কিছুদিন আগে কলকাতা গিয়েছিলাম দুটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। যে আতিথেয়তা, যে সম্মান কলকাতা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে পেয়েছি না গেলে জীবনের একটি আলোকিত অধ্যায় অন্ধকারেই থেকে যেত। সুযোগটি করে দেবার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব কলকাতা প্রেসক্লাব সভাপতি মান্যবর ¯েœহাশীষ সুর এবং বাংলা সাহিত্যাঙ্গনের, বিশেষ করে আবহমান বাংলার ফোক লিটারেচারের সংগ্রাহক আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেনের প্রপৌত্রী ও দীনেশ চন্দ্র সেন রিচার্স সেন্টারের মধ্যমণি অধ্যাপিকা দেবকন্যা সেন ও তার সহযোগী ঝর্ণা সরকার। প্রথমজন কলকাতায় থাকেন, দ্বিতীয়জন ঢাকায়। তবে দুজনেরই নাড়ির গ্রন্থি এপারে। আমন্ত্রিত হয়ে কলকাতা যাই ১২ মে। অনুষ্ঠান দুটি হয় ১৩ ও ১৪ মে পরপর দুদিন। দুটি অনুষ্ঠানেই কলকাতার বন্ধুরা ফুলেল-ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন। এতটা আশা করিনি। যা আমার জন্য ছিল এক অভাবনীয় ব্যাপার। ব্যক্তি মুহম্মদ শফিকুর রহমান নয়, বাংলাদেশ ন্যাশনাল প্রেসক্লাব প্রেসিডেন্টকেই তারা সম্মানিত করেছেন। অবাক হয়েছি এ জন্য যে, দুটি অনুষ্ঠানেই আমি ছিলাম মধ্যমণি। আমার সফরসঙ্গী অনুজপ্রতিম সাংবাদিক বরুণ ভৌমিক এবং কল্যাণ সাহা একইভাবে সম্মানিত হয়েছেন। এক পর্যায়ে আমার বন্ধু সিনিয়র সাংবাদিক শফিকুল করিম সাবু (বেশ কিছুকাল বাসসের দিল্লী ব্যুরো চীফ হিসেবে ভারতীয় সাংবাদিকদের অনেকের কাছেই পরিচিত) সস্ত্রীক অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং একইভাবে সমাদৃত হন। ১৩ মে অনুষ্ঠিত হয় আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেনের ওপর আলোচনা। তাতে পৌরহিত্য করেন কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি শ্রী সুরেন্দ্র মল্লিক (কবি ও লেখক) এবং প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. অজিত কুমার বসু। কলকাতা প্রেসক্লাব পরদিন আয়োজন করে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী। এতে ক্লাব সভাপতি শ্রী ¯েœহাশীষ সুরের উপস্থাপনায় একমাত্র বক্তা ছিলাম আমি। এটি আমার জন্য ছিল বিরল মুহূর্ত এবং জীবনের এক সুখময় অধ্যায়।
কলকাতা থেকে ফিরেই আমার লেখা উচিত ছিল। লিখিনি। একটু দ্বিধা ছিল এ জন্য যে, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসার জন্য আবেদন করলে ৬ মাসের মাল্টিপল ভিসা দিয়েছে ঠিকই; কিন্তু ভিসার সঙ্গে লাল কালির একটি ছাপ মেরে দিয়েছে- ‘ঘড়ঃ ভড়ৎ ৎবঢ়ড়ৎঃরহম’. এই ছাপ মারায় আমার ভীষণ রাগ হয়েছিল। পেশা জীবনের ৩২ বছর কেটেছে দৈনিক ইত্তেফাকে (তখন সার্কুলেশনের দিক থেকে সর্বাধিক এবং ক্র্যাডিবিলিটির দিক থেকে এক নম্বর)। তারপর দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক জনকণ্ঠে কলাম লিখছি। মাঝে-মধ্যে কলম্বো থেকে প্রকাশিত এশিয়ান ট্রিবিউনেও লিখছি। আমার পাসপোর্টে বিশ্বের বহু দেশের ভিসা ক্লিন এন্ট্রি সীল রয়েছে, অথচ ভারতের ভিসার সঙ্গে ‘ঘড়ঃ ভড়ৎ ৎবঢ়ড়ৎঃরহম’Ñরাগ হবারই কথা। তাছাড়া কলকাতায় আমি বছরে অন্তত একবার হলেও যাই। এর কারণ আছে। আমার বাবা মরহুম মৌলভী আবদুল হালিম ছিলেন কলকাতার ভবানীপুর জগুবাজার বড় মসজিদের ইমাম-কাম-মুয়াজ্জিন। কিন্তু ভারত ভাগের মুহূর্তে কলকাতাসহ বাংলার বিভিন্ন স্থানে যে কমিউনাল রায়ট হয়েছিল তাতে আমার বাবাকেও হত্যা করা হয়েছিল। সেই রায়টকে ইতিহাসে নাম দেয়া ছিল এৎবধঃ ঈধষপঁঃঃধ শরষষরহম. আমার মৎবধঃ শব্দটিতেই ভীষণ আপত্তি। কারণ, মৎবধঃ শব্দটি ইতিবাচক অর্থেই প্রধানত ব্যবহার হয়। বরং সেই কমিউনাল রায়টের নাম দেয়া উচিত ঐড়ৎৎরভরপ ঈধষপঁঃঃধ শরষষরহম বা ‘ভয়ঙ্কর কলকাতা হত্যাকা-’।
