ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল কোর্ট চালানোয় সর্বক্ষণিক ১০ জনের টিম চান ডিসিরা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৮ জুলাই ২০১৭

মোবাইল কোর্ট চালানোয় সর্বক্ষণিক ১০ জনের টিম চান ডিসিরা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) চাওয়ামাত্র পুলিশ পাঠানোর নিশ্চয়তা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পাবলিক প্রসিকিউশন সার্ভিসকে পর্যায়ক্রমে স্বাধীন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এছাড়া সাইবার সচেতনতায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা, দেশের সকল বধ্যভূমি সব একই ডিজাইনের করা, সরকারী সকল ভূমি অফিস দুর্নীতি মুক্ত করাসহ বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রীরা। তিন দিনের জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিন বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বিভিন্ন অধিবেশনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা এ কথা বলেন। এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিরা মোট ৩২১ প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। মাঠ প্রশাসনে কাজ করতে গিয়ে তারা যে সকল প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন তাও তুলে ধরেছেন এই প্রস্তাবের মাধ্যমে। সরকারের পক্ষ থেকে এর সমাধানও দেয়া হয়েছে। তবে সম্মেলনের তিন দিনই জেলা প্রশাসকরা ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনার ক্ষমতা তাদের হাতে রাখার দাবি জানিয়েছেন। শেষ দিন বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ডিসিরা জানিয়েছেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে অপর এক বিড়ম্বনা যথাসময় পুলিশ না পাওয়া। এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) চাওয়ামাত্র পুলিশ পাঠানোর নিশ্চয়তা দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে একটি কার্য-অধিবেশনের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রী। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় জেলা প্রশাসনে সর্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য ১০ জনের টিম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। এ বিষয়ে কোন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ লাইনে সব সময় পুলিশ থাকে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের জন্য তারা (ডিসি) চাওয়া মাত্র পুলিশ পাবেন। শুধু পুলিশ নয়, আনসারেরও টিম ওখানে থাকবে। পুলিশ, আনসার- যখন যাকে চাইবে জেলা প্রশাসক কিংবা তার প্রতিনিধি তাকে পাবেন। মন্ত্রী বলেন, ফাঁড়ি, নৌ-পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, শিল্প পুলিশ- এগুলো আরও বৃদ্ধি, ফায়ার সার্ভিসের আরও কয়েকটি স্টেশন নতুন করে দেয়া ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলেছেন তারা (ডিসি)। জেলখানাগুলোর আধুনিকীকরণ, মাদকের নিরাময় কেন্দ্র করা, মাদক ব্যবসায়ী যারা আত্মসমর্পণ করছেন তাদের পুনর্বাসন করা যায় কিনা- এসব বিষয়ে প্রস্তাব করেছেন তারা। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছি। জেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ডিসিদের কোন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কিনা প্রশ্নে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, তারা কোন প্রশ্ন তোলেনি। আমরা বলেছি, বাংলাদেশে এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভাল। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ভাল কাজ করছে, আমাদের গোয়েন্দারা ভাল কাজ করছে। আমরা তাদের কাছে আহ্বান করেছি সবাই মিলে কাজ করবেন। ডিসিরা যখন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজন বোধ করবেন তখন তাদের সঙ্গে একত্রে বৈঠক করে কাজের প্রতিশ্রুতি দেন মন্ত্রী। আইন মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য পাবলিক প্রসিকিউশন সার্ভিসকে পর্যায়ক্রমে স্বাধীন করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনে আইন মন্ত্রণালয় বিষয়ে আলোচনা শেষে তিনি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। আইনমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন প্রসিকিউশন সার্ভিস গঠনের বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তা একবারে করা হবে না। আমরা ‘ইন ফেইজ (পর্যায়ক্রমে) ইনডিপেনডেন্ট প্রসিকিউশন সার্ভিসটা’ করব। তার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়োগের দায়িত বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনকে দেয়া যায় কি না সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। বাংলাদেশে পাবলিক প্রসিকিউটরদের অযোগ্যতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে বিচারিক আদালতে মামলার বিচার বাধাগ্রস্ত হওয়া নিয়ে আলোচনা বহু দিনের। বর্তমান ব্যবস্থায় পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ হয় অনেকটা রাজনৈতিক বিবেচনায়। এর জন্য কোন পরীক্ষা নেই। তাদের নির্দিষ্ট মেয়াদও নেই। স্বাধীন প্রসিকিউশন সার্ভিস গঠন হলে বিচারিক আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটরদের নিয়োগ হবে স্থায়ী; যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। নির্ধারিত