ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানি সামনে রেখে ৫ লাখ টন লবণ আনার অনুমতি

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৮ জুলাই ২০১৭

কোরবানি সামনে রেখে ৫ লাখ টন লবণ আনার অনুমতি

এম শাহজাহান ॥ কোরবানি সামনে রেখে ঋণপত্র খোলার ৪০ দিনের মধ্যে এবার ৫ লাখ টন অপরিশোধিত লবণ দেশে আনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে আমদানি কার্যক্রম সম্পন্ন না হলে মিলারদের আবেদন ও জামানত বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। লবণের বণ্টন পদ্ধতি ও বাজারদর নিয়ে সিন্ডিকেট চক্র কারসাজি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে প্রকৃত ও শুধু সচল মিলমালিকদের মধ্যে সমহারে লবণ বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্র মতে, কোরবানি সামনে রেখে এবার দেশে লবণের ঘাটতি অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। এই ‘ঘাটতি’ নিয়ে বড় বাণিজ্যে মাঠে নেমেছে লবণের সিন্ডিকেট চক্র। বর্তমান প্রতি কেজি লবণ ২৫-৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীসহ সারাদেশে কয়েকটি ব্র্যান্ডের প্যাকেট লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়। সম্প্রতি এসব ব্র্যান্ডের মিলমালিকরা লবণের দাম আরেক দফা বাড়ানোর জন্য ট্যারিফ কমিশনে আবেদন করেছে। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ চক্রটির কারণে দেশে লবণের দাম বেড়ে গেছে। খাবার লবণের পাশাপাশি চামড়ায় যে লবণ ব্যবহার করা হয় তাও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। জানা গেছে, সিন্ডিকেট চক্রটি এখন ৫ লাখ টন লবণ আমদানি নিয়েও নতুন যড়যন্ত্র ও কারসাজি শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সচল মিলমালিকরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছেন। আমদানি নীতিমালা (২০১৫-১৮) অনুযায়ী বিসিক ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিবন্ধিত সচল মিলমালিকদের মধ্যে সমহারে লবণ বণ্টনের ঘোষণা রয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কায়দা ও কৌশলে বণ্টন পদ্ধতির পরিবর্তন করে সিংহ ভাগ লবণ নিজেরা আমদানি করার জন্য কারসাজি করছে। অভিযোগ রয়েছে, দেশে চক্রটি লবণের মনোপলি মার্কেট তৈরি করতে চায়। এ নিয়ে বিব্রত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতর। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, কোরবানি সামনে রেখে ৫ লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বছর বন্যা, অতিবৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড় মোরার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী লবণ উৎপাদন হয়নি। এ কারণে দেশে লবণের যাতে কোন সঙ্কট তৈরি না হয় সেজন্যই সবচেয়ে বেশি লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই লবণের বণ্টন পদ্ধতির বিষয়টি আমদানি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা আমলে না নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পুরো লবণ আমদানির সুযোগ নিতে চায়। এ নিয়ে বিব্রত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। জানা গেছে, আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতর (সিসিআইই) বরাবর লবণ আমদানির জন্য আবেদন করতে হবে। গত ২৫ জুলাই রাতে এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্য আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। আর সেই লবণ নিয়ে আসতে হবে ৪০ দিনের মধ্যে। গত বছর সময়মতো লবণ না আসায় অভ্যন্তরীণ মার্কেটে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। আর এ কারণে এখনও বাড়তি দাম দিয়ে ভোক্তাদের লবণ কিনতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, লবণ সঙ্কটের কারণে গত কোরবানি ঈদে চামড়ার দাম পড়ে যায়। প্রতিটি গরুর চামড়ায় ৮ থেকে ১০ কেজি লবণের প্রয়োজন। কিন্তু উচ্চমূল্যের এই লবণ চামড়ায় কম ব্যবহার করার কারণে গত বছর বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া পচে যায়। চামড়া ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক লোকসান দেন। একই সঙ্গে ভোক্তাদেরও বাড়তি দাম দিয়ে এখন লবণ কিনতে হচ্ছে। এই বাস্তবতায় এবার লবণ আমদানির বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু জনকণ্ঠকে বলেন, লবণের সঙ্কট দূর করতেই আমদানির অনুমতি। লবণ নিয়ে কোন ধরনের কারসাজির সুযোগ নেই। অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যটির দাম যাতে আর না বাড়ে সেদিকে আমরা নজর রাখছি। সরকারী বিভিন্ন পদক্ষেপে আশা করছি, কোরবানিতেও দেশে লবণের কোন ঘাটতি হবে না। জানা গেছে, কোন কোন মিল মালিক নামে-বেনামে লবণ আমদানির জন্য একাধিক আবেদন করেছেন। যদিও গণবিজ্ঞপ্তিতে এ ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলা হয়েছে যাচাই-বাছাইয়ের পর এদের আবেদন ও জামানত বাজেয়াফত করা হবে। এছাড়া লবণ আমদানির বিষয়ে প্রাপ্ত আবেদনপত্রসমূহ বিসিক কর্তৃক প্রত্যায়নকৃত এবং শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক সুপারিশকৃত সচল লবণ মিলের তালিকার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে একজন লবণ মিলমালিক সর্বোচ্চ কত মেট্রিক টন অপরিশোধিত লবণ আমদানি করতে পারবেন তা প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্তৃক গঠিত কমিটির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। জানা গেছে, সিসিআইই থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই দেশে সক্রিয় ছোট-বড় তিন শতাধিক লবণ উৎপাদক ও প্রক্রিয়াজাত এবং আমদানিকারক তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র (এলসি) খোলার কাজের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। আমদানিকৃত লবণ এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে আনার তাগিদ দিয়েছে সরকার। এছাড়া লবণের দামও কমিয়ে আনার তাগিদ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের লবণ মিলমালিক সমিতির সভাপতি মোঃ নূরুল কবির জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশে ২২-২৫ টাকায় লবণ বিক্রি করা হচ্ছে। এটাই লবণের প্রকৃত দাম। এই দামেই সবাইকে লবণ দিতে হবে। বিসিক সূত্র জানিয়েছে, দেশে লবণের চাহিদা ১৫ দশমিক ৭৬ লাখ টন। এর বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ লাখ টন। হিসাব মতে ঘাটতি ২ দশমিক ১২ লাখ টন। আমদানির মাধ্যমে এই ঘাটতি দূর করা হবে।
×