ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুদ্রানীতি

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৯ জুলাই ২০১৭

মুদ্রানীতি

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারী খাতের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। উল্লেখ্য, বাজেট বাস্তবায়নে সরকার ঘোষিত আর্থিক নীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার লক্ষ্যে বছরে দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যেই ঘোষণা করা হয় মুদ্রানীতি। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে এনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘সংকোচনমূলক’ মুদ্রানীতি দিল কি নাÑ এমন একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া যৌক্তিক। তবে গবর্নর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে নতুন মুদ্রানীতির মাধ্যমে সেটা সম্ভব। আমেরিকায় বছরে আটবার মুদ্রানীতি ঘোষণা হয়। ঘোষণার আগে থেকেই এটা নিয়ে সবার মনোযোগ থাকে। ঘোষণার পর দেশের শেয়ারবাজার থেকে শুরু“ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে। বিশ্বব্যাপী সাড়া পড়ে যায়। কিন্তু আমেরিকায় বাজেট কিভাবে হলো, কখন হলো, এসব নিয়ে বেশি আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় না। বাংলাদেশে শুধু বাজেট হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়। কারণ, বাজেটে করের বিষয় থাকে। অবশ্য মুদ্রানীতি তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানে সুদের হার, বেসরকারী খাত কী পরিমাণ ঋণ পাবে, তার ঘোষণা থাকে। উন্নত দেশে মুদ্রানীতির সঙ্গে শেয়ারবাজারের ভাল সম্পর্ক আছে, তবে বাংলাদেশে তেমনটা নেই। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দুর্বল হওয়ায় মুদ্রানীতি শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করতে পারছে না। আবার দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যে বড় অঙ্কের খেলাপী ঋণ আছে, খেলাপী ঋণ অনেকটা কৃষ্ণগহ্বরের মতো। এটা অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। মুদ্রানীতির সব লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব না হলেও যদি কাছাকাছি অর্জন হয়, সেটাও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ধরে নেয়া হয়। অর্থনীতিবিদরা বার বার বলে আসছেন মুদ্রানীতি আরও ভালভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারী ব্যাংকগুলোর অদক্ষতা কমানো জরুরী। উদার মুদ্রানীতি পেতে হলে কিছু শর্ত পূরণের প্রয়োজন পড়ে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের জন্য অভ্যন্তরীণ ঋণ জোগানের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা প্রয়োজন বলে মনে করা হলেও অর্থনীতির প্রকৃত খাতে বিরাজমান ভৌত অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা নিরসন না করে অপরিমিত তারল্যস্ফীতি আনা মোটেই প্রবৃদ্ধিবান্ধব হতে পারে না। মুদ্রানীতির উদ্দেশ্য যদি হয় অর্থ সরবরাহ, তবে তা নিয়ন্ত্রণে যে হাতিয়ারগুলো রয়েছে তার মধ্যে গুণগত হাতিয়ার যেমন নৈতিকভাবে প্রভাবিত করা, রেশনিং, প্রচার ইত্যাদি কতটুকু কার্যকর সেটি নিয়ে তেমন কোন আলোচনা প্রায়শ দেখা যায় না। অথচ গুণগত দিক বিবেচনায় এগুলো প্রয়োজন এবং খেলাপী ঋণের ছোবল থেকে ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ জরুরী। ঘোষিত মুদ্রানীতি কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধিমুখী। তবে কোন খাতেই এর বড় কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না এমনটা আশা করা যায়। এটা ঠিক আগের মুদ্রানীতিগুলোতে ঋণ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি। ঋণের চাহিদা কম থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক এবার লক্ষ্যমাত্রা সমন্বয় করার পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, ঘোষিত মুদ্রানীতির আলোকে আগামী ছয় মাস অর্থনীতি ক্ষেত্রে গতিশীলতা পরিলক্ষিত হবে।
×