বেতন-ভাতাসহ সরকারী কর্মকর্তাদের মতো অন্য সুবিধাদি পাবেন তারা। আইনমন্ত্রী বলেন, জেনারেল প্রসিকিউটর (জিপি), সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ও সহকারী জেনারেল প্রসিকিউটরের (এজিপি) বেতন-ভাড়া বাড়ানোর চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, মোবাইল কোর্টের ব্যাপারটিও উঠে এসেছে। আমি মোবাইল কোর্ট সম্বন্ধে বলেছি, যে এটা এখন আপীল বিভাগে আছে। সেজন্য সুবিস্তারে আলোচনা করাটা সাবজুডিস হয়ে যাবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সাইবার ঝুঁকি এড়াতে জেলা প্রশাসকদের সরকারি ই-মেইল ব্যবহারের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম এড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষদিন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দ্বিতীয় কার্য-অধিবেশন ছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়ে। জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক সাংবাদিকদের বলেন, জেলা প্রশাসকদের সরকারি ই-মেইল ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এড়িয়ে চলতে এবং সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকরা সাইবার সচেতনায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্কুল-কলেজগুলোতে সাইবার নিরাপত্তায় সচেতনতা তৈরিতে প্রচার বা সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে। ভবিষ্যতের প্রতিটি জেলায় হাইটেক পার্ক করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকদের তাদের নিজস্ব এলাকায় হাইটেক পাকের জন্য জায়গা চিহ্নিত করে জানাতে বলা হয়েছে। একই কার্য-অধিবেশন শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, বধ্যভূমি সব একই ডিজাইনে হবে, যত জায়গায় মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে সব একই ডিজাইনে হবে, সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের কবর একই ডিজাইনে হবে। এগুলো অবহিত করেছি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ডিসিরা কোন সমস্যার কথা বলেছেন কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু জায়গায় যেগুলো হয় জমির ব্যাপারে, আমরা বলেছি অধিগ্রহণ করে নেবেন, টাকা মন্ত্রণালয় দেবে। জেলা প্রশাসকদের সুপারিশের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা মারা গেলে দাফনে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দের বিষয়টি ছিল- এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এগুলো আগেই হয়ে গেছে। ১০ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়ে গেছে। প্রস্তাব ওনাদের জানা ছিল না। এ কার্য-অধিবেশনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সরকার যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা অবহিত করেছি। আমরা যখন ক্ষমতা নিই, আট বছর আগেৃ তখন দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ডিজিটালাইজেশন ছিল। এখন সেটা ৪০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। আমরা আশা করছি এ বছর ৬০ ভাগে উন্নীত করার জন্য। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যু কেন্দ্রের সুবিধা-অসুবিধা আছে, ডিসি সাহেবদের কী সমস্যা আছে তারাও তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সেটা সমাধানের জন্য যে সমস্ত যৌক্তিক সমস্যা পূর্ণ আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ভূমি অফিসের ঘুষ দুর্নীতি বন্ধে নির্দেশ সরকারী ভূমি অফিসের ঘুষ দুর্নীতি বন্ধে জেলা প্রশাসকদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ সমাপনী দিনের প্রথম কার্য-অধিবেশন শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, যারা ঘুষ নেয় তারা তো অন্যায় করেই। যারা ঘুষ দেয় তারারও সমান অপরাধি। অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সমদহে, এটা কবি বলেছেন। এটা আমাদের ধর্মেও আছে- অন্যায়কারীকে সহযোগিতা করো না, অন্যায় মেনে নিয়ে না। শামসুর রহমান শরিফ বলেন, একজন মানুষ যখন নক্সার জন্য তহসিল অফিসে যায়, নক্সাটা পায় না। একদিন, দুইদিন, তিনদিন ঘুরে দরিদ্র মানুষ ভাবে, তিন দিনে আমার ১৫শ টাকা মজুরি লস হয়ে গেল। সে তখন পয়সা বের করে দালালের হাতে দেয়, তুমি আমার কাজটা করে দাও। পরে হয় তো দেখা যায় কোন নক্সাই নেই। এ জন্য আমরা সব কিছু ডিজিটালাইজেশন করছি। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আধুনিক ব্যবস্থা হলে কোন ঘুষ দুর্নীতি থাকবে না। ভূমি সংক্রান্ত ঘুষ-দুর্নীতি বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তাদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একেবারে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান শামনামলে ঢাকা শহরে অধিগ্রহণ করা জমি মালিকদের ফিরিয়ে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৯৬০ বা ৬২ সালে ঢাকা শহরে হাজার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। এই সকল জমিতে বিমানবন্দরসহ অনেক স্থাপনা তৈরি হয়েছি। ১২শ’ একরের বেশি জমি সরকারেরর কাজে লাগেনি, যদিও অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। এ সব জমি মালিকদের ফিরিয়ে দিতে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সেটা গেজেট নোটিফিকেশনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চেলে গেছে।
×