ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আইনমন্ত্রী দিয়েছেন প্রধান বিচারপতিকে;###;অতঃপর খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে ;###;রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর গেজেট আকারে জারি করা হবে

নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি ॥ চূড়ান্ত খসড়া হস্তান্তর

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৮ জুলাই ২০১৭

নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি ॥ চূড়ান্ত খসড়া হস্তান্তর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিষয়ক বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়া প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কাছে হস্তান্তর করেছেন আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক। বৃহস্পতিবার বিকেলে সুপ্রীমকোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠককালে এ খসড়া বিধিমালা হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী নিজেই। বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শৃঙ্খলাবিধির খসড়া বৃহস্পতিবার আমি প্রধান বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছি। এটি এখন তিনি দেখবেন। এরপর খসড়া বিধিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির চূড়ান্ত অনুমোদনের পর মন্ত্রণালয় এটি গেজেট আকারে জারি করবে। এর আগে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা এ শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট করার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। এদিকে সুপ্রীমকোর্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত করতে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আইনমন্ত্রী সুপ্রীমকোর্টে যান। প্রায় আধাঘণ্টাব্যাপী দুজন একান্তে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রী খসড়া বিধিমালা প্রধান বিচারপতির কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি জানিয়েছেন। চলতি মাসে তৃতীয়বারের মতো প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করলেন আইনমন্ত্রী। ২৩ জুলাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিষয়ক বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশে রাষ্ট্রপক্ষকে আরও এক সপ্তাহ সময় দেয়। মোট ২২ বার রাষ্ট্রপক্ষকে সময় দিয়েছে আদালত। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ্যাটর্নি জেনারেল দুই সপ্তাহের সময়ের আবেদন করলে আদালত এক সপ্তাহের সময় দেয়। এর আগে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, আমরা এ শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট করার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। এ পর্যন্ত শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশে আপীল বিভাগ ২২ বার সময় দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষকে। তবে গত ২ জুলাই রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে আইনমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছিলেন, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে এ গেজেট চূড়ান্ত হবে। এরপর তিনি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দু’দফা বৈঠক করেন। ২০ জুলাই এক বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের আচরণ ও শৃঙ্খলা বিধিমালা নিয়ে আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে এবং আমরা এ শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট করার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। এসব বিষয় নিয়ে একটু খুঁটিনাটি বোঝার প্রয়োজন ছিল এবং যেসব বিষয় নিয়ে দ্বিমত ছিল সেগুলো অনেকাংশে দূর হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই (চলতি সপ্তাহে) তা হতে পারে। কিন্তু ২৩ জুলাই সময়ের আবেদনের পুনরাবৃত্তি ঘটে, রাষ্ট্রপক্ষকে এক সপ্তাহ সময়ও দেয়া হলো। গত ২ জুলাই সরকারকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে আপীল বিভাগ বলেছিল, এটাই ‘শেষ সুযোগ’। যদিও আপীল বিভাগ এর আগে কয়েকবার ‘শেষ সুযোগ’ উল্লেখ করে সময় দেয়ার পরও রাষ্ট্রপক্ষ দফায় দফায় সময় নিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সরকারের প্রণীত খসড়া শৃঙ্খলাবিধি সুপ্রীমকোর্ট তাদের সুপারিশসহ আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। সেই থেকে ধারাবাহিকভাবে সময় নেয় সরকার। ২০১৬ সালের ৭ নবেম্বর বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিষয়ক বিধিমালা ২৪ নবেম্ব^রের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দেয় আপীল বিভাগ। আপীল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে তলব করেছিল আদালত। তবে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর রাতে আইন মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রের মাধ্যমে জানায়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে পরদিন ১২ ডিসেম্বর আপীল বিভাগ দ্বিমত পোষণ করে। আদালত বলেছে, ‘রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।’ বিধি প্রণয়নের বিষয়ে আপীল বিভাগ বলে, ‘এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্ন। এখানে কোন কম্প্রোমাইজ নেই।’ তবে আপীল বিভাগের এ অভিমত সত্ত্বেও বিগত সাত মাসেও এ গেজেট জারি করা হয়নি। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিষয়ক বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। ১২ দফার মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এজন্য বারবার আদেশ দিতে হয়েছে আপীল বিভাগকে। এমনকি ২০০৪ সালে আদালত অবমাননার মামলাও করতে হয়েছে বাদীপক্ষকে। এরপর ২০০৭ সালের ১ নবেম্বর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ঘোষণা করে। এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ আপীল বিভাগ চার সপ্তাহ সময় দেয় সরকারকে। এরপর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি খসড়া শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করে সুপ্রীমকোর্টে পাঠানো হয়। কিন্তু তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে না হওয়ায় সুপ্রীমকোর্ট কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করে আলাদা একটি শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করে। গত ২ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপীল বিভাগে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি আপীল বিভাগ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণবিষয়ক চারটি বিধিমালা সাত দিনের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশের নির্দেশ দেয়। তবে এ বিষয়ক মামলাটি এখনও আপীল বিভাগে বিচারাধীন। ১২ দফা নির্দেশনার যেসব দফা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ রয়েছে।
×