ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চূড়ান্ত খসড়া দেখে পুতিনের সিদ্ধান্ত

রাশিয়াসহ তিন দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বিল সিনেটেও পাস

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২৯ জুলাই ২০১৭

রাশিয়াসহ তিন দেশের বিরুদ্ধে  নিষেধাজ্ঞা বিল সিনেটেও পাস

রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিল বৃহস্পতিবার ৯৮-২ ভোটে দেশটির সিনেটে পাস হয়েছে। উভয় কক্ষে পাস হওয়ার পর বিলটি ‘নিষেধাজ্ঞা আইনের মাধ্যমে আমেরিকার শত্রুদের মোকাবেলা’ শিরোনামে একটি চূড়ান্ত খসড়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পাঠানো হবে। খবর এএফপি ও তাস। তবে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে প্রতিযোগিতামূলক লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার ভূরাজনৈতিক সুবিধাগুলো ব্যবহারের চেষ্টা করছে বলে স্পষ্ট হবে। মস্কোর বিরুদ্ধে সত্যিই যদি এমন পদক্ষেপ নেয়া হয় তবে তা গভীর অনুতাপের। কারণ এটা পরিস্থিতিকে আরও শোচনীয় ও নিরাশ করে তুলবে। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি ভ্যেইনামো নিনিসটোর সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। পুতিন বলেন, এতে ওয়াশিংটন সত্যিই প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে তার ভূরাজনৈতিক সুবিধাগুলো ব্যবহারের চেষ্টা করছে বলে জানা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল হলেও তার মিত্র দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের চেষ্টা একেবারে অগ্রহণযোগ্য। এতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আইন ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশ্বের অন্য দেশগুলো এ ঘটনায় কি প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাদের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় তারা কতটা প্রস্তুত সেখান থেকেই তা বোঝা সম্ভব হবে। পুতিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আইনের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হওয়ার পরই রাশিয়া নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানাবে। আমরা এখনও চূড়ান্ত বিলটি দেখিনি। তাই এ ব্যাপারে আমাদের মতামত উন্মুক্তই রেখে দিলাম। আন্তর্জাতিক আইন বিবেচনায় নিলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে কোন অবরোধ অবশ্যই অবৈধ।’ সম্প্রতি হোয়াইট হাউসও আভাস দিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশ তিনটির বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে। যদিও খসড়া আইনের চূড়ান্ত কপি হাতে পেলে সেটি পুনর্মূল্যায়নের পর তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানিয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব আলাদাভাবে এসেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা রুশবিরোধী নথির সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসন নির্বাহী আদেশের ভিত্তিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল নতুন বিলে তাও রাখা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৪ মার্চ ও ১৮ ডিসেম্বর প্রথম রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এরপর ২০১৫ সালের পহেলা এপ্রিল ও ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই ও ২৯ ডিসেম্বর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এসব পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সামরিক, গোয়েন্দা ও অস্ত্রশিল্প সহযোগিতায় বড় ধরনের বিধিনিষেধ আসবে। পশ্চিমা বাজারে রুশ জ্বালানি কোম্পানির সরবরাহও কমিয়ে আনা হবে। তবে মহাকাশ সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বহাল থাকবে। বিশেষভাবে রাশিয়া থেকে মহাকাশ সংস্থা নাসা যেসব উৎপাদন ও সহযোগিতা পেয়ে থাকে তা নতুন আরোপিত শাস্তির আওতা থেকে মুক্ত থাকবে। এ আইনে ব্যাঙ্কিং সম্পদ জব্দ করাসহ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ভিসা প্রত্যাখ্যানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এতে রুশ সরকারের স্বার্থে ওয়াশিংটনের সাইবার নিরাপত্তায় আঘাত হানলে নতুন নিষেধাজ্ঞার আরোপ করা যাবে। নতুন বিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাস হওয়া বেশ কয়েকটি আইনের বিষয়বস্তুও বদলে দিয়েছে। এখন থেকে বিশেষ পরিস্থিতিতে মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করা যাবে, কেবল তাকে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাব্যতার পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত হবে না। খসড়া আইনে দেখা গেছে, কার্যত এখন থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান বিধিনিষেধ পুরোপুরি অপসারণ কিংবা শিথিল করার কর্তৃত্ব থাকছে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে। কেবল কংগ্রেসের অনুমতি সাপেক্ষেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। রাশিয়া সম্পর্কিত নীতিতে বড় কোন পরিবর্তন চাইলে প্রথমে প্রেসিডেন্টকে তা সরকারের আইন প্রণয়ন শাখাকে জানাতে হবে। কংগ্রেস তখন ৩০ কিংবা ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তির পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। কিন্তু বিষয়টা পুরোপুরি নির্ভর করবে কত দ্রুত সেটি ক্যাপিটল হিলে পাঠানো হয়েছে তার ওপর। তখন রাষ্ট্রপ্রধানের মস্কো সম্পর্কিত নীতির পরিবর্তনের প্রস্তাবে কংগ্রেস হয় সায় দিবে কিংবা বাতিল করে দিবে। এখন কেবল আলাদা কোন আইন প্রণয়নের মাধ্যমেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া যাবে, নতুবা তা একেবারে অসম্ভব। তবে এমন একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে100 গেলেও প্রচুর ঘাম ঝরাতে হবে।
×