ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৮ জুলাই ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শহর ঢাকার হলোটা কী? একটার পর একটা দুর্যোগ। লেগেই আছে। কেন? কে দেবে উত্তর? কোন কর্তৃপক্ষ কি আছে? এই যে চিকুনগুনিয়া, সেই কবে থেকে ভোগাচ্ছে! আক্রান্তরা বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না। সর্বাঙ্গে ব্যথা। মৃত্যু যন্ত্রণা, না, এখনও শেষ হয়নি। এরই মাঝে কী ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটে গেল! বৃষ্টির জলে হাবুডুবু খেল রাজধানী ঢাকা। এতকাল ছিল জলাবদ্ধতা। বুধবার দেখা গেল জোয়ার। বাড়ি ঘর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সবই পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। দেখে মনে হয়েছে খরশ্রোতা নদী। সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ আর কী হতে পারে? অথচ এখানে জল ছিল হাঁটুর উপরে। সরকারের মন্ত্রী সচিবসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের আসতে যেতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে। ভাবা যায়? গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল প্রকৃতই ঝিলের চেহারা পেয়েছিল। শাপলা চত্বরের শাপলাটি থৈ থৈ জলে ভেসেছে। দিলকুশার প্রায় প্রতিটি অফিসের নিচতলা প্লাবিত হয়েছে। ওদিকে নটরডেম কলেজের সামনের রাস্তায় ছিল গলা পানি। ধানম-ি ২৭ নম্বর সংলগ্ন মিরপুর রোডটির কথা তো বলাই বাহুল্য, এখানে সাগরের মতো ঢেউ তুলছিল পানি। কাওরানবাজার, নিউমার্কেট ভেসে গিয়েছিল। ফার্মগেট থেকে গ্রিন রোডের দিকে যেতে যে রাস্তাটি, সেখানে এত জল আগে দেখিনি। বুধবার দেখা হলো। এখানে কাছাকাছি দূরত্বে দুটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের সে কী দুর্ভোগ! রিক্সায় করে, ভ্যানে করে খেয়া পার হওয়ার মতো রাস্তা পার হচ্ছিলেন তারা। এভাবে আরও বহু এলাকার কথা বলা যাবে। প্রতিটি এলাকার বাসিন্দা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। রিক্সা উল্টে যাওয়া, পা পিছলে পড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা দেখা গেছে নিয়মিত বিরতিতে। সব মিলিয়ে হতবাক নগরবাসী। ঢাকায় এত উন্নয়ন কর্মকা- হচ্ছে অথচ জলাবদ্ধতা নিয়ে কেউ কোন কাজই করেননি! তারা বলছেন, জলাবদ্ধতা শহরের অনেক পুরনো সমস্যা। এ সমস্যা দূর করা না যাক, এ পর্যায়ে আসে কী করে? দায়ীদের রীতিমতো গালমন্দ করা হয়েছে। সে হতেই পারে। কিন্তু প্রশ্নটি অন্যখানে। যারা গালমন্দ করছেন তাদের কি কোন দায় নেই? উত্তর খুঁজতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ড্রেনের মুখ বন্ধ। অলি গলি মূল রাস্তার ধারে পানি নেমে যাওয়ার যে ব্যবস্থা, অকার্যকর হয়ে আছে। পলিথিনের ব্যাগ চিপসের প্যাকেট প্লাস্টিকের পানির বোতল কলার ছোলা টি-ব্যাগ ইত্যাদি ফেলে পানি নেমে যাওয়ার পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় রাজধানীবাসীকেও দায় নিতে হবে বৈকি। অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক, শহরে নতুন এক বাহাদুর শ্রেণীর উদ্ভব ঘটেছে। তারা উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে নিজেদের জাত চেনাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বুড়ো বুড়ো মন্ত্রী-এমপি সাহেবরা এই অপকর্ম করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন করছেন। এমনকি বিচারকদের গাড়ি আইন অমান্য করে উল্টো পথে ঢুকে যাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক আলোচনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাাসগুলো নিয়ে। নিত্য দেখা যায় এই ‘মস্তানি।’ উল্টো পথে বিশাল বাস নিয়ে অন্যায়ভাবে ঢুকে কত ঘটনার যে জন্ম দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, গুনে শেষ করা যাবে না। সর্বশেষ গত ১৭ জুলাই বাংলামোটর এলাকায় বাধাগ্রস্ত হয়ে কর্তব্যরত এক পুলিশ সার্জেন্টকে মারধর করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়। আক্রান্ত পুলিশ সদস্য কাওসার বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেন। এখানেই শেষ নয়, কয়েকটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে উল্টো পথে গাড়ি না চালানোর কথা বলা হয়েছে। একই বার্তা গেছে সাত সরকারী কলেজে। চিঠির বক্তব্যের সঙ্গে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মোটামুটি একমত। কিন্তু ছাত্রদের উগ্র উচ্ছৃঙ্খল অংশটি শিক্ষকদের কথা শুনবে তো? বোধদয় হবে তাদের? দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।
×