ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাজুয়াল পোশাকে ফিটফাট

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৮ জুলাই ২০১৭

ক্যাজুয়াল পোশাকে ফিটফাট

লুজ কাট টপসের সঙ্গে খোলা কিংবা পনিটেল চুল। স্মার্টনেসকে একধাপ বাড়িয়ে দিতে টপসের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পরা ঢিলেঢালা পালাজ্জো, ধুতি সালোয়ার বা প্রিয় ডেনিম। পোশাকের উজ্জ্বলতার সঙ্গে মানিয়ে গলায় পরে নেয়া মেটাল, পুঁথি, সুতা, কাঠ, পাথর অথবা মাটির মালা। ঘড়ির সঙ্গে হাতে থাকতেই পারে কয়েক রকম পাথর বসানো ব্রেসলেট অর্থাৎ খুব বেশি ম্যাচিং কিংবা সেটা মেলানো এসব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখানোই হলো স্মার্ট ক্যাজুয়াল। নিয়ম ভাঙার পোশাক-আশাক। তবে এ সাজেও থাকে পরিকল্পনা, ভাবনা-চিন্তা। ফ্যাশন নিয়ে একটু ভিন্নভাবে ভাবতে পারে যারা, তারাই হয় ক্যাজুয়াল পোশাকে কেতাদুরস্ত। হাতেগোনা কয়েকটি করপোরেট হাউসকে বাদ দিলে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শৌখিন পেশাদাররাও কিন্তু পোশাক হিসেবে পছন্দ করেন ক্যাজুয়াল ঘরানা। জোর করে বলা নয়, ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের গবেষণায়ও উঠে এসেছে ক্যাজুয়াল পোশাকের প্রসঙ্গ। যেমন ফরমাল অফিস ড্রেসের বদলে কেউ যখন এ ধরনের পোশাকে কর্মক্ষেত্রে স্বস্তি খুঁজে পায়, বিষয়টি কিন্তু তার কর্মস্পৃহাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। তবে ক্যাজুয়ালের গণ্ডির মধ্যে শুধু নারীই পড়েন তা নয়, পুরুষের ক্ষেত্রেও গুরুগম্ভীর টাই আর একরঙা ধোপদুরস্ত শার্টের বদলে বাছাই করা যেতে পারে রঙিন টাই, শার্ট আর ভিন্ন ধরনের সু। বাংলাদেশের ফ্যাশন এক্সপার্টরা মনে করেন, ক্যাজুয়াল পোশাকের ভাবনাটা এসেছে মূলত পাশ্চাত্য থেকে। এখন এখানে পাশ্চাত্য আর আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পোশাকের কাট। ধরা যাক কেউ প্যান্টের সঙ্গে ফতুয়া পরে স্বাচ্ছন্দ্য তো কেউ ধুতি কাটের সালোয়ারের সঙ্গে শার্ট কাট টপস। একটু অগোছালো এ ভঙ্গিটাকেই অন্য দশজনের থেকে আলাদা করে উপস্থাপন করবে তাকে। আর কেবল ফ্যাশনেবল পোশাক নয়, একই সঙ্গে যারা কাপড়ে আরাম খোঁজেন, তাদের জন্যও জুতসই এ স্টাইল। ক্যাজুয়াল পোশাকের মূলমন্ত্র হলো স্বচ্ছন্দ বা আরাম। আরামের বিষয়টি মাথায় রেখেই ক্যাজুয়াল পোশাকের উপকরণগুলো বাছাই করা হয়। এখনকার ক্যাজুয়াল পোশাকের ডিজাইন ও ফিউশন এতটাই উন্নত যে, একটু সচেতনভাবে নির্বাচন করলে যে কেউ অনায়াসে কর্মস্থলে ইচ্ছা করলেই ক্যাজুয়াল পোশাকে হাজির হতে পারবেন। সহকর্মীরা সেক্ষেত্রে আপনার সমালোচনা না করে প্রশংসাই করবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, পোশাক যেন খুব ঝলমলে, চকচকে না হয়। স্নিগ্ধ, শান্ত, সৌম্য রঙ বাছাইয়ের কথাই মাথায় রাখতে হবে। ক্যাজুয়াল স্টাইলের বড় সুবিধাটা হচ্ছে, এ পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে হাত, গলা আর পায়ে পরতে পারেন দারণ সব অলঙ্কার। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি মনে রাখা ভাল তা হলো, রং আর পোশাক বাছাই এমন হবে, যাতে আপনাকে দেখে বোঝা যায়, আপনি ‘কেয়ারফুলি কেয়ারলেস’। মানে অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই একটু এলোমেলো স্টাইলে বসবাস আপনার। এটাই আপনার আধুনিকতা, স্টাইল। বরাবরই ফ্যাশন-সচেতনদের হাত ধরে সংজ্ঞা বদল হয় ফ্যাশন ট্রেন্ডের। হার্ভার্ডের এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রচলিত অফিস ড্রেস কোডকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যারা নিজেদের রোজকার স্টাইলে অভ্যস্ত, সেসব মানুষই কর্মক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে বেশি সৃষ্টিশীল ও যোগত্যাসম্পন্ন। সপ্তাহে চারদিন এক ধরনের পোশাক পরলেন, বাকি দুদিন না হয় একটু অন্য রকম পোশাকই বেছে নিলেন। না হলে তো নিজের কাছে নিজের চেহারাটাই একঘেয়ে লাগে! তবে কী পরলে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী লাগবে, সে নিয়ম মেনেই নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করুন। খেয়াল রাখুন জুতাটা আপনার হাইটের সঙ্গে মানানসই কিনা, আর পেশা হিসেবে যে কাজটা করছেন, তার সঙ্গে কতটা মানানসই আপনার স্টাইল। অফিসে দুই ফিতার স্যান্ডেলের বদলে বন্ধ জুতা ব্যবহার করা ভাল। এতে বেশি করপোরেট ও কনফিডেন্ট লাগে। পোশাক নির্ভর করে ব্যক্তিত্বের ওপর। অনেকে আছেন এক রঙের কাপড় ছাড়া অন্য কোন রং পরেন না। কেউ আছেন চুড়িদার ছাড়া পোশাক পরেন না। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দাপুটে তরুণ থেকে শুরু করে শৌখিন করপোরেট সবাই কিন্তু আরামের বিষয়টা মাথায় রেখে পোশাক বাছাইয়ে প্রাধান্য দেন। সেক্ষেত্রে স্মার্ট ক্যাজুয়ালে নির্ভর করা যায় নিঃসন্দেহে। ক্যাজুয়াল পোশাকের জুতসই সংজ্ঞা খুঁজতে গিয়ে জানা যায় বেশ মজার কিছু বিষয়। যেমন: ম্যাককুয়ারি ডিকশনারিতে স্মার্ট ক্যাজুয়াল মানে, ‘নৈমিত্তিক শৈলীতে সুসজ্জিত’। আর অক্সফোর্ড এ স্টাইলকে সংজ্ঞায়িত করেছে, ‘ফিটফাট সুরুচিসম্পন্ন, তবে তুলনামূলক অনানুষ্ঠানিক।’ ডিকশনারি ডটকমের মতে, ‘ক্যাজুয়াল স্টাইল কিছুটা অনাড়ম্বর কিন্তু ঝরঝরে।’ আরবান ডিকশনারি অনুযায়ী, ‘এটা ঠিক একটি অন্য রকম ড্রেসকোড। তবে বিভিন্ন ধরনের ইভেন্ট, পার্টি থেকে শুরু করে অফিসেও পরে নিতে পারেন এ ধরনের পোশাক।’ তাই বলে স্মার্ট ক্যাজুয়াল ড্রেস মানে তো ওয়্যারড্রোব ঘেঁটে ইচ্ছামতো পোশাক বের করা নয়, এক্ষেত্রেও রয়েছে কয়েকটি আনঅফিশিয়াল ড্রেসকোড। মনে রাখতে হবে, স্মার্ট ক্যাজুয়ালের প্রথম শর্ত ‘স্মার্ট লুক’। এক্ষেত্রে ছোট একটি টিপস দিতে পারি। পোশাক বাছাইয়ে যখন আপনি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত, তখন কিন্তু প্রচলিত ফ্যাশনপ্রবণতায় পরিণত হওয়া একটি কথা মনে রাখতে পারেন। কথাটা হচ্ছে, ‘নিতান্ত সাদামাটা সাজগোজের চেয়ে অত্যধিক বেশভুষা শ্রেয়।’ কথাটি স্টাইলের ছোটখাটো ভুল হওয়া থেকে নিরাপদে রাখার পাশাপাশি আপনার সুরুচির বর্ণচ্ছটা প্রকাশ করবে। মডেল : কাজী মুন ছবি : ইকবাল আপন
×