ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জুবায়ের বারি

জলবায়ু পরিবর্তন ॥ গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলছে দ্রুত

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৮ জুলাই ২০১৭

জলবায়ু পরিবর্তন ॥ গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলছে দ্রুত

স্যাটেলাইটের পাঠানো নতুন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে, গ্রিনল্যান্ড ও এ্যান্টার্কর্টিকায় বছরে ৫০০ কিউবিক কিলোমিটার বরফ গলে যাচ্ছে। এছাড়া সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দ্বিগুণ হয়েছে। মেরু ও সামুদ্রিক গবেষণাকেন্দ্র আলফ্রেড ভেগেনার ইন্সটিটিউটের গবেষকরা ইসা-স্যাটেলাইটের সাহায্যে প্রথমবারের মতো গ্রিনল্যান্ড ও এ্যান্টার্কর্টিকার বরফের স্তর সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছেন। এতে জানা গেছে, এই দুই অঞ্চলে বরফের স্তর রেকর্ড গতিতে সঙ্কুচিত হচ্ছে। হিমবাহের কান্না বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে মহাসাগরগুলোর উষ্ণ স্রোত এসে পৌঁছাচ্ছে এ্যান্টার্কটিকায়। এর সংস্পর্শে এসে গলে যাচ্ছে পশ্চিম, পূর্ব এবং এ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপের গ্লেসিয়ার বা হিমবাহগুলো। বরফ গলার এই হার ক্রমশ দ্রুততর হচ্ছে। সঠিক তথ্য উঠে আসে ম্যাপসহ গবেষণার ফলাফল ইউরোপিয়ান জিওসাইন্স ইউনিয়নের একটি অনলাইন ম্যাগাজিন ‘দ্য ক্রায়োস্ফিয়ার’-এ প্রকাশিত হয়েছে। ‘এই নতুন ম্যাপ হলো স্ন্যাপশট, যা আমাদের বরফের স্তরের বর্তমান অবস্থা দেখাতে পারে।’ বলেন গবেষণার নেতৃত্বদানকারী লেখক ভাইট হেল্ম। ‘এতে বরফের উচ্চতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য উঠে আসে। সব মিলিয়ে ১৬ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটারের বেশি একটা চিত্র পাওয়া গেছে। আগের বিবরণের চেয়ে ৫০০,০০০ বর্গকিলোমিটার বেশি’ নতুন স্যাটেলাইটটি ২০১০ সালে আকাশে ছাড়া হয়েছে। এতে সংযুক্ত করা হয়েছে একটি রাডার, যা মরু“ অঞ্চলের বরফের স্তর পরিমাপ করতে পারে। বরফ গলছে দ্রুত গতিতে গবেষকরা স্যাটেলাইটের তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা করে ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বরফের স্তরের পরিবর্তনটা লক্ষ্য করেছেন। বরফের ওপরে পড়া তুষার জমে গেলে বরফের ঘনত্বও বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে বরফ গলে গেলে তার আয়তন ও ঘনত্বও কমে যায়, পতিত হয় সমুদ্রে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা রাজ্যে জর্ডান শহরের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিচে নেমে গিয়েছিল। এমন শীতে মানুষের কষ্ট কী পর্যায়ে পেঁছাতে পারে তা কল্পনা করা কঠিন নয়। এ ছবিটি মাইকেল এ্যালডেন পাঠান মাইন রাজ্যের লুসার্ন থেকে। এ শহরটিতে মঙ্গলবার ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল। বিদ্যুত ছিল না, প্রচণ্ড ঝড়ে গাছপালা ভেঙে পড়ছিল। বরফের উচ্চতার পরিবর্তন বের করার জন্য বিশেষজ্ঞরা এ্যান্টার্কটিকার ২০০ মিলিয়ন পয়েন্ট ও গ্রিনল্যান্ডের প্রায় ১৪.৩ মিলিয়ন পয়েন্ট মাপজোক করেছেন। এতে দেখা গিয়েছে শুধু গ্রিনল্যান্ডই প্রতিবছর ৩৭৫ কিউবিক কিলোমিটার বরফ হারাচ্ছে। ২০০৯ সালের স্যাটেলাইট তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে সাম্প্রতিক তথ্য পরীক্ষা করে গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, গ্রিনল্যান্ডে বরফ হারানোর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে, আর পশ্চিম এ্যান্টার্কটিকায় হয়েছে তিন গুণ। ক্ষতি পোষাচ্ছে না এই দুই জায়গার ক্ষতির পরিমাণ যোগ করলে বোঝা যায় বর্তমানে প্রতি বছর ৫০০ কিউবিক কিলোমিটার বরফ গলে যাচ্ছে। ২০ বছর আগে স্যাটেলাইটের সাহায্যে পরিমাপ শুরু করার পর থেকে এমন ক্ষয় লক্ষ্য করা যায়নি। জানান সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। অন্যদিকে পূর্ব এ্যান্টার্কর্টিকায় বরফের স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এই পরিমিত বর্ধন মহাদেশের অন্য প্রান্তের ব্যাপক ক্ষতিটা পুষিয়ে দিতে পারছে না। সূত্র : ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফি
×