ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যার গ্রাস

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৯ জুলাই ২০১৭

 বন্যার গ্রাস

বর্তমানে বাংলাদেশে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেছে, তা খুবই ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে দেশের উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এবার দেশের উত্তরাঞ্চলে সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় বন্যার পানিতে অনেক এলাকা ডুবে আছে। বন্যার ফলে মানুষ আবাসস্থল হারিয়ে পথে দিন কাটাচ্ছে। তারা অনাহারে কাটাচ্ছে দিন। কৃষকরা তাদের জমির ফসল নিজের চোখে নষ্ট হতে দেখেছে। এতে তাদের চোখের জল ও বন্যার জল এক হয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীতে পদ্মার পাড় ভাঙনের ফলে মানুষ বন্যায় ছিন্নহীন হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের বন্যাও মানুষদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে। এতে সকল স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা সিলেবাসের নিয়ম অনুযায়ী পড়াশোনা করতে পারছে না। বন্যায় প্লাবিত মানুষ সরকারের কাছে ত্রাণসামগ্রী দাবি করছে। তারা ত্রাণ পেতে অপেক্ষা করে থাকে। যে কোন ত্রাণ বিতরণের সময় মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এতে সবার জন্য ত্রাণ বিতরণ করা যায় না। ফলে কিছু মানুষের দিন যাপন ভাল যাচ্ছে না। আসলে সরকারের একার পক্ষে এত ত্রাণ দেয়াও সম্ভব হয়ে ওঠে না। আগের দিনে বন্যা হলে দেশের সকল মানুষ ত্রাণ বিতরণে উৎসাহিত হতো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে বন্যার্তদের সাহায্য করত। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাহায্য করার একটি মানসিকতা গড়ে উঠত। ইদানীং মানুষ আর এসব কাজ করে না। বর্তমানে সবাই যে কোন কাজ করে দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। এখন আর কেউই স্বার্থ ছাড়া কোন কাজ করে না। দেশের এনজিওগুলোও প্রায় মৃত হয়ে পড়েছে। এরাও আগের মতো আর মানবসেবা করতে পারছে না। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এদের মধ্যে কোন পদক্ষেপ নেই। বন্যা হওয়ার ফলে দেশে জ্বর, ডায়রিয়া, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া মহামারী আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রভাব বেড়েছে। তাছাড়া, ঢাকা শহরের বৃষ্টির পানি জমে থাকায় এডিস মশার বংশ বিস্তার হয়েছে। যার কামড়ে গোটা ঢাকা শহরে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রাজত্ব করছে। চট্টগ্রাম শহর ও বিভাগে এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। এমতাবস্থায় দেশের নেতানেত্রীরা জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বর্তমানের সমস্যা সমাধানে তারা তেমন কোন পদক্ষেপই নিচ্ছেন না। তারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন বা আরও উঁচু স্থানে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা এটা জানেন না যে, জনগণের মঙ্গল করলে জনগণের ভোটেই তারা নির্বাচিত হবেন। তাই তাদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ করছি, তারা যেন বর্তমানের পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে দেশ, সমাজ ও নিজেরা অর্থনীতির দিক দিয়ে সমৃদ্ধ হবেন। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের সবাইকে বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে ওদেরকে বাঁচাতে হবে। কারণ এ দুর্যোগ মোকাবেলার দায়িত্ব সরকারের একার নয়, আমাদের সবার। প্রত্যয় কস্তা নটর ডেম কলেজ, ঢাকা
×