ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে ময়নাতদন্তে অনিয়মে অনেক বিচার বিলম্বিত হচ্ছে ॥ সিগমা হুদা

লাশ সত্য কথা বলে-ময়নাতদন্তকারীকে বিশ্বাস রাখতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৭ জুলাই ২০১৭

লাশ সত্য কথা বলে-ময়নাতদন্তকারীকে বিশ্বাস রাখতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একটি লাশের সঠিক সুরতহালের মাধ্যমে দোষীর শাস্তি ও নির্দোষ ব্যক্তি রেহাই পেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে ময়নাতদন্তে অনিয়মের ফলে অনেক বিচার বিলম্বিত হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সিগমা হুদা। তিনি বলেন, অন্য প্রমাণ না থাকলেও সঠিক সুরতহালের মাধ্যমে অপরাধীকে সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। বুধবার দুপুর বারোটায় বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা আয়োজিত ‘বিচার কার্যে সঠিক ময়নাতদন্তের গুরুত্ব’ শীর্ষক এক আলোচনা। সভায় বিচার কার্যে সঠিক ময়নাতদন্তের গুরুত্বসহ সুরতহালের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন দেশের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ মুজাহেরুল হক বলেন, সুরতহাল রিপোর্ট ময়নাতদন্তের জন্য অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের গুরুত্ব অনেক। এক্ষেত্রে ত্রুটি কিংবা অসঙ্গতি হলে হত্যার সঙ্গে জড়িতরাই লাভবান হবে। স্বজনহারারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। আমরা অতীতের বিভিন্ন ঘটনায় ত্রুটিপূর্ণ সুরতহাল রিপোর্ট দেখেছি। বিশ্বজিত হত্যা ঘটনার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, পুলিশের তৈরি সুরতহাল রিপোর্টে চরম অসঙ্গতি দেখা গেছে। রিপোর্টটি ছিল ভুলে ভরা। এছাড়া সুরতহাল তৈরি ও পুনঃময়নাতদন্ত করতে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছিল তনুর। সঠিক সুরতহাল রিপোর্ট না পাওয়ায় আজও সেসব মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়নি।’ এ সময় দেশের চলমান সময়ের কিছু খুনের ঘটনায় সঠিক ময়নাতদন্তের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরেন সংস্থার চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সিগমা হুদা। সেই সঙ্গে সরকারের কাছে দেশের ফরেনসিক বিভাগকে আরও আধুনিক করার আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সিগমা হুদার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের সম্মানিত আইনজীবী দীপ চাইম কবির। এ সময় তিনি তার অভিজ্ঞতার আলোকে শুধু লাশের ময়নাতদন্তের মাধ্যমে কিভাবে দোষীদের শনাক্ত ও বিচার কার্যসম্পন্ন হয় তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ময়নাতদন্ত বা পোস্টমর্টেম চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি উচ্চ পেশাগত ও কারিগরি মরদেহ পরীক্ষা। অতশী কাচের সাহায্যে দেখে, লাশের প্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল, কেমিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল, সেরোলজিক্যাল প্রভৃতিসহ সব জৈবাঙ্গ পরীক্ষণের মাধ্যমে মানুষের মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটন করা এর কাজ। তাই সঠিক ময়নাতদন্তের মাধ্যমে সহজেই মৃত্যুর কারণ জানা সম্ভব। যা বিচারকার্যে সঠিক অপরাধীর হদিস দিতে পারে।’ সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আমাদের দেশে ময়নাতদন্তে নানা অনিয়মের ফলেও অনেক বিচার কার্জ বিলম্বিত হচ্ছে। ময়নাতদন্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যিনি ময়নাতদন্ত করবেন তার কাজটি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান, দক্ষতা ও কাজের প্রতি নিষ্ঠা। লাশ সত্য কথা বলে, এ বিশ্বাস রাখার জন্য দৃঢ় মানসিকতা ও একাগ্রতা থাকতে হবে সেই ময়নাতদন্তকারীকে। তবেই লাশটি সঠিক বিচার পাবে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক জেলা দায়রা জজ তারিক হায়দার, সাবেক অতিরিক্ত সচিব প্রণব চক্রবর্তী, সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা সোহেলসহ প্রমুখ।
×