ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোহাম্মদ রফিকের দু’টি কবিতা

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৮ জুলাই ২০১৭

মোহাম্মদ রফিকের দু’টি কবিতা

বান রওয়না দেয়ার বহু পূর্বেই জেনেছি, উত্তরের ভেড়িবাঁধ ধসে গেছে প্রথম প্রহরে ঊর্ধ্বশ্বাস জল, হু-হু হাওয়া, এই মধ্যরাতে নূহের প্লাবন, বাঁশ, ফাটছে বাঁশ, হাজার-সহস্র হা-হা-হি-হি; আমাকে যেতেই হবে, সকলে প্রস্তুত, এমনকি নিয়তিও, বাইরে পা দিতেই, হুড়মুড় হিমজলে, যেন তীক্ষèতলোয়ার ছুঁয়ে গেল কোমর অবধি, বৃষ্টি, বৃষ্টি তীব্র তির যেন জ্বলন্ত ইস্পাতে ছ্যাঁকা; ভেসে যেতে যেতে কখন দাঁড়িয়ে পড়েছি বোধহীন; শব্দ, শব্দ, হাহাকার, হু-হুঙ্কার, যেন শেষবাণী ঈশ্বরের কিংবা শয়তানের, হিম বল্লমের ফলা এ-ফোঁড় ও-ফোঁড়; শতাব্দীর মড়া, অগণিত শত-শত, সহস্র-হাজার, ফুলে-ওঠা ঘিরে ধরে, ভেসে এল, ঘিরে ঘিরে ধরে নাচ ছায়ামূর্তি যত অবিকল মানবী যেন বা, এরা কারা, প্রেতমূর্তি প্রেতযোনি ফুৎকারে ফুৎকারে দেহ ছুঁয়ে দেহ ছেনে, ঝমঝম ভেঙে পড়ে পাথর, পাথর, অগ্নিশিলা মর্ত্য ও পাতাল ছেয়ে, আদিগন্ত বুকে-বুক, হাতে-হাত, অশ্রুসিক্ত চুম্বনে-চুম্বনে ভস্মস্রাব; ছায়া-ছায়া আবছায়া চোখের ভিতরে জল চুল বেয়ে বাঁ-পাশে দাদার গোর দিদিমার ওই ডানে রেখে পথ মনে হয় গোটা পরিবার গোরস্তান, ভাসছে, ভাসমান, যেন একটা দেশ, মানচিত্র, হঠাৎ হোঁচট খাই, থমকে যাই, চলি একঝাঁক হাড়গিলে মাথার ওপরে মুহুর্মুহু বিষ্ঠা ত্যাগ করে উড়ে যেতে যেতে ক্লিন্ন পাখার ঝাপটায় সচকিত করে গেল দিগন্তের ইশারায়, মনে হল আচানক ওই শুনি, প্রতিবেশী মোরগের ডাক; এ কেমন অভ্যর্থনা, ও ভাই মহেজ তুই কই, গেলি কই, আলক্ত জলের ছোঁয়া থই-থই মাটিকাদা ভরতি ছনচালা মানব বসতি, যেন প্রলয় বিলয় ঘটে যাওয়ার সহস্রাব্দ পর কোনো এক তিমির ভূ-খ-, নুয়ে আছে মাথা, জিরজিরে হাড়, তবু যাই, পৌঁছে যাই, দেখি, বাবা ওই দূরে আগলে আছে দ্বার, তবে এলি, শেষতক, দুটো কথা ঘর, ভাঙা ঘর, কোথায়, কোথায়, শূন্যে মরুজলা ভুঁয়ে উড়ছে ওই হাওয়ায় হাওয়ায়, বাতি ডিম, মাছের ফ্যাকাশে চোখ, সার-সার পাটাতনে, ছড়িয়ে দিয়েছে কেউ, আকাশ-নক্ষত্র নিবে যেতে যেতে সব পাড়া-পড়শি, আত্মীয়-স্বজন ভাই-বোন, জীবিত ও মৃত, ঘিরে ধরে খোয়াটে হাসিতে মা এসে দুর্মর ধাক্কা দিল, আর্তনাদে, কেন এলি, যা যা বাইরে ছিটকে পড়তে পড়তে কান ফাটা বজ্রবিদ্যুতের ত্রাহিস্বর, শুনি চতুর্দিকে, মা গোঙায়, যা যা ফিরে যা ফিরে যা; বেমক্কা বানের জল বেড়ে গেছে বহুগুণ, ছুঁই ছুঁই মাথা ডুবি, ভাসি, চোখ খুলি, আমার মায়ের মুখ পুঁতিজলগন্ধময়... ১৭ জুলাই ২০১৭ ** একটি দিন ভোর থেকে দাবানল, দেহ থেকে খসে পড়ছে চামড়া রান্না হচ্ছে মাংসপি- হাড়মজ্জা অনন্ত চুল্লিতে মাথার ভিতরে কোষে-কোষে শুকনো কাঠে ধরাচ্ছে আগুন, মৃত্যু নয়, মৃত্যুর অধিক এই জন্ম, হলাহল সাপ নয়, নিঃসীম শূন্যতা সর্পঅধিরাজ আজ তবে জীবন্ত শবের অগ্নি ঢেউয়ে দাঁড় টানা, বেহুলাও অন্তর্ধানে বহুকাল! ১৮ জুলাই ২০১৭
×