ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

শিক্ষা বার্তা ॥ শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২৮ জুলাই ২০১৭

শিক্ষা বার্তা ॥ শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক

প্রকাশনার ২৭ বছর পদার্পণের শিক্ষা বার্তার এই সংখ্যাটি বের হয় ২০১৭ সালের মে-জুন মাসে। আফরোজান নাহার রাশেদার প্রকাশনায় এবং সম্পাদনায় মাসিক সাময়িকীটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন আহমদ কাওসার। সম্পাদকীয় কলামে এএন রাশেদা শিক্ষা বার্তার এই সংখ্যাটি শুরু করেন শিক্ষা সংক্রান্ত বাজেটের নানা অনিয়ম আর অপতৎপরতার আবর্তে পড়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থের বেহাল পরিণতি নিয়ে। অর্থাৎ প্রতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে যে বাজেট দেয়া হয় তা যদি যথার্থ ব্যয় করতে ব্যর্থ হয় তাহলে টাকাটা অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত যায়। এবার এক জরিপে স্পষ্ট হয় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা যথার্থ কর্ম পরিকল্পনার অভাবে গচ্ছিত থেকে যাওয়ায় তা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শিক্ষা একটি জাতির মেরুদ-। আর এই খাতে অব্যাহত উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাজেট প্রদান এতই গুরুত্বপূর্ণ যে তাতে ঘাটতি থাকার আশঙ্কা দেখা দেয়। সেখানে এ বছর অর্থ ফেরত যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর জন্য দায়ী করা হয় অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, অকারণে, অপ্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ, সুষ্ঠু পরিকল্পনার গতি নির্ণয়ে অদূরদর্শিতার প্রভাব। অর্থদাতা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এই বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা চেয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে। সম্পাদকীয়তে উঠে আসে ‘বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা এবং কল্যাণ ট্রাস্ট’ যে পরিমাণ টাকা গচ্ছিত থাকার কথা সেখানেও রয়েছে প্রচুর অনিয়ম এবং তহবিলের বেহাল অবস্থা। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে নেয়া হলেও সরকারী তহবিল যা দেয়ার কথা সেখানেই রয়েছে হরেক রকমের দুর্নীতি। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে অসহায় শিক্ষক-কর্মচারীদের। বাংলাদেশের স্বনামধন্য বিজ্ঞজনদের প্রবন্ধের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে এই সঙ্কলনটি। হায়দার আকবর খান রনো লিখেছেন ‘শিক্ষা ও শ্রেণী সম্পর্ক।’ লেখক এখানে শ্রেণী বিভক্ত সমাজে শাসক শ্রেণীর আদর্শিক বলয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার যে কাঠামো তৈরি হয় সেটা বৈষম্য পীড়িত বলে দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেন। বিত্ত-নির্বিত্তের ফারাক তো আছে, ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থাও (মাদ্রাসা শিক্ষা) সঙ্গত কারণে গড়ে তোলা হয়, সর্বোপরি আছে নারী শিক্ষায় হরেক রকমের বাধাবিপত্তি। যা সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থাকে নানামাত্রিক বিপর্যস্ত করছে। কাজী মদিনার ‘নববর্ষ- বাঙালী জাতিসত্তার অপরিহার্য উৎসব’ প্রবন্ধে আবহমান বাংলাও বাঙালীর সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যিক ধারায় নববর্ষের গুরুত্বকে অপরিহার্য শর্ত হিসেবে প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় জড়াতে না পারলে বাঙালী জাতিসত্তা হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করা হয়। বাঙালীর আপন বৈশিষ্ট্য, নিজস্ব ঐতিহ্য শিক্ষা ব্যবস্থার অনুষঙ্গ হতে না পারলে মাতৃভাষা যেমন তার মর্যাদা হারাতে পারে একইভাবে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বলয়ের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়া অমূলক নয়। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক এবং সচেতন থাকার ওপরও বিশেষ জোর দেয়া হয়। শিপ্র সরকার লিখেছেন ‘রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা দর্শনে উন্নয়ন ভাবনা।’ রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা কর্মসূচীতে বৃহত্তর গ্রামীণ সমাজের আলোকে যে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা উজ্জ্বল হয়ে আছে তাকে অনুসরণ করে আজও গ্রাম পর্যায়ে আধুনিক এবং বৈজ্ঞানিক শিক্ষাক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো সুযোগ বিদ্যমান আছে। যুগের অগ্রগামী এবং আধুনিক শিক্ষার এই প্রবাদ পুরুষ আজও সময়ের পরিবর্তনের ধারায় পরিহার্য এবং প্রাসঙ্গিক। শিক্ষার ক্ষেত্রে তো বটেই। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ‘যে ঋণ পরিশোধ না করে বৃদ্ধি করাই ভাল’ আলোচনাটি বিদ্রোহী কবির ওপর একটি সুসংবদ্ধ রচনা যা লেখকের প্রাজ্ঞ মননশীলতার এক অপূর্ব নির্মাণশৈলী। নজরুল আমাদের সমাজ এবং জীবনের বিস্তৃত বলয়ে এতই দিয়েছেন যা অপরিশোধ্য। যে ঋণ উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। যার বৃদ্ধিতে আমাদের অনুপ্রেরণা, উৎসাহ আর উদ্দীপনা আরও বেড়ে যাবে। ‘নার্স নেলী’কে নিয়ে বেগম রোকেয়ার গল্পটি বর্তমান সংখ্যায় মুদ্রণ করে সম্পাদক নতুন আঙ্গিকে ভিন্ন মাত্রার উদ্দীপনায় পাঠকদের নারী জাগরণের এই বলিষ্ঠ পথিককে উপহার দিয়ে সময়ের দাবি মিটিয়েছেন। শিক্ষা কার্যক্রমের আনুষঙ্গিক সমস্ত বিষয়ে বিশেষ বিবেচনায় এনে সম্পাদক যেভাবে শিক্ষা বার্তাটি গুছিয়েছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার এবং অবশ্যই তা সকলের জন্য এই বার্তাই সব সময় এই মাসিক সাময়িকীর মূল প্রতিপাদ্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গ্রন্থটির বহুল প্রচার এবং সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি।
×