ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ কামরুল হাসান

স্বল্পদৈর্ঘ্য ভ্রমণ

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৮ জুলাই ২০১৭

স্বল্পদৈর্ঘ্য ভ্রমণ

ষড়ঋতুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ বাংলাদেশ। যে বৈচিত্র্যতা একেক ঋতুতে একেক রূপে ধরা দেয় ভ্রমণপিপাসুদের মনে। প্রকৃতির এমন রূপ, রস ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে মানুষ ছুটে যায় সমুদ্রতীরে। কখনও বা পাহাড়ী ঝর্ণা কিংবা সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে। অবাক বিষয় হলো এমন সব প্রাকৃতিক লীলা উপভোগ করতে ভ্রমণপিপাসুদের বেশিদূর যেতে হয় না বরং পাড়ি দিতে হয় অল্প দূরত্বের পথ। দূরত্ব বিবেচনায় অসম, মেঘালয় কিংবা পশ্চিমবঙ্গের দর্শনীয় স্থানগুলোকেও আমরা এই তালিকায় রাখতে পারি। কারণ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে এক দিনেরও কম ব্যবধানে আমরা পৌঁছাতে পারি এসব রাজ্যের দর্শনীয় স্থানে। এমন দূরত্বের কথা বিবেচনায় রেখেই সম্ভবত লেখক সুমন্ত গুপ্ত তার বইয়ের নামকরণ করেছেন ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য ভ্রমণ।’ সুমন্ত গুপ্ত বাংলাদেশের বেশকিছু জাতীয় পত্রিকার একজন স্বনামধন্য লেখক। সে সুবাদে পাঠক মহলে তার নামটি বেশ পরিচিত। ভ্রমণ, অর্থনীতি, ডি-প্রজন্ম, আনন্দকণ্ঠÑ সব পাতায় তার সরব পদচারণা। সুমন্ত পেশায় একজন ব্যাংকার। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন ব্যবসায় প্রশাসনে। ছোটবেলা থেকেই সুমন্ত গুপ্ত জড়িত আছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে। নিজের একান্ত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ ‘শ্রুতি’। ভালবাসেন কবিতা, গান, মঞ্চনাটক ও মাকে নিয়ে পছন্দসই সব দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়াতে। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে যদিও সে সুযোগ কম হয়। তার পরও যতটুকু অবকাশ তার সবটুকু ব্যয় করেন ঘুরে বেড়িয়ে। সুমন্তের এমন ভ্রমণপিপাসু মন ও বিহঙ্গ দৃষ্টিতে দেখার আন্তরিক প্রচেষ্টার ফল তার সদ্য প্রকাশিত ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য ভ্রমণ।’ অত্যন্ত অল্প বয়সে তিনি নিজ দেশ ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী রাজ্যের দর্শনীয় সব স্থানকে উপজীব্য করে লিখেছেন তথ্যবহুল সচিত্র এ ভ্রমণ কাহিনী। যেখানে স্থান পেয়েছে কলকাতা, গোয়াহাটি, শিলিং ও সিলেটের বেশকিছু স্থান। ভ্রমণের নিখাদ আনন্দ দান কিংবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ণনা পাশাপাশি এ উপন্যাসে উঠে এসেছে বেশকিছু ঐতিহাসিক স্থান, প্রেক্ষাপট ও বিষয়। যা তিনি অত্যন্ত হৃদয়গম করে উপস্থাপন করেছেন। সুমন্ত গুপ্তের বইয়ের প্রথম পর্বে উঠে এসেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বেকার হোস্টেল। এ হোস্টেলের দুটো কক্ষ (২৩ ও ২৪) ঐতিহাসিক কারণেই এক দর্শনীয় স্থান। যৌবনে বঙ্গবন্ধু এসব কক্ষে থাকতেন। তরুণ বয়সে বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে পদচারণ করলেও তাঁর মূল ভিত্তি গড়ে ওঠে কলকাতার এ বেকার হোস্টেলে। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বরের সঙ্গে ২৩ নম্বর কক্ষটিকে যুক্ত করে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ গড়ার উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু ২৩ নম্বর রুমে লেখাপড়া করেছেন এবং ২৪ নম্বর রুমে রাতে ঘুমাতেন। সে সুবাদে এ দুটো কক্ষ আমাদের চেতনার শেকড়। রাজনীতির সেই শেকড় যেমন সুমন্ত তুলে এনেছেন, তেমনিভাবে উপস্থাপন করেছেন সাহিত্যের দুই দিকপাল রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের পারিবারিক গল্প। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক ভিটা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। যা বাংলা সাহিত্যের বহু ঘটনার সাক্ষী। এ বাড়ির পরিবেশ পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক ফিরে গেছেন রবীন্দ্র-ভাবনায়। রবির জন্মবৃত্তান্ত ও তার পারিবারিক ইতিহাস-ঐতিহ্যে স্থান পেয়েছে তাঁর বইয়ে। লেখক সুমন্ত গুপ্ত বাংলা সাহিত্যের রবির পাশাপাশি আরেক নক্ষত্র কাজী নজরুলের স্মৃতিভরা ত্রিশালেও হাজির থেকেছেন। লিখেছেন বিদ্রোহী কবিকে নিয়ে অসাধারণ কিছু স্মৃতিকথা। এ ছাড়া কলকাতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র কলেজ স্ট্রিটের বর্ণনাও পাওয়া যায় তার ভ্রমণ বিষয়ক গল্পে। কলেজ স্ট্রিটের নতুন-পুরনো বইয়ের গন্ধে সুমনের পারিবারিক স্মৃতিকথাও উঠে আসে। বইয়ের সারি সারি দোকান, ট্রাম ও কলেজ স্ট্রিটের মনোরম পরিবেশ পেরিয়ে সুমন্ত হাজির হয়েছিলেন ‘ কফি হাউসে’। মান্নাদের গাওয়া বিখ্যাত সেই গান কফি হাউস। এই কফি হাউসে পশ্চিম বাংলার বহু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিক পদচারণায় মুখর থাকত। এমন সব ঐতিহাসিক স্থানের পাশাপাশি কলকাতার নাখোদা মসজিদ, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থানে ঘুরেছেন সুমন্ত। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ছাড়াও অসম গোয়াহাটি কিংবা মেঘালয়ের শিলং শহরের বহু স্থানের বর্ণনা মেলে স্বল্পদৈর্ঘ্য ভ্রমন বইয়ে। এত অল্প দূরত্বের মাঝে এতসব দর্শনীয় স্থান আছে আমাদের চারপাশে তা স্বল্পদৈর্ঘ্য ভ্রমণ না পড়ে জানা যাবেনা । এ ভ্রমণ কাহিনী পাঠককে নিশ্চিতভাবে সেই দর্শনীয় স্থানে ছুটে যেতে আগ্রহী করবে তা নিশ্চিত।
×