ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বসেছে মাত্র ৩ লাখ গ্রাহকের আঙ্গিনায়

প্রিপেইড মিটারের বিশাল পরিকল্পনা সীমিত বাস্তবায়নেই আটকা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৯ জুলাই ২০১৭

প্রিপেইড মিটারের বিশাল পরিকল্পনা সীমিত বাস্তবায়নেই আটকা

রশিদ মামুন ॥ সারাদেশে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের বিশাল পরিকল্পনা সীমিত বাস্তবায়নের মধ্যেই আটকে আছে। সারাদেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা আড়াই কোটিরও বেশি। কিন্তু প্রিপেইড মিটার বসেছে মাত্র তিন লাখ পাঁচ হাজার গ্রাহকের আঙ্গিনায়। সরকারের পরিকল্পনা বলছে ২০২০ সালের মধ্যে সকল গ্রাহকে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হবে। পরিকল্পনা গ্রহণের আড়াই বছরের বেশি সময় এর মধ্যেই শেষ হয়েছে। বাকি আড়াই বছরে আরও আড়াই কোটি গ্রাহকের আঙ্গিনায় প্রিপেইড মিটার পৌছে দেয়া সম্ভব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিদ্যুত বিভাগে জমা দেয়া অগ্রগতি প্রতিবেদনে সম্প্রতি বিতরণ কোম্পানিগুলো যে হিসেব দিয়েছে তাতে দেখা যায়, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর ৩৬ লাখ ১০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার ২১৭ জনকে দেয়া হয়েছে প্রিপেইড মিটার। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এক কোটি ৮৬ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ১০ হাজার, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এর ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৯২৯ জন গ্রাহকের মধ্যে ৪২ হাজার ২৪১, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ৭ লাখ ৯৯ হাজার ৯২২ জন গ্রাহকের মধ্যে ৫৬ হাজার ৯১০টি এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৭০২ জন গ্রাহকের মধ্যে ৩৫ হাজার ৭৯৫টি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট গ্রাহকের খুব সামান্য অংশইর ঘরেই বসেছে প্রিপেইড মিটার। বিতরণ কোম্পানিগুলোর যে পরিকল্পনা রয়েছে তাতে দেখা যায় ২০২০ এর মধ্যে আরও দুই কোটি ২ লাখ ৫১ হাজার ১৫০ জন গ্রাহকের আঙ্গিনায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। অধিকাংশ মিটার ক্রয় প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে ভবিষ্যতে বিদ্যুত বিতরণের শতভাগ প্রিপেইড মিটারে হবে। এর অর্থ হচ্ছেÑ কোটি কোটি ইউনিট বিদ্যুতের মিটার বিক্রি হবে। সঙ্গত কারণে এ ব্যবসার ভবিষ্যত বিবেচনা করে একটি সিন্ডিকেট প্রিপেইড মিটার সরবরাহে নিজেদের কোম্পানির প্রভাব বিস্তার করেছে। সাধারণত এ সিন্ডেকেটের হোতারা বিদেশী কোম্পানির দূতিয়ালি করে থাকেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এসব মিটারের বাজার উন্মুক্ত হলে আরও কম দরে মিটার পাওয়া যেত। তবে নির্দিষ্ট শ্রেণীর বাইরে কেউ দরপত্রে অংশ নিতে না পারায় প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম ধীরে চলছে। পরিকল্পনা বলছে, ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১ সালের মধ্যে পিডিবির ৪৪ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৫ জন গ্রাহক প্রিপেইড মিটার পাবেন। একই সময়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) গ্রাহকদের মধ্যে এক কোটি ১০ হাজার প্রিপেইড মিটার দেবে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ২৯ লাখ ৩২ হাজার ৮৮৪টি, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৪১টি এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ১৩ লাখ ৫৩ হাজারটি প্রিপেইড মিটার বসাবে। সব মিলিয়ে মিটার স্থাপনের জন্য ১৭টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিতরণ সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি, দাতাদের ঋণ এবং টেন্ডারারস ফিন্যান্সের মাধ্যমে এসব মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। অধিকাংশ মিটারই চীন থেকে কেনা হচ্ছে। এছাড়া দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সামান্য কিছু মিটার স্থাপন করছে। বিদ্যুত বিভাগে সব শেষ ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল অফিস করতে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। দুই বছর পর এসে গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত প্রকল্পর অগ্রগতি পর্যালোচনা করে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্পগুলো চলমান রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায় জার্মানীর উন্নয়ন ব্যাংক-কেএফডব্লিউর সহায়তায় পিডিবি এক লাখ ৫০ হাজার ৫৭৫টি প্রিপেইড মিটার কিনছে। যার কাজ চলমান রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। আর বাইরে আইডিবির অর্থায়নে ২০ লাখ মিটার কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ কাজটিও প্রক্রিয়াধীন। আরইবির ঢাকা পল্লীবিদ্যুত সমিতি-২ এবং নারায়ণগঞ্জ পল্লীবিদ্যুত সমিতির বাইরে কোন গ্রাহকে প্রিপেইড মিটার দেয়া হয়নি। এখানে মিটার লাগানো হয়েছে ৫ হাজার করে ১০ হাজার। আরইবির কেনা আরও ৫ হাজার মিটার এখনও লাগানো হয়নি। এ মিটার বসবে গাজীপুর পল্লীবিদ্যুত সমিতি এলাকায়। তবে এ কাজ চলমান রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর বাইরে এডিবির অর্থায়নে সাত লাখ মিটার স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়া চীন থেকে সরকারী পর্যায়ে আরও ৫০ লাখ মিটার কেনার বিষয়টিও প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে। ডেসকোর নিজস্ব অর্থায়নে ৯৫ হাজার মিটার কেনা হয়েছে। যেগুলো স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এর বাইরে সরকারী অর্থায়নে আরও এক লাখ মিটার কেনার দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। ডিপিডিসি দুইটি প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ মিটার স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন দেখানো হচ্ছে। এর বাইরে আরও ৫ লাখ ২৫ হাজার মিটান কেনার দুটি প্রকল্পই সেই প্রক্রিয়াধীন বলেই দেখানো হচ্ছে। আর ওকোপাডিকোর ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে সরকারী অর্থায়নে তারা প্রিপেইড মিটার স্থাপন করবে। তবে সেই প্রকল্পর প্রস্তাব তৈরির কাজ করছে তারা। তবে সব শেষ প্রকাশিত একটি প্রজ্ঞাপনে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের দায় গ্রাহকের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রিপেইড মিটার স্থাপনে অর্থায়ন জটিলতা অনেক দিনের। বিশেষ করে কোন দাতা সংস্থাই প্রিপেইড মিটারের জন্য ঋণ দিতে আগ্রহ দেখায় না। এরপর বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে টাকা চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। এমনকি বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রিজার্ভ থেকে সহজ শর্তে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানায়। তবে সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
×