ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ আজহারুল ইসলাম খান

আইসিডিডিআরবির প্রকৃত কথন

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২৯ জুলাই ২০১৭

 আইসিডিডিআরবির প্রকৃত কথন

আইসিডিডিআরবির মতো একটি ঐতিহ্যবাহী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করা একটি সৌভাগ্য ও গৌরবের বিষয়। আমি সচক্ষে আমাদের গবেষকদের উদ্ভাবনমূলক বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় বাস্তবমুখী ভূমিকা রাখতে দেখেছি এবং এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত যে কোন বিষয় বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বের অনেকের হৃদয়ের সঙ্গে সত্যিকার অর্থে সম্পর্কযুক্ত। তাই স্বাস্থ্য গবেষণায় নিয়োজিত বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে কোন ভ্রান্ত ধারণা দূর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন বৈশ্বিক অনুদান ও উন্নয়নমূলক কাজে অর্থায়নের মন্দার অশুভ সংকেত রয়েছে, যা আমাদের এ যাবত অর্জিত সাফল্যকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সম্প্রতি ড. ফিরোজ আহমেদ দৈনিক জনকণ্ঠে একটি লেখা লিখেছেন যেটিতে তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সেই আইসিডিডিআরবি সম্পর্কে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁর অনুভূতির বহির্প্রকাশ দেখে ভাল লেগেছে, কিন্তু লেখাটি নিছক অনুমানের ওপর ভিত্তি না করে তথ্যনির্ভর হলে আমাদের ভাল লাগত। এই লেখার পরবর্তী অংশে আমি তাঁর কিছু মন্তব্যের উত্তর দেব। আইসিডিডিআরবি ‘একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়’ নয়- ব্যাপক পরিসরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্রান্ত্রের জীবাণু-সংক্রান্ত মৌলিক গবেষণা ও কলেরা নিয়ন্ত্রণে ব্যাকটেরিও ফাজের ভূমিকা, গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাক্সিন ট্রায়াল এবং প্রধান প্রধান অসংক্রামক রোগের ওপর জনস্বাস্থ্যভিত্তিক গবেষণা। প্রথিতযশা বিজ্ঞানীসহ উদীয়মান বহু বাংলাদেশী গবেষক প্রতিনিয়ত তাঁদের গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফল বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা জার্নালে প্রকাশ করে চলেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের বেশকিছু সাম্প্রতিক সাফল্যের মধ্যে একটি হলো নব্য প্রতিষ্ঠিত জেনোমিক্স ল্যাব ? যা প্রমাণ করে আমরা আমাদের কাজের পরিধি বিস্তার করেছি ? লেখাটিতে কাজের সংকীর্ণ পরিধির দিকে যে ইঙ্গিত করা হয়েছে তা মোটেও সত্য নয়। আমাদের নির্বাহী পরিচালক বিশ্ব বিখ্যাত ভ্যাক্সিনোলজিস্ট ড. জন ক্লেমেন্সকে কিছু মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। প্রকৃতপক্ষে, তিনি আইসিডিডিআরবিতে যোগদান করার পর আর্থিক ঘাটতি কাটিয়ে উঠে আবার আন্তর্জাতিক সহায়তা পেতে শুরু করেছে। ২০১৩ সালে কানাডা, সুইডেন এবং যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থাসমূহ একটি প্রতিবেদনে কিছু বিষয় সংশোধনের ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং এর কারণে ড. ক্লেমেন্স সুষ্ঠু প্রশাসনিক কাঠামো এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রক্রিয়াগত উন্নয়নের তত্ত্বাবধান করেন। এই প্রক্রিয়ার সাফল্যের প্রমাণ বর্তমানে বিদ্যমান আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানভিত্তিক ও পেশাগত বিশ্বাসযোগ্যতা এবং ড. ক্লেমেন্স এই প্রতিষ্ঠানের হাল ধরার পর আর কোন আর্থিক সঙ্কট দেখা দেয়নি। মানবসম্পদ নিয়োগ ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু কথা বলা হয়েছে, যার উত্তরে বলা প্রয়োজন যেÑ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মতো আমাদেরও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সহকর্মী রয়েছেন। সব আন্তর্জাতিক পদ সকলের জন্য উন্মুক্ত; এসব পদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন বাংলাদেশী এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেয়া হয়ে থাকে। আরেকটি বিষয় ছিল জার্নাল অব হেলথ, পপুলেশন এ্যান্ড নিউট্রিশন যা আমরা প্রকাশ করতাম। গত বছর আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগের প্রত্যুত্তরে ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং এ বিষয়ে যারা আরও জানতে আগ্রহী তাদের জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে। আমরা আইসিডিডিআরবি ও ব্র্যাকের মধ্যকার চুক্তি এবং বিশ্ব বিখ্যাত জেমস পি. গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের (জেপিজিএসপিএইচ) বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে চাই। পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আমলে এটি এখানে স্থাপিত হয়। জেপিজিএসপিএইচ-এর নতুন স্থাপনার নির্মাণকাজ শেষ হলে তারা সেখানে স্থানান্তরিত হবে বলে জানিয়েছে। উল্লিখিত লেখাটিতে মানব নমুনার ব্যবহার ও বিদেশে প্রেরণ সম্পর্কেও সমালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আমার জানা মতে, আইসিডিডিআরবি কঠোরভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন মেনে চলে। সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোন স্যাম্পল দেশের বাইরে পাঠানো হয় না। স্যাম্পল বিদেশে পাঠানো হলেও তার একটি সেট বাংলাদেশে রাখা হয় গবেষণার প্রয়োজনে। গত কয়েক বছর স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অডিটরদের কাছ থেকে পাওয়া বহু অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং এর ওপর বাংলাদেশ সরকারসহ অন্যান্য দাতা গোষ্ঠীর আস্থা রয়েছে। এছাড়াও, অসংখ্যবার আমরা প্রশংসিত হয়েছি। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব বান-কি মুনের ব্যাপক প্রশংসা। প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলো প্রায়ই আমাদের কাজকে তুলে ধরে। সম্প্রতি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস আমাদের বিভিন্ন সাফল্যের ওপর আলোকপাত করে একটি কভার স্টোরি প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠান ‘দেউলিয়া’ হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। তবু আমরা দেখতে পাই যে, গুটিকয়েক প্রাক্তন কর্মী অবিরত অবিবেচকের মতো এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণœ করে চলেছে। এখন আমাদের সময় এসেছে প্রশ্ন করার তাঁরা কাদের জন্য কথা বলছেন। বাংলাদেশকে গর্র্বিত হওয়ার মতো কিছু দেওয়ার জন্য দিন-রাত খেটে চলা ৪ হাজারের বেশি কর্মীর জন্য, নাকি তাঁদের নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য? লেখক : প্রেসিডেন্ট, কর্মীমঙ্গল সংস্থা, আইসিডিডিআরবি
×