ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্দু সরকার

রাজনৈতিক ছবি

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৭ জুলাই ২০১৭

রাজনৈতিক ছবি

অনন্য রেজা করিম ১৯৭৫-এর ২৫ জুন জরুরী অবস্থা জারি করা হয় ভারতে। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসীন ইন্দিরা গান্ধী। রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ ভারতজুড়ে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। যা ২১ মাস স্থায়ী হয়েছিল। ১৯৭৭-এর ২১ মার্চ পর্যন্ত জরুরী অবস্থা বলবত ছিল। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা স্থগিত রেধে ২১ মাসব্যাপী জরুরী অবস্থার সময়কাল বিশৃঙ্খলা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা দমনের নামে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ইতিহাসে দারুণ কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয় আজও। ইন্দিরা গান্ধীর শাসনামলে জারি করা সেই দুর্বিষহ ২১ মাসের জরুরী অবস্থার সময়কালের রাজনৈতিক সামাজিক বাস্তবতা চিত্র সেলুলয়েডে তুলে ধরা হয়েছে। ২১ মাসের জরুরী অবস্থা সময়কালে কিছু খ- ঘটনাবলী নিয়ে নির্মিত হিন্দী সিনেমা ‘ইন্দু সরকার’ মুক্তি পাচ্ছে এ সপ্তাহে। আজকের প্রজন্ম জরুরী অবস্থা জারির পরবর্তী ২১ মাসের দুর্বিষহ কালো অধ্যায় সম্পর্কে বইপত্র পড়ে কিছু কিছু জানতে পারছে হয়তবা। কিন্তু এ সম্পর্কে আজকের প্রজন্মকে গভীরভাবে সজাগ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। সাধারণত রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করলে মারাত্মক বিপাকে পড়তে হয়। সেন্সর বোর্ড নানা বিষয়ে আপত্তি তোলে, অনেক রাজনৈতিক গোষ্ঠী ক্ষুব্ধ হয়ে সেই ছবির প্রদর্শনী বন্ধের জন্য আন্দোলন, প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বলিউডের অনেক আলোচিত, বিতর্কিত এবং সাড়া জাগানো সিনেমার নির্মাতা মধুর ভা-ারকার ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত ২১ মাসের জরুরী অবস্থা সময়কালের বাস্তব ঘটনাবলী নিয়ে ‘ইন্দু সরকার’ ছবিটি নির্মাণের চরম দুঃসাহস দেখিয়েছেন। মধুর ভা-ারকার এ পর্যন্ত যত সিনেমা নির্মাণ করেছেন তার প্রায় সবই বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য এবং সামাজিক বাস্তবতা পর্দায় সাহসীভাবে তুলে ধরার কারণে সবাইকে ‘আলোড়িত করেছে, প্রশংসা অর্জন করেছে। তার ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার থেকে শুরু করে ফিল্মফেয়ার, স্ক্রিন স্টারডাস্ট প্রভৃতি প্রেস্টিজিয়াম এ্যাওয়ার্ড নিজের ঝুলিতে পুরেছেন বলিউডের অনেক নামী- দামী নায়ক-নায়িকা, কলাকুশলী। ‘চাঁদনি বার, ‘ফ্যাশন,’ ‘পেজ থ্রি’, ‘সত্তা’, ট্রাফিক সিগন্যাল,’ ‘হিরোইন,’ ‘ক্যালেন্ডার গার্লস’ মধুর ভা-ারকারের প্রতিটি সিনেমাতেই সামাজিক বাস্তবতার চিত্র চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। প্রধানত নারীকেন্দ্রিক চরিত্র নিয়ে তার সব ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে। তার পরিচালিত গত দুই সিনেমা ‘হিরোইন’ এবং ‘ক্যালেন্ডার গার্লস’ ততটা সাফল্য না পেলেও জনমনে আলোড়ন তুলেছে। এবার মধুর ভা-ারকার দর্শকদের সামনে ৪২ বছর আগের এক কলঙ্কিত রাজনৈতিক অধ্যায় তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন তার নতুন সিনেমা ‘ইন্দু সরকার’-এ। এ ছবিতে এক প্রতিবাদী রাজনৈতিক কর্মী এবং কবি ‘ইন্দু সরকারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। জরুরী অবস্থার বিরুদ্ধে প্রচ-ভাবে সোচ্চার প্রতিবাদী এই নারী রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পেতে, গণতন্ত্র, মুক্ত স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য রাজপথে আন্দোলনে নামতে পিছপা হয় না। এ জন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়, পুলিশী নির্যাতন, শারীরিক লাঞ্ছনা, নিগ্রহের শিকার হতে হয় বার বার। সেই নারী ইন্দু সরকারের গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বাস্তব চিত্র রুপালি পর্দায় চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কৃতি কুলহারি। এর আগে তাকে দেখা গেছে গত বছরের বহুল আলোচিত প্রশংসিত বলিউডি ছবি ‘পিঙ্ক’- এ। যেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ফালাক আলির ভূমিকায় রূপদান করেন। তার দুর্দা- অভিনয় দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তখনই। ২০১০ সালে ‘খিচড়ি : দ্য মুভি’র মাধ্যমে তার অভিনয়ে অভিষেক। এরপর ‘শয়তান’, ‘সুপার সে উপার’, ‘জাল’, ‘কিউট কামিনা’, ‘সন পঁচাত্তর’ ছবিতে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে ‘সন পঁচাত্তর’ এখনও মুক্তি পায়নি। ছবিটি ১৯৭৫ সালে ভারতে জরুরী অবস্থা জারির পর পুলিশ কর্তৃক বিভিন্নজনের টেলিফোনের আড়িপাতা এবং হয়রানির সৃষ্টির বিভিন্ন ঘটনাবলী তুলে ধরা হয়েছে। ‘ইন্দু সরকার’ ছবিতে নিজের অভিনীত চরিত্র সম্পর্কে কৃতি কুলহারি বলেন, ‘একজন সচেতন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী এই একজন বিপ্লবী কবি, জরুরী অবস্থা জারির পরবর্তী সময়ের এই তরুণী গৃহবধূ রাজপথে প্রতিবাদী মিছিলে অংশগ্রহণ করে। এ জন্য পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে, অনেক নিগ্রহ, নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাকে। তেমনি একটি চ্যালেঞ্জিং নারী চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াটাকে আমি ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হিসেবে নিয়েছিলাম। আমি সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি আমার অভিনীত চরিত্রটি যথাযথভাবে রূপায়ণের। আমার অভিনীত চরিত্রটির আরেকটি বাস্তব বিষয় আমাকে ফুটিয়ে তুলতে হয় তা হলো তোতলানো। এ জন্য আমি সাইকোলজিস্টের কাছে গেছি, যারা তোতলায়, তাদের পর্যবেক্ষণ করেছি গভীরভাবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ‘ইন্দু সরকার’ আমার অভিনয় জীবনে আরেকটি নতুন মোড় সৃষ্টি করবে। ‘ইন্দু সরকার’ ছবিতে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী এবং তার পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী চরিত্রে রূপদান করেছেন সুপ্রিয়া বিনোদ আর সঞ্জয় গান্ধীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নীল নিতিন মুকেশ। এ ছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে রূপদান করেছেন অনুপম খের, টোটা রায় চৌধুরী প্রমুখ। ‘ইন্দু সরকার’ ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন বলিউডের এক সময়ে জনপ্রিয় দুই সুরকার বাপ্পী লাহিড়ী ও আনু মালিক। প্রখ্যাত কাওয়ালি গায়ক আজিজ নাজানের গাওয়া বহুল জনপ্রিয় একটি গান চাঁদতা সুরুজ ধীরে ধীরে ঢাল জায়েগা নতুন করে তৈরি করে পরিবেশন করা হয়েছে এ ছবিতে। যা ইতোমধ্যে দারুণ সাড়া জাগিয়েছে, সবার মুখে মুখে ফিরছে গানটি। মধুর ভা-ারকার একজন আলোচিত গুণী চিত্র নির্মাতা হিসেবে সেলুলয়েডে বরাবরই দারুণ চমক দেখিয়ে আসছেন, ‘ইন্দু সরকার’ ছবিতে ৪২ বছর আগের কিছু রাজনৈতিক বাস্তবতার চিত্র দর্শকদের সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা এবং প্রজ্ঞার পরিচয় দেবেন আরেকবার সবার প্রত্যাশা।
×