আমি বাবা ডাকতে পারিনি কোনদিন। ডাকার মতো আমার বয়সও তখন হয়নি। আর তাই স্বাধীনতার পর বছরে একবার দু’বার যাই। বাবার সেই মসজিদে কিছু সময় অতিবাহিত করি, নামাজ পড়ি, পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করি, দোয়া করি। কখনও-সখনও বন্ধু এ্যাডভোকেট প্রিয়লাল দত্ত আমাকে সঙ্গ দেন। আমার জন্য মসজিদেরও বাইরে অপেক্ষা করেন (প্রিয় আমার ছেলেবেলার বন্ধু, লেখাপড়া ও জীবিকার প্রয়োজনে পাঁচ দশক ধরে কলকাতায় আছে)। কয়েক বছর আগে মসজিদের বাইরে গা ঘেঁষে কালী মূর্তি ছিল। কপালে সিঁদুরের লাল রং দেখা যেত। গত এক বছরের মধ্যে দু’বার গেলাম, সেই কালী মূর্তি দেখলাম না। হয়ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সেক্যুলার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কাজটি করেছেন। প্রথম থেকেই পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের প্রতি তার একটা আলাদা টান লক্ষণীয়। এতে করে কিছুটা রাজনৈতিক ঝুঁকিও তাকে হজম করতে হচ্ছে, যেমন বাংলাদেশ থেকে তাড়া খেয়ে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদী জঙ্গীরা পশ্চিম বাংলায় আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে। বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় বিস্ফোরণ এর একটি উদাহরণ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালানোর জন্য জঙ্গীরা খাগড়াগড়ে বসে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এর কয়েকদিন পরই বিস্ফোরণটি ঘটে। শেখ হাসিনার ওপর হামলার প্রস্তুতির বিষয়টি সত্যি হলে শঙ্কিত হতে হয়। আতঙ্কিত হতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেবেন আশা করি।
স্যরি, প্রসঙ্গ থেকে একটু দূরে সরে গিয়েছিলাম। অবশ্য এর কারণও আছে। এর আগে বহুবার ভারতে গিয়েছি; কিন্তু কোনবারই এমন ছাপ (ঘড়ঃ ভড়ৎ ৎবঢ়ড়ৎঃরহম) দেয়নি। এবার কেন দিল। বিশ্বের বহু দেশ ঘুরেছি, এমন ছাপ দেয়নি। আমাদের জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। কথায় কথায় প্রশ্নটি তার গোচরে আনলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তাকে বলেছিলাম ভারতের ওপর লিখতে হলে ভিসা করে যাবার দরকার নেই। তথ্য প্রযুক্তি যে পর্যায়ে গেছে এখানে বসেই সব লেখা যায়।
এবার মূল কথায় আসি। ১৩ মে আচার্য ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের ওপর আলোচনা সভাটিও হয় কলকাতা প্রেসক্লাবে। দীনেশ চন্দ্র সেন রিচার্স সোসাইটির কর্ণধার অধ্যাপিকা দেবকন্যা সেনের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক। মূল বক্তা ছিলাম আমি। মাইক হাতে নেয়ার আগ থেকেই বুক কাঁপছিল। কি বলব? লেখক গবেষক শিক্ষক কোনটাই আমি নই। সাংবাদিকতার খাতিরে কখনও কখনও তার জীবনী ও কার্যক্রম কিছুটা জানার চেষ্টা করেছি। তার মধ্যে যতটুকু মনে আছে বলে দিয়েছি। ওই যে সাংবাদিকদের বলা হয় ঔধপশ ড়ভ ধষষ ঃৎধফব, সধংঃবৎ ড়ভ হড়হব. এভাবে সাহস করলাম বক্তৃতা করতে। তাছাড়া একটা সময় ভাবছিলাম যদি বাংলা ভাগ না হতো তাহলে কেবল আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেনই নন, সাতক্ষীরার রবীন্দ্রনাথ (আদি পুরুষের বাড়ি), কিশোরগঞ্জের উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর নাতি সত্যজিৎ রায়, নিরোদ সি চৌধুরী, সিলেটের সৈয়দ মুজতবা আলী, মানিকগঞ্জের ড. অমর্ত্য সেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খান, মুন্সীগঞ্জের দেশবন্ধু সিআর দাশ, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু এই মানুষগুলোকে নিয়ে বাংলা এক থাকলে এক স্থানে স্থায়ী হতেন না। কোথাকার এক রেডক্লিভ সাহেব লাল কলমের ছুরি দিয়ে টেনে দু’ভাগ করে দিলেন।
