ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব বাঘ দিবস আজ

সর্বশেষ জরিপে দেশে বাঘের সংখ্যা ১০৬

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৯ জুলাই ২০১৭

সর্বশেষ জরিপে দেশে বাঘের সংখ্যা ১০৬

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক সময় ঘন জঙ্গলাকীর্ণ এই রাজধানীতে বসবাস করত বাঘ। ঢাকার নবাব পরিবারের লোকেরা বেগুনবাড়ী এলাকায় বাঘ শিকারে আসতেন। এছাড়া তেজগাঁও এলাকায় বাঘ থাকার তথ্য মিলেছে ইতিহাস ঘেঁটে। এখন সবই স্মৃতি। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশে শুধুমাত্র সুন্দরবন ছাড়া আর কোথাও বাঘের সন্ধান মেলে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে সুন্দরবনেও বাঘ নিরাপদ নয়। দিন যত যাচ্ছে হুমকির মুখে পড়ছে বাঘের আবাসস্থল। এ কারণে খোদ সুন্দরবনেও আশঙ্কাজনকহারে কমছে বিশ্বখ্যাত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বাঘের সর্বশেষ জরিপে দেশে বাঘের সংখ্য পাওয়া গেছে মাত্র ১০৬। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। এ উপলক্ষে সরকারী-বেসরকারীভাবে কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে র‌্যালি, আলোচনা সভা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশ থেকে যে হারে বাঘের সংখ্যা কমছে তা উদ্বেগজনক। মূলত চোরা শিকারি আর সুন্দরবনের চারদিকে উন্নয়নমূলক কর্মকা-েই বাঘের সংখ্যা কমে আসছে। পরিবেশের ভরসাম্য রক্ষা করতে হলে বাঘ রক্ষার কোন বিকল্প নেই। সুন্দরবনে যে বাঘ দেখা যায় তা বিশ্বে সুদর্শন বাঘ হিসেবে পরিচিত। এ রয়্যাল বেঙ্গলের কারণেও বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি রয়েছে। এটা বিলুপ্ত হয়ে গেলে পরিবেশগত সৌন্দর্য নষ্ট হবে। এছাড়া ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় যে সুন্দরবনের নাম রয়েছে তা থাকবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ ছিল। পঞ্চাশের দশকেও বর্তমান মধুপুর এবং ঢাকার গাজীপুর এলাকায় এ বাঘ দেখা যেত। মধুপুরে সর্বশেষ দেখা গেছে ১৯৬২ এবং গাজীপুরে ১৯৬৬ সালে। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে তিন হাজারের মতো বাঘ রয়েছে। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় উপমহাদেশে। ২০০৪ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী দেশে ৪৫০ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার থাকার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ জরিপে দেখা গেল বাঘের সংখ্যা চারভাগের একভাগে নেমে এসেছে, যা উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সুন্দরবনই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু এ প্রাণী খুব সুন্দর এবং এর চামড়া খুব মূল্যবান। তাই চোরা শিকারিদের কারণে এই প্রাণী আচ বিলুপ্তির পথে। তাছাড়া বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়া, খাবারের অভাব এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এ প্রাণী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তারা বলেন, দেশে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হলে প্রয়োজন অবৈধ শিকার বন্ধ করা ও প্রাণীদের সুরক্ষা ও সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ও ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, ‘দেশ থেকে বাঘ যে কমে যাচ্ছে, এটাই সত্য। চোরাকারবারিদের শিকার আর খাবার সঙ্কটের কারণেই বাঘ কমছে।’ বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রবণতা রোধ এবং বিপন্ন এ প্রজাতি রক্ষায় এখনই সুন্দরবনে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সব ধরনের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে স্বাধীন ‘এ্যান্টি পোচিং ইউনিট’ গঠনের দাবি জানান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশ থেকে বাঘ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো চোরা শিকার। গত কয়েক বছরে সুন্দরবনে বেশ কয়েকবার বাঘের চামড়া এবং হাড় পাওয়া গেছে, যেটা ইঙ্গিত করে যে এখনও সেখানে ‘পোচিং’ হচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে চলছে বনে বাঘের যে প্রধান খাদ্য হরিণের চোরা শিকার। বাঘ শিকারের ফলে সরাসরি বাঘের সংখ্যা কমছে। আর হরিণের চোরা শিকারের ফলে বাঘের খাদ্য কমে যাচ্ছে। বাঘের ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তারা উল্লেখ করেন, হরিণের সংখ্যা কমলে শেষ পর্যন্ত বাঘের সংখ্যা কমবে। তারা আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাঘের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রে পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে সুন্দরবনের বাঘও বিপদে পড়বে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত বাঘের খাবার এবং আবাস সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া। বাঘ রক্ষায় আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান তারা। তারা বলেন, সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। বাংলাদেশের ‘টাইগার এ্যাকশন প্ল্যান’-এ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে কী কী করতে হবে তা বলা আছে। এবার সেটার বস্তবায়ন দরকার। এ্যাকশন প্ল্যানের ব্যবস্থাপনাটা এখনও অপ্রতুল? আন্তর্জাতিকভাবে আমরা বাঘ রক্ষায় চুক্তিবদ্ধ। প্রথানমন্ত্রী বাঘ রক্ষায় ‘সেন্ট পিটার্সবার্গ ডিক্লারেশন’-এ স্বাক্ষর করেছেন। ভারতের সঙ্গেও সুন্দরবন নিয়ে চুক্তি রয়েছে। বাঘ রক্ষায় আইনও রয়েছে। এখন শুধু মাঠপর্যায়ে এর সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
×