ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় বাইশতম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৭ জুলাই ২০১৭

শিল্পকলায় বাইশতম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী ২০১৭’র ২২ তম আসরের উদ্বোধন হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় বুধবার বিকেলে। একাডেমির চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় দ্বিবার্ষিক এ আয়োজন দেশের চারুশিল্পীদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময়। এতে প্রদর্শিত হয় জমা পড়া শিল্পকর্ম থেকে বাছাইকৃত ৩৩২ শিল্পীর ৩৮৪ শিল্পকর্ম। এছাড়াও ১০ বিভাগে ১০ শিল্পীর ১০ শিল্পকর্মকে পুরস্কার দেয়া হয়। পাশাপাশি দেশের প্রয়াত বরেণ্য শিল্পীদের চিত্রকর্ম নিয়েও রয়েছে একটি বিশেষ প্রদর্শনী। প্রধান অতিথি থেকে একুশ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন ও পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের পুরস্কার প্রদান করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, আজ দিনব্যাপী বৃষ্টি উপেক্ষা করে এত মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে আমাদের চারুকলা অচিরেই বিশ্ব চারু অঙ্গনে গৌরব বয়ে আনবে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসানসহ সে সময়ের পথিকৃৎ শিল্পীরা শিল্পের যে আন্দোলন গড়ে তোলেন, তখন থেকেই চারুকলার একটা ধারা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের চারুকলা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। আমি মনে করি রুচীর বিকাশে চারুকলা দারুণ অবদান রাখতে পারে। কোন জাতির রুচী বিকশিত না হলে সে জাতি উন্নত হতে পারে না। আমাদের দেশে শিল্পকলা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের একটি বড় অংশের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। আমরা সৌভাগ্যবান যে চারুকলার মানকে এখনও ধরে রাখতে পেরেছি। এ প্রদর্শনীর জন্য যারা ছবি দিয়েছেন তাদেরকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আপনাদের শিল্পকর্ম উত্তরোত্তর আমাদের দেশের গৌরব বয়ে আনুক এই প্রত্যাশা করি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহিম হোসেন খান ও শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিবারই উত্তরোত্তর এই প্রদর্শনীর মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন শিল্পী ও শিল্পানুরাগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে ছবি কেনার ব্যাপারে কিছু ঘাটতি আছে। পরবর্তিতে আমরা ছবি কেনার ব্যাপারে কিছু সিদ্ধন্ত নেব। বিভিন্ন ব্যাংক ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান যাতে এসব ছবি কেনে সে ব্যাপারে তাদের উৎসাহিত করব। তিনি বলেন, আগামীতে আমরা জাতীয়ভাবে ভাস্কর্য প্রদর্শনী করতে চাই। সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহিম হোসেন খান বলেন, এই ধরনের প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী আমাদের দেশের চিত্র শিল্পীদের আরও উৎসাহিত ও প্রণোদনা যোগাবে। আমাদের শিল্পীদের শিল্পের মানও উন্নয়ন হবে। শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর বলেন, আমাদের শিল্পীদের ছবির মান যথেষ্ট ভাল, কিন্তু ছবির ক্রেতার অভাব। শিল্পকলা একাডেমিকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে ছবির ক্রেতা আরও বাড়ে। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী পর্ব। পরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান। আলোচনার পর প্রধান অতিথি শিল্পীদের পুরস্কার প্রদান করেন। প্রতিযোগিতামূলক এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ২৫ বছরের উর্ধে চারুকলার সকল মাধ্যমে চর্চারত বাংলাদেশের চারুশিল্পীদের কাছ থেকে শিল্পকর্মের রঙিন আলোকচিত্র/সিডি জমা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ৬৩০ আবেদনকারী ১৮৯০ শিল্পকর্ম জমা দেন। এসব শিল্পকর্ম থেকে বিশিষ্ট শিল্পীদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন কমিটির সদস্যবৃন্দ ৩৩২ শিল্পীর ৩৮৪টি শিল্পকর্ম নির্বাচিত করেন। এর মধ্যে পেইন্টিং ২৬৫, ভাস্কর্য শিল্পকর্ম ৬৩, স্থাপনা শিল্পকর্ম-৪৭(ভিডিও-৯টি) ও নিউমিডিয়া-৯টি। এ নির্বাচন কমিটিতে ছিলেন শিল্পী তরুণ ঘোষ, শিল্পী রণজিৎ দাস, শিল্পী নাসরীন বেগম, শিল্পী মোস্তফা জামান মিঠু ও শিল্পী রফি হক। নির্বাচিত ৩৮৪ শিল্পকর্ম থেকে নির্বাচন করে ১০টি ক্যাটাগরিতে ১০ শিল্পীর ১০ শিল্পকর্মকে পুরস্কার দেয়া হয়। এবারের এ আসরের সকল মাধ্যমের শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরস্কার ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার-২০১৭’ পেয়েছেন শিল্পী মোঃ হারুন অর রশিদ টুটুল। যার অর্থমূল্য ২ লাখ টাকা। ‘আয়নান কুর্দীর স্মরণে’ শীর্ষক শিল্পকর্মের জন্য তিনি এই পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি প্রদত্ত ১ লাখ টাকা মূল্যমানের ৪ বিভাগে(ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, নিউ মিডিয়া এবং চিত্রকলা) ৪টি সম্মানসূচক পুরস্কার দেয়া হয়। এ সম্মানসূচক পুরস্কার পেয়েছেন ‘অদম্য’ শিরোনামের ভাস্কর্যের জন্য শিল্পী শ্যামল চন্দ্র সরকার, ‘রিডীমিং স্পেস-১’ শিরোনামের ছাপচিত্রের জন্য শিল্পী আনিসুজ্জামান, ‘ক্ষুধা ও পূর্ণিমার চাঁদ’ শিরোনামের নিউ মিডিয়ার শিল্পকর্মের জন্য শিল্পী উত্তম কুমার রায় এবং ‘নৃশংসতার সুর’ শিরোনামের চিত্রকলার জন্য শিল্পী আনিসুজ্জামান সোহেল। এছাড়াও এই আয়োজনে ‘শ্বাশত অস্তিত্ব-৩০’ শিরোনামের ছাপচিত্রের জন্য এক লাখ টাকার ‘বেঙ্গল ফাউন্ডেশন পুরস্কার-২০১৭’ পেয়েছেন শিল্পী সৌরভ চৌধুরী। ‘সময় ও বাস্তবতার জটিলতা-২২’ শিরোনামের ছাপচিত্রের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকার ‘এবি ব্যাংক পুরস্কার-২০১৭’ পেয়েছেন শিল্পী রুহুল আমিন তারেক। ‘রেস্টোরেশন-২’ শিরোনামের ছাপচিত্রের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকার ‘ভাষাসৈনিক গাজীউল হক পুরস্কার-২০১৭’ পেয়েছেন শিল্পী কামরুজ্জামান। ‘ঐতিহ্য-২’ শীর্ষক চিত্রকলার জন্য পঁচিশ হাজার টাকার ‘বেগম আজিজুন্নেছা পুরস্কার-২০১৭’ পেয়েছেন শিল্পী কামাল উদ্দিন এবং ‘মাতৃগর্ভ-২’ শীর্ষক নিউ মিডিয়া শিল্পকর্মের জন্য ২০ হাজার টাকার ‘দীপা হক পুরস্কার-২০১৭’ পেয়েছেন শিল্পী শুভ ঘোষ। এসব পুরস্কার প্রদানের লক্ষ্যে বিচারকম-লীর সদস্যরা হলেন-শিল্পী সৈয়দ আবুল বারক্ আলভী, শিল্পী মনসুর উল করিম, শিল্প সমালোচক মঈনউদ্দিন খালেদ, শিল্পী জামাল আহমেদ ও শিল্পী কনক চাঁপা চাকমা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘মানুষ সময়ের ক্রীতদাস’ পারফর্মেন্স আর্ট প্রদর্শন করেন শিল্পী সুজন মাহবুব। প্রদর্শনীটি চলবে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য উন্মুক্ত প্রদর্শনীটি প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকেলে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বর্ণাঢ্য আয়োজনে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত আলোচনা, সম্মাননা প্রদান আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী। সংগঠনটির ৫০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি সঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর। অনুষ্ঠানে ‘ক্রান্তি পদক ২০১৭’ প্রদান করা হয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারকে এবং ‘মাহাবুবুল হায়দার মোহন স্মৃতি পদক ২০১৭’ প্রদান করা হয় মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনীকে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নিলুফার জাহান চিনু। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ঝর্ণা আলমগীরের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। সাংস্কৃতিক পর্বে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, বহ্নিশিখা, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, আনন্দন, ভিন্নধারা ও ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে ত্রিলোক বাচিক পাঠশালা, সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র’র শিল্পীরা।
×