যেদিন ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের জীবনী হাতে পেলাম দেখলাম তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, গবেষক, লোকসাহিত্য বিশারদ, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা। দেবকন্যা সেন তার বড় ঠাকুর বাবাকে আমাদের সামনে তুলে ধরে বড় একটি কাজ করলেন। দীনেশ চন্দ্র সেন কেবল শিক্ষাবিদ, গবেষক, ইতিহাসবিদই ছিলেন না, তিনি বাংলার বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে ঘুরে বাংলা সাহিত্যের যে সুপ্ত ভা-ার তুলে আনেন, তা আজ ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ নামে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অমূল্য অধ্যায় হিসেবে আছে। এই যেমন তার বেহুলা-লক্ষিন্দর, সতী মলুয়া, মহুয়া, নীল মানিক, মৈমনসিংহ গীতিকা এবং গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান, হিন্দু সমাজ ও বৈষ্ণব ধর্ম, বাঙ্গালা ভাষা ও সাহিত্য, পৌরাণিকী, বাংলার পুরনারী, বৈদিক ভারত ইত্যাদি বাংলা ভাষা সাহিত্য ও ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। দীনেশ চন্দ্র সেনের শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন পুরোটাই কেটেছে বাংলাদেশে। মৈমনসিংহ গীতিকার গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন শেষ দিন পর্যন্ত। মৈমনসিংহ গীতিকায় তার ১০টি রচনা রয়েছে বলে জানা যায়। যেমন, মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রাবতী, কমলা, দেওয়ান ভাবনা, দস্যু কেনারামের পালা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা, কাজলরেজা ও দেওয়ানা মদিনা। ধন্যবাদ জানাই দেবকন্যা সেন ও ঝর্ণা সরকারকে, তারা আমাকে এ সুযোগ না দিলে হয়তো এত কিছু জানতে পারতাম না।আগেই বলেছি, কলকাতা প্রেসক্লাবের সংবর্ধনাটি ব্যক্তি মুহম্মদ শফিকুর রহমানকে নয়, দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল প্রেসক্লাব সভাপতি শফিকুর রহমানকে। যে ব্যাপারটি আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে (ইতিবাচক অর্থে) তা হলো ক্লাব সভাপতি শ্রী ¯েœহাশীষ সুরের সঞ্চালনায় আমিই প্রধান সংবর্ধিত ব্যক্তি এবং ‘রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী’র ওপর প্রধান অতিথি ও একমাত্র বক্তা। ঘাবড়ে যাবার মতো ঘটনা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে কতটুকুইবা জানি যে, তাদের ওপর আলোচনা করব? আমি শিক্ষকও নই, গবেষকও নই, লেখকও নই, পত্রিকার রিপোর্টার এবং সমসাময়িক ঘটনার ওপর কলাম লেখক। কলকাতা প্রেসক্লাবের হল ভর্তি সাংবাদিক, প্রবীণদের সংখ্যাই বেশি। তাদের মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক সম্পাদক মানস ঘোষকেও দেখলাম সস্ত্রীক সামনের সারিতে বসা। স্বাধীনতার পর কিছুকাল ঢাকায় ছিলেন। বুক কাঁপাটা স্বাভাবিক। আমাদের জাতীয় প্রেসক্লাব হলে কাঁপত না। সঙ্গত কারণেই, কলকাতার সাংবাদিক তো। তাও আবার চুল পাকা, আধা কাঁচা। আলোচনার শুরুতে বললাম কবিগুরুর পূর্ব পুরুষদের আদি বসত ছিল সাতক্ষীরায়। কবি তাঁর জীবনের একটি বড় অংশ কাটিয়েছেন পাবনার শাহজাদপুরে, কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, রাজশাহীর পতিসরে। এই পতিসরেই রবীন্দ্রনাথ প্রথম গ্রামীণ ব্যাংক স্থাপন করেছিলেন। এর বাইরেও জমিদারী প্রয়োজনে বজরায় করে পদ্মায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। একইভাবে তৎকালীন পূর্ব বাংলা বা আজকের বাংলাদেশেই অনেক বিখ্যাত সাহিত্য রচনা করেন। যেমন একটি হলো রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত ছোট গল্প ‘পোস্টমাস্টার’ রচনা করেন শাহজাদপুরে। এখানকার কাচারী বাড়ির পাশেই ছিল পোস্ট অফিসটি। রবীন্দ্রনাথের কাচারির পেছনের দিকে একটি কাঠের সিঁড়ি ছিল। কথিত আছে ওই সিঁড়ি দিয়ে ‘রতন’ রবীন্দ্রনাথের দোতলায় আসত। অনেকে মনে করেন এখানে বসেই সেই বিখ্যাত গান ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়া তরী এই ঘাটে গো...’