংবা ছুটির দিনে যদি বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারিতে অনাগ্রহী হয় তাহলে পুরোপুরি সুফল আসবে না। তবে তিনি এও বলেন যে, ব্যবস্থাটা চালু হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিশ্চয়ই অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। সরকার যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেহেতু সীমিত জনবল নিয়েও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তা কার্যকর করবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি তিনি এও জানান যে, এতদিন ধরে সপ্তাহে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা না থাকলেও শিল্পের কাঁচামালসহ জরুরী পণ্যগুলোর শুল্কায়ন বিশেষ ব্যবস্থায় ঠিকই হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা অবশ্য বছরে দুই ঈদের দিন প্রথম শিফট বাদ দিলে সারা বছরই সচল থাকে। ডেলিভারি প্রদানের জন্যও প্রস্তুত থাকে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঈদের ছুটি থাকায় তখন আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি গ্রহণ করেন না। তাছাড়া ঈদের ছুটিতে মহাসড়কে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচলও বন্ধ থাকে। দুই ঈদের লম্বা ছুটিতে কন্টেনার নামে ঠিকই, কিন্তু ডেলিভারি না হওয়ায় ইয়ার্ডে স্তূপ পড়ে যায়। প্রতিবারই ঈদের পরে অন্তত দুই সপ্তাহ চলে যায় কন্টেনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে। সীতাকু-ের ত্রিপুরা মোঃ নুরুল করিম রাশেদ জানান, ‘সকালে বারো আউলিয়া ত্রিপুরা পল্লীর ১১ শিশু হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে জরুরী ভিত্তিতে আমরা ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য পাঠাই। তাদের শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে সুস্থ হয়ে যাওয়া শিশুগুলো জ্বরে আক্রান্ত হয়। আমি জেনেছি, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তারপর বিআইটিআইডি হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে, সুস্থ হওয়ায় পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে জানতে বিআইটিআইডি ফৌজদারহাট প্রধান ডাঃ এম এ হাসানকে একাধিকবার ফোন দিলেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলার বারো আউলিয়া ত্রিপুরা পল্লীতে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪ দিনে ৯ শিশুর মৃত্যু হয় এবং একইদিন ৩১ শিশুতে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে রোগাক্রান্ত অবস্থায় ভর্তি করা হয়।
×