ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিপিএলে ভাল খেলে আইপিএলে দৃষ্টি মিরাজের

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৮ জুলাই ২০১৭

সিপিএলে ভাল খেলে আইপিএলে দৃষ্টি মিরাজের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (সিপিএল-টি২০) খেলতে বৃহস্পতিবার রাতে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের পথে উড়াল দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। রাত ৭টা ১০ মিনিটে উড়াল দিয়ে আজ রাতে ক্যারিবিয়ায় পৌঁছাবেন। এরপর সিপিএলে নিজ দল ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের ক্যাম্পে যোগ দেবেন। এবার প্রথমবারের মতো সিপিএলে খেলবেন মিরাজ। দেশের বাইরে প্রথম কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে খেলবেন। মিরাজ মনে করছেন সিপিএল খেলে নিজের খেলায় আরও উন্নতি ঘটানো সম্ভব। সেই সঙ্গে সিপিএলে ভাল খেলে আইপিএলে খেলায় দৃষ্টি রাখছেন মিরাজ। বৃহস্পতিবার দেশ ছাড়ার আগে এমনটিই জানালেন তিনি। বলেছেন, ‘সুযোগ তো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় তৈরি হয়। যেহেতু শাহরুখ খানের দল আছে আইপিএলে। এখানে তার দলের হয়ে আমি খেলব। যদি ভাল খেলতে পারি ভবিষ্যতে আইপিএলে সুযোগ আসতে পারে। এই মুহূর্তে আমি বলতে পারি ক্যারিবিয়ান লীগে আমি আমার শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করব। আমার পারফর্মেন্সের দিকে দল এবং বাংলাদেশের সমর্থকরা তাকিয়ে থাকবে। কারণ আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাচ্ছি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘সিপিএল আমার জন্য দারুণ একটা সুযোগ। ওখানে টি২০ লীগটা যদি আমি কাজে লাগাতে পারি আমার জন্য এবং আমার ক্যারিয়ারের জন্য অনেক ভাল হবে।’ মিরাজ খেলবেন বলিউডের ‘বাদশা’ খ্যাত শাহরুখ খানের মালিকানাধীন দল ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সে। সিপিএল শুরু হবে ৪ আগস্ট। প্রথমদিনেই মিরাজের দলের খেলা রয়েছে। সেন্ট লুসিয়া স্টার্সের বিপক্ষে লড়াই করবে মিরাজের দল ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স। অস্ট্রেলিয়া দলের ক্রিকেটার ব্রড হগের বদলে বাংলাদেশী এই অফ স্পিনার অলরাউন্ডারকে দলে টেনেছে ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স। যেদিন লীগের পর্দা উঠবে সেদিনই মিরাজের দল খেলবে। তবে পুরো টুর্নামেন্টে খেলতে পারবেন না মিরাজ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সামনে হোম সিরিজ রয়েছে। সিরিজের জন্য একটি প্রস্তুতি ম্যাচও রয়েছে। সেই প্রস্তুতি ম্যাচে মিরাজকেও থাকতে হবে। তাই ১৫ আগস্টের মধ্যে মিরাজকে দেশে ফেরত আসতে হবে। আর তাই প্রথম পাঁচ থেকে ছয়টি ম্যাচ খেলতে পারবেন মিরাজ। ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স সর্বোচ্চ ১৪ আগস্ট পর্যন্ত মিরাজকে পাবে। এমনও হতে পারে, ১২ আগস্টই হবে মিরাজের ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের সঙ্গে থাকা। এরপর দেশে চলে আসবেন মিরাজ। আর যদি অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরে না আসে, তাহলে মিরাজ পুরো লীগেই খেলতে পারবেন। ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সে মিরাজের সঙ্গে আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রাভো ভাইদ্বয় ডোয়াইন ব্রাভো ও ড্যারেন ব্রাভো, কেভন কুপার, সুনীল নারিনে, দিনেশ রামদিন, নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম, হাশিম আমলা, দক্ষিণ আফ্রিকার কলিন মুনরো, পাকিস্তানের সাড়া জাগানো লেগ স্পিনার সাদাব খান ও হামজা তারিকরা। মিরাজ মনে করেন, ‘জাতীয় দলে এক বছর টি২০ খুব বেশি একটা খেলা হয়নি। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বড় বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলে মানিয়ে নিতে পারলে দারুণ সুযোগ তৈরি হবে আমার।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘সর্বশেষ বিপিএলে রাজশাহী কিংসের হয়ে খেলেছি। যখন যেভাবে পেরেছি কন্ট্রিবিউশন করার চেষ্টা করেছি। বিপিএলের অভিজ্ঞতা এখানে অবশ্যই কাজে দেবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনেক খেলোয়াড় বিপিএলে খেলেছে। আমি ওদের সম্পর্কে জানি। মূল লক্ষ্য থাকবে বোলিংটা ভাল করার। কেননা ওরা আমাকে একজন বোলার হিসেবেই দলে নিয়েছে।’ সিপিএলে খেলে সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে টি২০ ম্যাচ রয়েছে সেই দলেও থাকতে চান মিরাজ। বলেছেন, ‘প্রত্যেকটা খেলা প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য বড় সুযোগ। ক্যারিবিয়ান এই লীগটা আমার জন্য বড় সুযোগ। এটা অনেক জাঁকজমক হয়। বিশ্বের অনেক বড় বড় খেলোয়াড় ওখানে খেলে। ওদের বিপক্ষে আমি যখন খেলব আমার মানসিক শক্তি অনেক বাড়বে। সত্যি কথা বলতে এটা অনেক সাহায্য করবে। এখানে ভাল করলে যে কোন জায়গাতেই সুযোগ হতে পারে। চেষ্টা থাকবে এখানে ভাল কিছু করার।’ ২০১৩ সালে অনুর্ধ-১৯ দলের হয়ে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলতে যান মিরাজ, সেই অভিজ্ঞতাও কাজে লাগবে বলে মনে করছেন তিনি, ‘২০১৩ সালে অনুর্ধ-১৯ দলের হয়ে আমার দারুণ অভিজ্ঞতা আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেবার আমরা সিরিজটা জিতে দেশে ফিরি। আমি ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরা হয়েছিলাম। ৭ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়েছিলাম। আমি খেলেছি গায়ানাতে, অন্য কোন জায়গাতে খেলেনি। তবে সব উইকেট প্রায় একই রকম। চেষ্টা করব এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর।’ দেশের সুনামের জন্যই সিপিএলে ভাল কিছু করতে চান মিরাজ, ‘দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলার অনুভূতিটা অন্যরকম। এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। তবে বিদেশী লীগের খেলার অনুভূতিটা ভিন্ন। কারণ আমি ওখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে খেলতে যাচ্ছি। আমি আছি, সাকিব (আল হাসান) ভাই আছে। আমরা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি। ভাল করলে সবাই বলবে বাংলাদেশের খেলোয়াড় ভাল করেছে। একজন ক্রিকেটারের জন্য এটা অত্যন্ত ভাল লাগার বিষয়।’ ২০১৩ সালে সিপিএলের প্রথম আসরে খেলেছিলেন তামিম ইকবাল। আর সাকিব আল হাসান এখন পর্যন্ত সিপিএলে দুইটি আসরে খেলেছেন। মিরাজ এবার খেলবেন। সিপিএল শুরু হওয়ার কথা ছিল ১ আগস্ট। কিন্তু এখন শুরু হচ্ছে ৪ আগস্ট। তাই মিরাজের শুরু থেকে কোন ম্যাচই হাতছাড়া হচ্ছে না। ৯ সেপ্টেম্বর ফাইনাল ম্যাচ হবে। এরআগে ৩ সেপ্টেম্বর লীগপর্ব শেষ হবে। লীগপর্বে ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের খেলা শেষ হবে ২ সেপ্টেম্বর। ৫ সেপ্টেম্বর প্লে-অফ ম্যাচ হবে। ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর দুটি এলিমিনেটর ম্যাচ হবে। যদি ত্রিনবাগো ফাইনালে ওঠে তাহলেও ১২ আগস্টের পর আর এবার ক্যারিবিয়ার দ্বীপপুঞ্জে সিপিএল খেলার উদ্দেশে পা রাখা হবে না মিরাজের। কারণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শেষ হবে ৮ সেপ্টেম্বর। যদি অস্ট্রেলিয়া না আসে তাহলে মিরাজ পুরো লীগই খেলবেন। তখন বিসিবি থেকে অনুমতি নিয়ে নেবেন। বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত বিদেশে টি২০ লীগে খেলেছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুস্তাফিজুর রহমান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ আশরাফুল ও আব্দুর রাজ্জাক। এবার মিরাজও যোগ হচ্ছেন। টি২০ লীগে এরআগেও খেলেছেন মিরাজ। তবে সেটি শুধু দেশে হওয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ বিপিএলে। আন্তর্জাতিক টি২০ মাত্র একটি খেলেছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ বছর এপ্রিলে। তাতে এ অলরাউন্ডারের খাতা শূন্য। ব্যাট হাতে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়েছেন। বল হাতে ২ ওভার বল করে ১৫ রান দিয়ে কোন উইকেটই নিতে পারেননি। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েই ইতিহাস গড়া মিরাজ সবমিলিয়ে ১৬টি টি২০ ম্যাচ খেলে আহামরি কোন সাফল্য পাননি। ৯.৮৭ গড়ে ৭৯ রান করেছেন। আর বল হাতে ১২ উইকেট নিয়েছেন। একাদশে খেলার সুযোগ পেলে সিপিএলে মিরাজ কি করেন সেদিকেই এখন সবার নজর থাকবে।
×