ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৩৫ টাকার জন্য দশ বছরের মেয়েকে হত্যা করল বাবা!

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৯ জুলাই ২০১৭

৩৫ টাকার জন্য দশ বছরের মেয়েকে হত্যা করল বাবা!

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ২৮ জুলাই ॥ ‘বাবার পকেট থেকে ৩৫ টাকা চুরি করেছে’- এ অভিযোগে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে ১০ বছরের মেয়েকে হত্যা করেছে বাবা। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি ঘটে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মণদিয়া গ্রামে। নিহত হিরা লক্ষ্মণদিয়া গ্রামের হারুন শেখের মেয়ে।। হিরা স্থানীয় ভুষণা লক্ষ্মণদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। হিরাকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে হারুন শেখকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে হিরার নানা লিয়াকত শেখ মধুখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মণদিয়া গ্রামের ভ্যানচালক হারুন শেখ তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও প্রথম পক্ষের দু’সন্তান হিরা (১০) ও শোয়াইবকে (৭) নিয়ে বসবাস করতেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হারুন বাড়িতে এসে দেখতে পায় তার জামার পকেটে ৩৫ টাকা নেই। হিরা এই টাকা নিয়েছে বলে সন্দেহ করেন হারুন। দুপুর দুইটার দিকে হিরা স্কুল থেকে বাড়িতে এলে হারুন তাকে ঝাঁটা দিয়ে বেদম প্রহার করে। এক পর্যায়ে তিনি হিরার গলায় ওড়না পেচিয়ে ধরেন। এ অবস্থায় হিরা মারা যায়। এ ঘটনার পর হারুন পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী বিকেল ৪টার দিকে হিরাকে উদ্ধার করে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হিরাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মধুখালী থানা পুলিশ শিশু হিরার লাশটি থানায় নিয়ে আসে। বাবা কিভাবে তার বড় বোনকে হত্যা করেছে তার সাক্ষ্য দিয়েছে সাত বছরের ভাই শোয়াইব। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হারুন শেখের ছোট ছেলে শোয়াইব জানায়, বাবা বাসায় এসে আমাকে ও বোনকে ঝাঁটা দিয়ে মারতে থাকে। পরে বোনকে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস দিয়ে মেরে ফেলে। আমি অনেক কান্না করলেও বাবা বোনকে মেরে ফেলে। শোয়াইবের ভাষ্য অনুযায়ী ঘটনার সময় হারুন শেখের দ্বিতীয় স্ত্রী বাসায় থাকলেও তিনি অন্য ঘরে কাজ করছিলেন। এদিকে হিরার নানা লিয়াকত শেখ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই বাবা হারুন শেখকে আসামি করে মধুখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ মধুখালী পৌর এলাকা থেকে হারুন শেখকে গ্রেফতার করে। পুলিশের হেফাজতে থাকা হারুন সাংবাদিকদের জানান, তার মেয়ে মাঝে মধ্যেই পকেট থেকে টাকা চুরি করত। বৃহস্পতিবার তার পকেট থেকে ৩৫ টাকা চুরি করে। বাসায় আসার পর মেয়েকে টাকা চুরির কথা বললে সে অস্বীকার করে। রাগের মাথায় সে মেয়েকে পিটিয়ে এবং পরে গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশটি ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখতে গেলে লোকজন এসে পড়ায় সে পালিয়ে যায়। নওপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, হিরা ও শোয়াইব হারুনের প্রথম স্ত্রীর সন্তান। হিরার মায়ের সঙ্গে হারুনের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে হারুন আরেকটি বিয়ে করেন। হারুন দ্বিতীয় স্ত্রী ও প্রথম স্ত্রীর দুই সন্তানকে নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করতেন। সৎ মায়ের সঙ্গে হিরা ও শোয়াইবের প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ হতো। মধুখালী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রুহুল আমিন বলেন, হিরার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হিরার বাবা হারুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মেয়েকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
×