। কয়েক বছর আগে শাহজাদপুর কাচারি বাড়ি গিয়ে দেখলাম সেই পোস্ট অফিস ঘরটি নেই, যেটি স্বাধীনতার পরেও অনেকদিন ছিল। এমনকি পাশ দিয়ে নদী (সম্ভবত ইছামতী) বয়ে যেত তারও কোন চিহ্ন নেই। বিদ্রোহী কবিও ময়মনসিংহের ত্রিশাল হাইস্কুল থেকে শুরু করে পরবর্তীতে কুমিল্লায় বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত করেন। এখানে প্রথমে মুরাদনগরে ও পরে কুমিল্লা শহরে বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে টেকেনি। পরে কুমিল্লার কান্দির পাড়ের প্রমীলা দেবীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রমীলা দেবী নজরুলের দেয়া নাম। তার পারিবারিক নাম ছিল আশালতা সেনগুপ্ত দুলি। প্রমীলা দেবীর সঙ্গে কবির দাম্পত্য জীবনের সুখের ছিল।
অবশ্য এসব তথ্য অনেকেরই জানা। ‘রবীন্দ্র-নজরুল’ জয়ন্তীর বক্তৃতায় আমি যে দিকটা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি তা হলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে, এমনকি তারও আগ থেকে গণআন্দোলনে এই মহাকবির গান, কবিতা আমাদের পথ দেখিয়েছে। যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছে। কবিগুরুর কবিতা- ‘আমার সোনার বাংলা...’ আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। নজরুলের ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু ...’ গানটি রক্তে এখনও নাচন ধরায়। সাহস যুগিয়েছে। কবির ‘চল চল চল...’ গানটি আমাদের রণসঙ্গীত। বক্তৃতায় আমি ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এবং বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনতে তার অসামান্য অবদানের জন্য।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবৃত্তি এবং স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের গান ও রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের কবিতা আবৃত্তি হয়। পুরো অনুষ্ঠানকে সুখ-সমাপ্তি দান করেছে। তারপরও বলব স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত যখন গান গাইছিলেন তিনি নিজে একটি কী-বোর্ড বাজাচ্ছিলেন এবং মাত্র একজন তবলচী সঙ্গত করছিলেন। আমাদের এখানকার মতো কণ্ঠের দুর্বলতা ঢাকার জন্য ডজন ডজন ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করেননি। ধন্যবাদ কলকাতা প্রেসক্লাব, ধন্যবাদ ¯েœহাশীষ সুর, দেবকন্যা সেন, ঝর্ণা সরকার ও অন্যদের। ¯েœহাশীষ সুরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাব তাদের তিনজনের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘বাংলা সংবাদপত্রের ২০০ বছর’ গ্রন্থটি উপহার দেবার জন্য। আমরা দুটি প্রেসক্লাব এভাবে ভাবের আদান-প্রদানের প্রত্যাশা রাখি।
তার আগের কিছু তথ্য : কলকাতা প্রেসক্লাব এখনও টিনশেড একটি ঘর। এটি ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়- ঠিক ভারত বিভাগের দু’বছর আগে। আমাদের জাতীয় প্রেসক্লাবেরও প্রায় ১০ বছর আগে। তবু এটি সেই টিনশেড ঘরই রয়ে গেছে। শুনেছি ক্লাবের জায়গাটি নিয়ে একটা ডিসপিউট রয়েছে। আশা করব ডিসপিউট কেটে যাবে এবং মনোরম পরিবেশে একটি দর্শনীয় ভবন নির্মিত হবে।
ঢাকা ॥ ২৭ জুলাই ২০১৭
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি
জাতীয় প্রেসক্লাব
[email protected]