ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২০১৬ সাল শেষে বেসরকারী খাতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১৬ কোটি ডলার;###;ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনে ঝুঁকির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

সস্তা সুদের বিদেশী ঋণের চাপে ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২৮ জুলাই ২০১৭

সস্তা সুদের বিদেশী ঋণের চাপে ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত পাঁচ বছরে বেসরকারী খাতে স্বল্প মেয়াদী বৈদেশিক ঋণ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারী খাতে এ ধরণের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১৬ কোটি ডলার। যা আগামী দিনে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটরিয়ামে ‘প্রসপেক্টস এ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব শর্ট টার্ম ফরেন কারেন্সি ফিন্যান্সিং অব ব্যাংকস’ শীর্ষক কর্মশালায় এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. শাহ মোঃ আহসান হাবীবের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি টিম গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারী খাতে ২০১২ সালে স্বল্পমেয়াদী বিদেশী ঋণের পরিমাণ সাড়ে ২৩ কোটি ডলার। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ কোটি ডলারে। সর্বশেষ হিসেবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১৬ কোটি ডলার। বর্তমানে এ ধরনের ঋণের প্রবৃদ্ধির হার ৩১ শতাংশের বেশি। কর্মশালায় বক্তারা বলেন, স্বল্প মেয়াদী এসব ঋণের বিষয়ে নজরদারির অভাব রয়েছে। এ সুযোগে বিশেষ থেকে আনা এসব অর্থের অপব্যবহারও হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে পারে দেশ। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একটি নীতিমালার আওতায় এ ধরনের ঋণের নজরদারি করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর বলেন, দেশের মধ্যে যখন উচ্চ সুদহার ছিল। তখন বেসরকারী খাতে বিদেশী ঋণ নেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। সেই সময়ে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার ছিল ১৭ থেকে ১৭ শতাংশ। এখন তা ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে বিদেশী ঋণের সঙ্গে দেশীয় ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহারের তেমন কোন পার্থক্য নেই। তিনি বলেন, দেশের তুলনায় বিদেশী ঋণের সুদহার তুলনামূলক সস্তা হলেও সীমাহীন ঋণের অনুমোদন দেয়া হবে না। কেননা পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ বেসরকারী খাতে বিদেশী ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এজন্য বিষয়টি নিয়ে ভাববার প্রয়োজন রয়েছে। বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণের ভাল দিকের পাশাপাশি বেশ কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। বৈশ্বিক চিন্তা করি, তাহলে আগে যতগুলো আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে সেখানে দেখা গেছে, স্বল্পমেয়াদী ঋণ কম খরচে বড় করা হয়। বড় করে যখন ফিরিয়ে দেয়ার সময় হতো তখন যদি লোকাল কারেন্সি অবমূল্যায়ন করে তখন ব্যালেন্স অব পেমেন্টে সমস্যা দেখা দেয়। তাই বাংলাদেশে এ ধরনের সমস্যায় না পড়তে হয় সেদিকটি বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, অবসর ব্যাংকিংয়ের সোর্সেস অব ফান্ডের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংককে সব সময় মনিটরিং করা উচিত। প্রত্যেকটি ব্যাংকের ফরেন কারেন্সির দায় বেড়ে যাচ্ছে। যদিও বর্তমান অবস্থান এখনও সংকট পর্যায়ে পৌঁছায়নি। কিন্তু ক্রাইসিস সেশন টাচ করার পরে কি আমরা পদক্ষেপ নিব, নাকি তার আগেই ব্যাংকগুলোকে নিভৃত করব, যাতে সংকট তৈরি না করে সেজন্য একটা শক্ত মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, মালেয়েশিয়া স্বল্পমেয়াদী বিদেশী ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ধরনের ঋণে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে বিদেশী ঋণের ক্ষেত্রে সে সকল ঝুঁকি রয়েছে তা নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ বারিকুল্লাহ, ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মাহবুব উল আলম, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আহমেদ শাহিন প্রমুখ।
×