ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চারুকলা প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৯ জুলাই ২০১৭

চারুকলা প্রদর্শনী

সংস্কৃতি মানুষের জীবনপ্রবাহ ও গতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সুস্থ সংস্কৃতির নিরন্তর ধারা জাতিকে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পথে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যায়। সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম দিক চারুকলা। চারুকলার সমৃদ্ধ বলয়টিকে চারুশিল্পীরা বিচিত্রভাবে পূর্ণ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি তেমনই একটি চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে শিল্পকলা একাডেমিতে। বাইশতম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর এই আয়োজনটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির চারুকলা বিভাগের তত্ত্বাবধানে দ্বিবার্ষিক এই অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যবহ। জমাকৃত অনেক শিল্পকর্ম থেকে বাছাইকৃত কিছু চিত্র বিচারকদের বিবেচনায় মনোনীত হয়। সমকালীন সমাজ, বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতসহ হরেক রকম আনন্দ আর বিষাদের অনুভূতিতে চিত্রায়িত এসব নান্দনিক কর্ম কৌশল শিল্পীদের সুস্থ মননের এক অনবদ্য প্রয়াস। সেখানে সমুদ্র পাড়ে মৃত শিশু আয়লান কুর্দির স্মরণে আঁকা শিল্পকর্ম থেকে শুরু করে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিচিত্র কর্ম শিল্পীদের নিখুঁত তুলির আঁচড় কিংবা পেনসিলের স্কেচে দর্শনার্থীর সম্মুখে উন্মোচিত হয়। শিল্পীদের এসব অনুভব-অনুভূতি যেভাবে চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তোলা হয় তা সত্যিই শৈল্পিক দ্যোতনার এক জীবন্ত চালচিত্র। প্রধান অতিথির কথায় এসে যায় এ দেশের চিত্রশিল্পের পুরোধা এবং বরণ্য ব্যক্তিত্ব শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসানসহ আরও প্রথিতযশা চারুশিল্পীর সৃষ্টিকর্ম এবং এই শিল্পে তাদের অবিস্মরণীয় অবদান। তাঁরা আজও সংস্কৃতির এই বিশিষ্ট ধারার শুধু পথিকৃৎই নন, একে নিরন্তর বহন করে যাচ্ছেন। যা নতুন শিল্পীদের নানা মাত্রিকে উৎসাহ এবং উদ্দীপনায় সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে চারুশিল্পের সম্ভাবনার পথকে নিত্য নতুন ধারায় ভরিয়ে তুলবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিনিয়তই এই শিল্পের গুণগতমান এবং সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন নতুন শিল্পী এবং অনুরাগীরা এই শিল্পের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ছে যা দেশের সুস্থ সাংস্কৃতিক ধারা বিকাশে একটি শুভ যোগ। ১০ বিশিষ্ট শিল্পীকে পুরস্কার দেয়া হয়। প্রয়াত বরেণ্য শিল্পীদের শিল্পকর্ম ও প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হয়। যা দেশের ধারাবাহিক চারুশিল্প চর্চার এক বিশিষ্ট পর্যায়। ২৬ জুলাই শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী ২১ দিন ধরে চলবে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। সংস্কৃতি সচিবের বক্তব্যে উঠে আসে এই ধরনের প্রতিযোগিতামূলক প্রদর্শনী চারুশিল্পীদের ক্ষমতা আর দক্ষতাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে যা আরও নতুন শিল্পীদের উৎসাহ দানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। ‘আয়লান কুর্দির স্মরণে’ শীর্ষক শিল্পকর্মের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পান শিল্পী মোঃ হারুন অর রশিদ, যার অর্থমূল্য ২ লাখ টাকা। এ ধরনের চিত্র প্রদর্শনী শুধু শিল্পকলা একাডেমিতে সীমাবদ্ধ না রেখে সারাদেশে সম্প্রসারিত করা যায় কিনা, তা বিশেষ বিবেচনায় আনা জরুরী। অন্তত বিভাগীয় শহরগুলোতে এ রকম প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিল্পীদের একত্র করা যেতে পারে। যা দেশের সুস্থ ধারার সংস্কৃতিকে জোরালোভাবে এগিয়ে নেবে সেই প্রত্যাশা সবার।
×